|
|
|
|
ঘনঘন মুখ্যমন্ত্রীর সফর, তাই সার্কিট হাউস ঝাড়গ্রামে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বারবারই জঙ্গলমহলে ছুটে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। রাত কাটিয়েছেন রাজবাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনঘন ঝাড়গ্রাম সফরের কথা মাথায় রেখেই এ বার অরণ্যশহরে সার্কিট হাউস তৈরির তোড়জোড় শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর শহর হিসেবে মেদিনীপুরে সার্কিট হাউস রয়েছে। কিন্তু জেলার জঙ্গলমহলে সফরে এলে বেশিরভাগ সময় ঝাড়গ্রামেই থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সার্কিট হাউস না থাকায় বৈঠকের আয়োজন করতে প্রশাসনের সমস্যা হয়। গত সেপ্টেম্বরেই যেমন ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরে সামিয়ানা খাটিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করতে হয়েছিল। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও সচিবরা। গোড়ায় ঠিক ছিল, ওই বৈঠক হবে মেদিনীপুরে। পরে স্থানবদল হয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সব আয়োজন করতে হয়। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ঝাড়গ্রামেও সার্কিট হাউস তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ নিয়ে ইতিমধ্যে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির কাছে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণ প্রসাদ। সঙ্গে পাঠানো হয়েছে প্রস্তাবিত এলাকার মানচিত্র। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে যে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি পূর্ত দফতরের। ওই সূত্র জানিয়েছে, আপাতত একটি বড় মিটিং হল তৈরি হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ লক্ষ ৬০ হাজার ১২৩ টাকা। যত দ্রুত সম্ভব এই হল তৈরির চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলে, “ঝাড়গ্রামে সার্কিট হাউস তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।” |
|
গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী সফরের সময় এই ভাবেই সামিয়ানা টাঙিয়ে
বৈঠক হয়েছিল ঝাড়গ্রাম এসপি অফিস চত্বরে।—ফাইল চিত্র। |
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম। রাজ্যে পালাবদলের পর বহুবার জেলা সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবারই প্রশাসনিক সভা করেছেন। সদর শহর মেদিনীপুরে যতবার সভা হয়েছে, তার সবকটিই হয়েছে সার্কিট হাউসে। আর ঝাড়গ্রামে প্রতিটি প্রশাসনিক সভা হয়েছে পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরে। এখানে মহকুমাশাসকের অফিস সংলগ্ন মিটিং হল রয়েছে। তবে, তা খুব বড় নয়। পালাবদলের আগে মমতা যখন বিরোধী নেত্রী, তখন অরণ্য শহরে এলে তিনি থাকতেন পিএইচই বাংলোয়। এখন থাকেন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে। শহরে একটি সরকারি বাংলোও রয়েছে। নাম ‘মঞ্জরী’। তবে সার্কিট হাউস হলে সরকারি আমলা-মন্ত্রীদের বিশেষ সুবিধা হবে বলেই মনে করছে জেলা প্রশাসন।
পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। জেলাস্তরে সর্বদল বৈঠকও হয়। তবে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজ্য সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় দু’টি মহকুমা থাকবে ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর। এখন যে ৮ টি ব্লক ও ১টি পুরসভা ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে রয়েছে, সেগুলিই নতুন জেলার মধ্যে থাকবে। তবে বিনপুর-১ ও বিনপুর-২ ব্লক ভেঙে নতুন লালগড় ব্লক গঠন হবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে থাকবে মোট ৫টি ব্লক ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড় ও জামবনি। সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকা। অন্যদিকে, গোপীবল্লভপুর মহকুমায় থাকবে ৪টি ব্লক গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম। সব মিলিয়ে নতুন জেলার জনসংখ্যা হবে ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭১০। তবে, সেই সময়ই প্রশ্ন ওঠে, ঝাড়গ্রামে নতুন জেলার পরিকাঠামো কোথায়? কবেই বা পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই সময় একটি খসড়া পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য নতুন প্রশাসনিক ভবনের পরিকল্পনাও হয়ে রয়েছে। এ জন্য ঝাড়গ্রাম শহরে ৮ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে দু’টি ভবন তৈরি হওয়ার কথা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। একই চত্বরে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয় তৈরি হওয়ার কথা। তার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এখন অবশ্য এই পরিকল্পনার ফাইল চাপা পড়ে গিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনঘন সফর ঝাড়গ্রামে সার্কিট হাউস বানানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। এ জন্য জঙ্গলখাস মৌজায় প্রাথমিক ভাবে একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “ঝাড়গ্রামের মতো শহরে সার্কিট হাউস তৈরি হলে সমস্ত দিক থেকে সুবিধে। মন্ত্রী-সচিবরা এলে এখানে থাকতে পারেন। বৈঠক করতে পারেন। আপাতত একটি বড় মিটিং হল তৈরি হবে। যেখানে প্রশাসনিক সভা হতে পারে।” কতদিনে কাজ শেষ হয়, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|