|
|
|
|
১৩ টাকায় আলু মিলবে, আশ্বাস ব্যবসায়ীদের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কৃত্রিম সঙ্কট কাটিয়ে বাজারে পর্যাপ্ত আলু পৌঁছে দিতে হবে। ক্রেতাদের আলু দিতে হবে সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরেই। আলু ব্যবসায়ী সংগঠন ও হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বৃহস্পতিবার এ কথা সাফ জানিয়ে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশসাক গুলাম আলি আনসারি। বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহও ছিলেন। বৈঠক শেষে জেলাশাসক বলেন, “বাজারে পর্যাপ্ত আলু পৌঁছে দেওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।” আর সভাধিপতির কথায়, “ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকেরা জানিয়েছেন বাজারে সরকারি মূল্যে পর্যাপ্ত আলু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এরপরেও কাজ না হলে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।”
ব্যবসায়ী সংগঠনের বক্তব্যেও জট কাটার ইঙ্গিত। বৈঠকের পর মেদিনীপুর আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “আমরা সব ব্যবসায়ীকে বাজারে আলু পৌঁছে দিতে অনুরোধ করহ। আশা করি, আর কোনও সমস্যা থাকবে না।” হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুনীল রানারও আশ্বাস, “যাতে জেলার প্রতিটি এলাকার ব্যবসায়ীরা আলু পান, তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে রাজি।” |
|
সরকারি দরে আলু বেচার পুলিশি প্রচার এগরা শহরে। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
পূর্ব মেদিনীপুরেও নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। যাতে সবাই সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেন, সে জন্য এ দিন এগরা মহকুমা এলাকায় পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার চালানো হয়। তাতে অবশ্য হিতে বিপরীত হয়েছে। সকালে বেশি দামে বাজারে আলু থাকলেও বেলা পড়তেই আলু উধাও হয়ে যায়। স্থানীয় ক্রেতা বাবলু দাস বলেন, “সকালে বেশি দামে হলেও আলু পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বিকেলে বাজারে আলুই নেই।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরো আলু বিক্রেতার কথায়, “১৭ টাকায় কিনে ১৩ টাকায় আলু বিক্রি করলে পথে বসতে হবে। তাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।” স্থানীয় আড়তদার তপন ত্রিপাঠি বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আলু বোঝাই গাড়ি আটকে রয়েছে। তার উপর জোগানের অভাব। পরিবহণ খরচও রয়েছে। ফলে, এতদিন ১৭ টাকা কেজি দরেই আলু বিক্রি হচ্ছিল।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু বাজারেও এ দিন আলুর আকাল ছিল। অনেক জায়গায় আবার আলু বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। ঘাটালের কুঠিবাজার, পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড বাজার, জলসরা, দাসপুর, টালিভাটা, জাড়া, রামজীবনপুর-সহ বেশিরভাগ বাজারে ১৮-২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রকোনার ঠাকুরবাড়ি বাজারে আবার আলুর দেখা নেই। কয়েক দিন আগে ওই বাজার থেকেই এক খুচরো বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর আর বাজারে আলুর দেখা নেই। সামান্য যে কয়েকজন আলু বেচছেন, তা সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরেই। ঘাটালের সীতারাম ঘোষাল, হলধর মণ্ডল, শেফালি মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “আজও ২০ টাকা করেই আলু কিনেছি। সরকার এতসব বলছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব পড়ছে কই?” এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক ব্রজেন সরকার বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জেলা জুড়েই অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে সব বাজারে এখনও যাওয়া হয়নি। ১৩ টাকার বেশি দামে আলু বিক্রি কোনও মতেই মানা হবে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।” জেলাশাসকেরও বক্তব্য, “জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। ব্যবসায়ীদেরও বলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি হওয়ার কথা নয়।” |
|
মেদিনীপুরে বাজারের পথে আলু। ছবি: কিংশুক আইচ। |
আলু-সঙ্কট কাটাতে বুধবার মেদিনীপুরে জরুরি বৈঠক করেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তী বৈঠক হবে আলু ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের সঙ্গে। সেই মতো এ দিন মেদিনীপুরে জেলাশাসকের বাংলোয় বৈঠক বসে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈঠকে ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এখনই বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না। কোন এলাকার ব্যবসায়ী কোন এলাকার জন্য কত পরিমাণ আলু নিয়ে যাচ্ছেন সেই নথি রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিমঘরগুলিতে নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিডিওদেরও বিষয়টি লক্ষ করার কথা বলা হয়েছে। ব্লকের কোনও এলাকায় আলুর সঙ্কটের খবর পেলেই বিডিওরা যাতে তা কৃষি বিপণন দফতরকে জানান, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি দামে আপাতত বাজারে আলু বিক্রি করতে রাজি হলেও ব্যবসায়ী সংগঠন কিন্তু ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর দাবি থেকে সরে আসছে না। হিসেবমতো জেলার বিভিন্ন হিমঘরে এখনও প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু রয়েছে (সংরক্ষণ করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন। বাকিটা বেরিয়ে গিয়েছে)। জেলায় মাসে আলুর চাহিদা গড়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন। আলু ব্যবসায়ী সমিতির মতে, দু’আড়াই মাস পরেই নতুন আলু উঠবে। তখন আর পুরনো আলুর কদর থাকবে না। ফলে, বিপুল পরিমাণ আলু ফেলে দিতে হবে। কারণ, যে পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তাতে আগামী প্রায় ১৫ মাস জেলার চাহিদা মেটানো যাবে। তাই বরেনবাবুদের দাবি, “বাড়তি আলু বাইরের রাজ্যে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হোক।” প্রশাসন অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে আলুর সঙ্কট না মেটা পর্যন্ত, সবাই সরকারি দামে আলু না পাওয়া পর্যন্ত ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর প্রশ্নই নেই।
|
পুরনো খবর: ২০ টাকায় জ্যোতি আলু বাজারে |
|
|
|
|
|