লোকাল ট্রেনের দরজায় দরজায় বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুলছেন যাত্রীরা। ডাউন কাটোয়া-আজিমগঞ্জ লোকাল ট্রেনে এ ছবি রোজকার।
কিন্তু এ তো ফেভিকলের বিজ্ঞাপন নয় ফলে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকছে। বৃহস্পতিবার সকালেও কাটোয়া স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন দুই যাত্রী। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁদের। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ওই লাইনে প্রয়োজনের তুলনায় ট্রেনের সমখ্যা কম, ফলে ভিড় লেগেই থাকে। তাঁদের দাবি, বহু দিন ধরেই সকালের ট্রেনগুলিকে ১২ কামরা করার ও কাটোয়ামুখী ২টি ট্রেন দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই লাইনের সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
নিত্যযাত্রী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া ও আজিমগঞ্জের মধ্যে প্রতিদিন ১০ জোড়া লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়াও কামরূপ, গরিব রথ, কামাক্ষ্যা পুরীর মত বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেনও যাতায়াত করে। রেল সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া থেকে আজিমগঞ্জের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। ডিজেল ইঞ্জিনে ওই পথ যেতে লোকাল বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সময় লাগে সওয়া দু’ঘন্টা। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিনই ওই লাইনের ট্রেন আপ অথবা ডাউন সব সময়ই দেরি করে। সকালের দিকে ভিড় বেশি হয়।
মুর্শিদাবাদের টিঁয়া গ্রামের বাসিন্দা কালোসোনা বৈরাগ্য, সালারের বাসিন্দা নূর হকরা প্রতিদিনই এ পথে যাওয়াআসা করেন। তাঁদের অভিযোগ, “এই লাইনের কোনও ট্রেনই সঠিক সময়ে চলাচল করে না। ফলে প্রতিদিন সকালে একটি ট্রেনকে কার্যত দুটি ট্রেনের যাত্রী বহন করতে হয়।” |
নিত্যযাত্রীরা জানান, বাজারসৌ স্টেশন থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে। সালার স্টেশন থেকে কাটোয়া পর্যন্ত তো দাঁড়ানোর জায়গাও মেলে না। ফলে দরজার হাতল ধরে, পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হন যাত্রীরা।
কাটোয়া-আজিমগঞ্জ লাইনের নিত্যযাত্রী সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল পান বলেন, “এই লাইনের ট্রেন থেকে প্রায় দিনই কোনও না কোনও যাত্রী পড়ে গিয়ে জখম হচ্ছেন। আমাদের গ্রামের এক মহিলা পড়ে গিয়ে দু’টি পা বাদ গিয়েছে। ঈদের সময়েও এক যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান।” বৃহস্পতিবারও কাটোয়া স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে জখম হন দু’জন। নিত্যযাত্রী সমিতি সূত্রে জানা যায়, মুর্শিদাবাদের সালার থেকে টিঁয়া পর্যন্ত রেল লাইনে কাজ চলায় বৃহস্পতিবার ভোরে ওই লাইন বন্ধ করা ছিল। সকালের দিকে দু’টি ট্রেনও বাতিল করা হয়েছিল। তার বদলে খাগড়া স্টেশন থেকে কাটিহার এক্সপ্রেসকে কাটোয়া পর্যন্ত সব স্টেশনেই দাঁড় করিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। আহত যাত্রীরা জানান, তাঁরা শিবলুন থেকে কাটোয়া যাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রেনে ভিড় থাকায় পাদানিতে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। তখনই কাটোয়া ঢোকার মুখে প্ল্যাটফর্মে নামার জন্য যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেলে তাঁরা পড়ে যান। চঞ্চলবাবুর অভিযোগ, “যাত্রীরা ট্রেন থেকে পড়ে গেলেও তাঁদের উদ্ধার করার জন্য রেল পুলিশ বা রেলের সুরক্ষা বাহিনী আসেনি।” যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ রেন কর্তৃপক্ষ। নিত্যযাত্রীদের সংগঠন বিবি লুপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দাবিগুলো রেল কর্তৃপক্ষ মেনে নিলে যাত্রীদের সমস্যা কমবে। না বলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়ী হবে রেলই।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালের দিকে ওই লাইনে অস্বাভিক ভিড় থাকলেও বেলার দিকের ট্রেনগুলি কার্যত ফাঁকাই থাকে। তাই ট্রেনের সংখ্যা না বাড়িয়েও কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন রেল কর্তারা। |