বড় বড় সংস্থার বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়েছে শহর।
রাস্তার খানাখন্দে পিচের প্রলেপ।
ঝলমল করছে আলোর গেট। কোনও গলি থেকে ভেসে আসছে মান্না দে’র গান, কোথাও হেমন্তর।
গঙ্গাপারের চন্দননগর এখন পুরোপুরি উৎসবময়। আজ, শুক্রবার মহাষষ্ঠী। তার আগে মহাপঞ্চমীর সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় নামলেন মানুষ। এ দিনই অনেক পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেল। উৎসবের দিনগুলিতে শহরের ভিড়কে সামাল দিতে জেলা পুলিশে এখন সাজো সাজো রব। পুজোর দিনগুলি নির্বিঘ্নে পার করতে এ বারও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জলে-স্থলে চলবে কড়া নজরদারি। এ ছাড়া বসছে পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র।
শুধু হুগলি নয়, চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া-সহ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষের ঢল নামে। ‘চন্দননগরের পুজো’ বলা হলেও এই পুজো আদতে চুঁচুড়ার একাংশ থেকে শুরু করে ভদ্রেশ্বর জুড়ে বিস্তৃত। সেই কারণে পুরো এলাকা জুড়েই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের তরফে। পুজোগুলিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছে ‘কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি’। তার আওতায় এ বার শুধুমাত্র চন্দননগরে ১১২টি পুজো হচ্ছে। ভদ্রেশ্বর এলাকায় হচ্ছে আরও ২৯টি পুজো। এর বাইরেও কিছু বারোয়ারি এবং বাড়ির পুজো রয়েছে। |
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বিপুল ভিড় সামাল দিতে পুজোর দিনগুলিতে প্রায় সাড়ে ছ’শো পুলিশকর্মী থাকছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। এ ছাড়াও থাকছে দু’শো সিভিক পুলিশ এবং দু’শো জন হোমগার্ড। সাত জন ডিএসপি, ১০ জন ইন্সপেক্টর এবং ১৫০ জন অফিসার তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন। থাকছেন মহিলা-পুলিশও। দর্শনার্থীদের সাহায্যে মোট ৩৫টি পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র থাকছে। পুজো দেখতে এসে কোনও দর্শনার্থী কোনও সমস্যার মুখোমুখি হলে ওই সব সহায়তা কেন্দ্রের পুলিশকর্মীরা তাঁদের সাহায্য করবেন। দেখা গিয়েছে, পুজোর ভিড়ে অনেক সময়ই শিশুরা বড়দের হাত থেকে ছিটকে চলে যায়। অনেক সময় আবার তারা সঠিক ঠিকানাও বলতে পারে না। এই সব সমস্যা এড়াতে শিশুদের জন্য পুলিশ পরিচয়পত্র করছে। পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র থেকে অভিভাবকদের তা বিলি করা হবে। মণ্ডপে ঘোরা শুরুর আগেই শিশুদের গলায় সেই পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে দিতে হবে। তাতে শিশুর নাম-ঠিকানা এবং যোগাযোগের ফোন নাম্বার লিপিবদ্ধ করতে হবে। পুজোর গাইড ম্যাপও করা হয়েছে জেলা পুলিশের তরফে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “চন্দননগরে পুজোর দিনগুলিকে নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ প্রস্তুত। সাধারণ মানুষ আনন্দে মাতুন। পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তায় সর্তক আছে।”
শুধু স্থলপথে নয়, নৌকা করে গঙ্গা পেরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বহু মানুষ চন্দননগরে পুজো দেখতে আসেন। অনেক সময়ই বেশি রোজগারের আশায় অথবা ভিড়ের চাপে নৌকায় বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, জলপথে কোনও রকম বিপদের সম্ভাবনা এড়াতে চন্দননগরের সাতটি ঘাটেই বিশেষ পুলিশি নজরদারি থাকছে। থাকছে রিভার-ট্রাফিক পুলিশ। তা ছাড়াও, জেলা পুলিশের লঞ্চ টহল দেবে গঙ্গায়। গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। সপ্তমী থেকে দশমী এই চার দিন বিকেল ৪টে থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত জি টি রোড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করা হচ্ছে। গাড়িতে করে যাঁরা পুজো দেখতে আসবেন, তাঁদের জন্য ছ’টি ‘পার্কিং জোন’ (তালডাঙ্গা মোড়, অ্যাঙ্গাস মোড়, কেএমডিএ পার্ক, শ্বেতপুর মোড়ের কাছে এবং চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় দু’টি) করা হচ্ছে পুলিশের তরফে। |