সম্পাদকীয় ১...
রমণীর গুণে
র্বময় প্রভুত্বপ্রিয়তা এবং আপনার মতকেই পাঁচ কাহন করা স্ত্রীস্বভাবের অবশ্যম্ভাবী লক্ষণ।— ‘বিস্ফোরক’ লিঙ্গবৈষম্যমূলক প্রগতিবিদারক বাক্যটি অগ্নিভক্ষক রক্ষণশীল কোনও নেতার মন্তব্য নহে, এই উচ্চারণ বাঙালি সংস্কৃতি-কুলতিলক খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ১৮৯২ সালে ‘ক্ষিপ্ত রমণীসম্প্রদায়’ নামক একটি বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধে উক্ত মর্মে যুক্তিধারার অবতারণা পাওয়া যায়। রবীন্দ্র-তার্কিক গোষ্ঠী নিশ্চয়ই হাঁ-হাঁ করিয়া উঠিবেন: ইহা নেহাতই তারুণ্যের উদ্ভ্রান্ততা, সত্যই তিনি নারী-ক্ষমতার বিরোধী ছিলেন না ইত্যাদি। তবে, যে যাহাই বলুক, তরুণ নক্ষত্র আদৌ ভুল করেন নাই, তারুণ্যের স্পষ্টতায় মহাসত্যটিকেই মোহমুক্ত চোখে দেখিয়া ফেলিয়াছিলেন। বাস্তবিক, অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে, ক্ষমতাসীনা-মাত্রেই যে অতিরিক্ত ‘প্রভুত্বপ্রিয়’, এবং পাঁচ কাহন করিবার ছলে সতত কলহপরায়ণ, সংশয় রাখা মুশকিল। ব্যতিক্রম থাকিতেই পারে, কিন্তু তাহা সাধারণ ‘ক্রম’কেই সমর্থন করে মাত্র। ইহার অর্থ এই নহে যে ক্ষমতাবান পুরুষরা কলহ করেন না, কর্তৃত্ব ফলান না। ইহার অর্থ, সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে নেতা ও নেত্রীদের মধ্যে দ্বিতীয় গোত্রেই ঝগড়ুটে এবং দাপুটের প্রাদুর্ভাব অধিক। ইতিহাস বারংবার তাহা প্রমাণ করিয়াছে দেশে বিদেশে, পাশ্চাত্যে প্রাচ্যে। ক্ষমতাশালিনী নারী মাত্রেই কর্তৃত্বস্বরূপিণী। তাঁহারা চরম সুরে কথা কহেন, পরম আবেগে কলহ করেন, শান্তিময়ীর বদলে অশান্তিরূপিণী হিসাবেই অধিকতর খ্যাতি অর্জন করেন। কার্যত সর্বদেশে, সর্বকালে। ষোড়শ শতকীয় রানি মেরি দ্য কুইন অব স্কটস্ হইতে ঊনবিংশ শতকীয় ফ্রান্সের রানি ইউজেনি হইতে একবিংশ শতকের গণতান্ত্রিক নেত্রী মায়াবতী কিংবা জয়ললিতা, উদাহরণ দিতে বসিলে স্থানে কুলাইবে না।
বাংলাদেশের দুই নেত্রীও এই সাধারণ সত্যটিকেই আবার প্রমাণ করিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া-র ‘ফোনালাপ’ ইতিমধ্যে জগদ্বিখ্যাত হইয়াছে। পরস্পরকে আক্রমণ করিবার জন্য তুচ্ছতার কোন অতলে তাঁহারা নামিতে পারেন, ছত্রে ছত্রে প্রমাণ মিলিয়াছে। দেশের সংকট বা তাহার সমাধানের প্রসঙ্গ তাঁহাদের পঙ্কিলতার আবর্তে ডুবিয়াছে। কোনও আত্মসম্মানযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী নেতা যে এই ভাষা ও ভাব লইয়া রাজনৈতিক আদানপ্রদান করিতে পারেন, তাহা চমকপ্রদ। তাঁহারা প্রায় আদাজল খাইয়া প্রমাণ করিয়াছেন যে, অসংস্কৃতির তীক্ষ্ণতায় কেহ কাহারও অপেক্ষা কম নহেন। শঠে-শাঠ্যং আলাপের বিবরণ পড়িয়াই সংশয় হয়, ব্যক্তিবিশেষের চারিত্রলক্ষণ নহে, ইহা তাহার অপেক্ষা বৃহত্তর ও গভীরতর কোনও সংকট, ‘নেত্রী’-প্রজাতির সাধারণ মানস-বিকার।
কোথা হইতে আসে এই বিকার? সম্ভবত সমাজ হইতেই। যে ইতিহাস শীর্ষনারীর ক্ষমতাবিকার তুলিয়া ধরে, তাহাই আবার দেখাইয়া দেয় নেপথ্য-সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতা। কিংবা নারীর তুলনামূলক পশ্চাৎপরতা। হয়তো নিষ্পেষিত সমাজের সামূহিক মানস ব্যক্তি-নেত্রীর মধ্য দিয়া প্রতিশোধ লইতে নামে। কিংবা কূপমণ্ডূকের কর্কশতা সর্বসমক্ষে টানিয়া আনিয়া বদ্ধ কূপ ও উন্মুক্ত সমাজের মধ্যে সমতা রচনা করে। হয়তো বা নারীদের প্রতিহত করিবার সামাজিক চেষ্টার প্রত্যাঘাতে ব্যক্তি নারী ‘প্রবল’ ভাবমূর্তি অর্জন করিতে চাহেন, কার্যত যাহা অসৌজন্যের প্রতিরূপ হইয়া দাঁড়ায়। উপরোক্ত উদ্ধৃতিলেখক বলিয়াছিলেন, ‘মাতৃত্বের মধ্যে একটি অপ্রতিহত কর্তৃত্ব আছে’, তাহা চালনার অভ্যাসেই রমণীর মধ্যে অন্ধতা ও আত্মপ্রভুত্বের ভাব বদ্ধমূল হয়। মাতৃকর্তৃত্বও তো বৃহৎ সমাজের প্রতি ক্ষুদ্র মাতৃত্বের প্রতিশোধ। হাসিনা-খালেদা অসংযত আলাপ চালাইয়া যাইতে পারেন, অন্ধ আত্মপ্রভুত্ব বজায় রাখিতে পারেন। এবং নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন, তাঁহারা একা নহেন, একা হইবেন না। এক নেত্রী গেলে আর এক আসিবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.