|
|
|
|
সুতাহাটা বাজার |
রাস্তা দখল করেই কেনাবেচা, যানজটে নাজেহাল বাসিন্দারা |
অমিত কর মহাপাত্র • হলদিয়া |
শিল্পশহর হলদিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কের জায়গা জবরদখল করে বসছে বাজার। নিত্য যানজটে নাজেহাল মানুষ। ‘সুতাহাটা থানার হাট’ নামে পরিচিত ওই বাজারের পরিকাঠামোও বেহাল। সংস্কারে উদাীন প্রশাসন।
হলদিয়ার সুতাহাটায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বসছে ‘সুতাহাটা থানার হাট’। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমিদারি আমল থেকে হলদিয়া শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সুতাহাটা সদরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের দু’ধারে এই হাটটি বসে। গুরুত্বপূর্ণ ওই রাজ্য সড়কে যানবাহনের চাপও বেশি। ফলে ওই রাস্তায় যানজটের ফাঁসে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা নিত্য দিনের ব্যপার। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী সকলেই। সুতাহাটা পুরাতন বাজার কমিটি ও সুতাহাটা বাজার ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাজারে দেড় হাজারেরও বেশি স্থায়ী দোকান রয়েছে। পূর্ত দফতর ও অন্যান্য সরকারি জমি দখল করে অস্থায়ী কাঠামো করে আরও প্রায় পাঁচশোটির মতো দোকান চলে। ওই সড়কে বিডিও অফিস মোড় থেকে শ্রী সিনেমা হল পর্যন্ত প্রায় ছ’শো মিটার অংশে রাস্তার দু’দিকে পসরা নিয়ে বসেন প্রায় পাঁচশো ব্যবসায়ী। এছাড়াও রাস্তার দু’দিকে ছোট যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় পথচলাই দায় হয়ে পড়ে। অথচ রাস্তার ওই অংশের মধ্যেই সুতাহাটা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিডিও অফিস-সহ একাধিক প্রশাসনিক দফতরের কার্যালয় রয়েছে। যানজটের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী নিয়ে যেতেও সমসা্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক শুভেন্দু দাস বলেন, “সস্তার বাজার বলেই ওই বাজারে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভিড় হয়। রবিবার ও বুধবার বিশেষ হাটের দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।” |
|
রাস্তা দখল করে বসেছে বাজার। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই বাজারের এক স্থায়ী ব্যবসায়ী তাপস মাইতি বলেন, “প্রাচীন এই বাজারে আজ পর্যন্ত পরিকল্পনা করে কোনও কিছু করা হয়নি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়।” সুতাহাটা বাজার কমিটির সদস্য তথা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন মাইতি জানান, “গত তিন দশকে বাজারে জবরদখলকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাজার ও হাটের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কিছুই করা হয়নি।” তিনি জানান, পরিকল্পিত বাজার তৈরির জন্য ১৯৯৮ সালে আমরা ১২৪ জন ব্যবসায়ী মিলে এক একর ৭৬ ডেসিমেল জমি কিনি। কিন্তু বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ ও পুরসভা ওই জমিতে বাজার তৈরির অনুমোদন দেয়নি। তাঁর দাবি, পুরসভায় ক্ষমতা পরিবর্তনের পর পুরপ্রধান এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সিটু অনুমোদিত সুতাহাটা হকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রামেশ্বর বেরা বলেন, “বাম আমলে আমরা পুনর্বাসন চেয়েও পাইনি। এক হাজারেরও বেশি পরিবার অস্থায়ী দোকান করে বা রাস্তায় পসরা সাজিয়ে দোকান চালায়। আমরা চাই না সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা হোক। তবে বিকল্প ব্যবস্থাও করা দরকার। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে অস্থায়ী বিক্রেতাদের জন্য স্টলের ব্যবস্থা করা হোক। বড়বাড়ির সুপ্রিয়া ঘোষ, চকলালপুরের পূর্ণিমা বেরা বা জামালচকের লক্ষ্মী ঘোষ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে সুতাহাটা বাজারে ব্যবসা করছেন। সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, “আগে পরিবারের অন্যরা বাজারে বসতেন। এখন আমরা বসি। আমাদের সামনে অন্য কোনও বিকল্প নেই বলেই পথে পসরা নিয়ে বসি।” সুতাহাটার পুলিন মাইতিও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “পঁচিশ-তিরিশ বছর ধরে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ব্যবসা করছি। অথচ এতদিনেও হাটের উন্নতি হল না।” যানজট সামলাতে নাজেহাল হয় পুলিশও। হলদিয়া পুরসভার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “বাম পুরসভা এতদিন সমস্যার সমাধান করেনি। আমার এ বার পদক্ষেপ করছি। সুতাহাটা বাজার ও হাটের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “জমির সমস্যা থাকায় পুরসভার পক্ষে এককভাবে সমস্যা মেটাতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে ওই বাজারের ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন। রাস্তার জবরদখলকারীদের সরিয়ে দেওয়ার কাজও দ্রুত করা হবে।” |
|
|
|
|
|