বেশ কিছু স্কুলে শনিবারে বন্ধ থাকে মিড-ডে মিল। সাপ্তাহিক খাদ্য-তালিকা ঠিক করে টাঙানো হয় না। বরাদ্দ অর্থ ও খাদ্যশস্যের নথিভুক্তি ঠিকমতো হয় না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঝগড়ার জেরে একাধিক স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ। রান্নায় আগমার্কা তেল ব্যবহৃত হয় না। খাবার আগে হাত ধোওয়ার সাবান নেই, যদিও সে বাবদ টাকা বরাদ্দ থাকে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এমনই ১৬টি বিষয় ত্রুটিমুক্ত করতে স্কুলগুলোকে নির্দেশিকা পাঠাল রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রীতা রঘুস্বামীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গে আসছে। ১৯-২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করবে তারা। তাই এই নির্দেশিকা।
২০১১-র জুলাই মাসেও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের একটি দল স্কুল পরিদর্শনে এসে মিড-ডে মিল সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ে একাধিক ত্রুটি (প্রায় ১৬টি) ও অব্যবস্থা দেখতে পেয়েছিল। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি সাগির হোসেনের কথায়, “কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আগের বার যে-যে ত্রুটি দেখেছে, সেগুলি সংশোধনের জন্য শিক্ষকেরা যাতে সচেতন হন, সে জন্য সব স্কুলেই ওই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে।”
২০১১ সালে পরিদর্শনের পরে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব অমরজিৎ সিংহ চিঠি দেন রাজ্যের স্কুল শিক্ষা সচিবকে। বলা হয়, বছরে ২৩০ দিন খাবার দেওয়ার কথা বলা হলেও, বাস্তবে স্কুল খোলা থাকলেই মিড-ডে মিল রান্না করতে হবে। কিন্তু শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কার্যত তা হচ্ছে না। বহু আদিবাসী অধ্যুষিত স্কুলে গিয়ে জানা গিয়েছে, মাথাপিছু বরাদ্দ ১০০ গ্রাম চালের ভাতে পেট ভরছে না আদিবাসী ও তফসিলি পড়ুয়াদের। সে ব্যাপারে দ্রুত সমীক্ষা করে রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয় রাজ্য শিক্ষা দফতরকে। রিপোর্ট পাঠানো তো দূর, এখনও সমীক্ষাই হয়নি বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর।
স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা পেতেই মুর্শিদাবাদের প্রায় সব স্কুলে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর তৎপরতা। তবে কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শনে মিড-ডে মিল ব্যবস্থার কতটা কী উন্নতি হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে শিক্ষকদের একটা বড় অংশের। জঙ্গিপুরের একটি স্কুলের শিক্ষক ত্রিলোচন দাস বলেন, “সব্জির যা দাম, তাতে মিড-ডে মিল চালাতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ছেলেরা এক-আধ দিন মাছ-মাংস খেতে চায়। কিন্তু শিক্ষা দফতরের কর্তারা মাছ-মাংস খাওয়ানো নিষিদ্ধ করেছেন। খাদ্য তালিকায় এক দিন আধখানা ডিম রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে।’’ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের তফসিলি-প্রধান এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাণ্ডে বলেন, “১০০ গ্রাম বরাদ্দ চালে পড়ুয়াদের অনেকেরই পেট ভরে না। এ সব সমস্যার সমাধান না করে শুধু পরিদর্শনে কী হবে?”
পড়ুয়াপিছু মিড-ডে মিলে দৈনিক বরাদ্দ ৩ টাকা ৫১ পয়সা। এই টাকায় ছাত্রছাত্রীদের খাবার দেওয়া যে মুশকিল, সে কথা মানছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। বৃহস্পতিবার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের কাছে মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানান শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, “যে ভাবে জিনিসের দাম বাড়ছে, প্রকল্প চালানো মুশকিল। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সে কথা জানিয়েছি। ফের যখন তাঁরা পরিদর্শনে আসবেন, তখনও এ কথা জানানো হবে।”
কিন্তু দু’বছরে প্রকল্পের যে ত্রুটিগুলি সংশোধন করা গেল না, তা সাত দিনে কী করে হবে? সদুত্তর মেলেনি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। |