সম্পাদকীয় ২...
নীতি ভুল হইলেও
মাম ও মুয়েজ্জিনদের সরকারি ভাতা দানের যে-প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রূপায়ণ করিতেছিল, কলিকাতা হাইকোর্টের রায়ে তাহাতে কিছু সংশোধন আনা হইতেছে। হাইকোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়াছিল যে, ধর্মীয় কারণে কোনও ব্যক্তিকে সরকারি ভাতা দেওয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংবিধান অনুমোদন করিতে পারে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম-মুয়েজ্জিনদের ভাতা প্রাপ্তির শর্ত হিসাবে কিছু সামাজিক কর্তব্য পালনের প্রস্তাব দিয়াছে রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক। পোলিয়ো দূরীকরণ, হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বৃদ্ধি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তাঁহাদের সক্রিয় ও সদর্থক ভূমিকার উপরেই নাকি অতঃপর নির্ভর করিবে ভাতাপ্রাপ্তি। এক ভাতায় অনেকগুলি ব্যাধি দূর করিবার এমন পরিকল্পনাকে সৃষ্টিশীল বলিলে অত্যুক্তি হইবে না।
সমাজের অনগ্রসরতার পিছনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার গুরুতর ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। এই সমস্যা সমস্ত গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যেই অল্পবিস্তর আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে সমস্যার প্রকোপ সমধিক বলিয়া মনে করিবার কারণ আছে। যেমন শিশুদের পোলিয়ো টিকাকরণ সম্পর্কে যুক্তিহীন অপপ্রচার এবং তজ্জনিত বিভ্রান্তি অতীতে এই রাজ্যের কিছু এলাকায় একটি বাস্তব সমস্যা হিসাবে প্রকট হইয়াছে। একই ভাবে হাসপাতাল-নার্সিং হোম কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মহিলাদের প্রসব করাইবার বদলে বাড়িতেই ধাত্রীদের অপটু ও জীবাণুজর্জরিত হাতে সন্তানজন্মের ভার তুলিয়া দেওয়ায় বহু প্রসূতির অকালমৃত্যু ঘটে, অনেক নবজাতকেরও। এ ক্ষেত্রেও হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে দুর্জ্ঞেয়বাদী কুসংস্কারের ভূমিকা দুর্ভাগ্যজনক। কুসংস্কার বা অতীতচারিতা অনেক সময়েই আধুনিক শিক্ষার প্রসারেও বাধা দেয়।
তাহার পরেও অবশ্যই মূল আপত্তিটি থাকিয়া যায়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের জন্য সরকারি কোষাগার হইতে ভাতা বা অনুদান বরাদ্দ করিবার নীতিটি, নীতি হিসাবে, অবশ্যই অসংগত। কিন্তু সেই আপত্তি ইতিপূর্বে আলোচিত হইয়াছে, তাহার পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নাই। এই ভাতা উপলক্ষ করিয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসরতা দূর করিতে যত্নবান হইয়াছেন, তাহা তাৎপর্যপূর্ণ। ইহাও অনস্বীকার্য যে, কোনও সামাজিক সংস্কারের তাগিদ এবং উদ্যোগ সমাজের অন্দরমহল হইতে উদ্গত হইলেই সেই সংস্কার কার্যকর হইবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। বস্তুত, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভিতর হইতে সংস্কারের বিবিধ উদ্যোগ দেখা যাইতেছে। এই রাজ্যও তাহার ব্যতিক্রম নহে। অনেক সময়েই সেই সংস্কার হয়তো ধর্মবিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করিবার পথে চলে না, বরং ধর্মীয় আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের মধ্য দিয়াই অগ্রসর হইতে চাহে। এই প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা হয়তো এক ধরনের ‘আধুনিক’ মর্যাদাও অনুভব করেন: সমাজ উন্নত হইতেছে, সমর্থ হইতেছে, তাঁহারা সেই উন্নতির সহায়ক তথা পরিচালক— এই ভাবনা হয়তো তাঁহাদের এক নূতন আত্মসম্মানবোধ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘শর্ত’ পূরণ করিতে গিয়া ইমাম-মুয়েজ্জিনরা তেমন অভিজ্ঞতার শরিক হইবেন, এমন সম্ভাবনা নিশ্চয়ই রহিয়াছে। শুভ সম্ভাবনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.