বন্ধু বনাম ঘাতকেরা
অ্যালান ডোনাল্ড
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন যে রকম পিচ তৈরি হয়, আমাদের সময় এর থেকে অনেক বেশি বাউন্স ও পেস থাকত উইকেটে। ওই রকম পরিস্থিতিতে হোয়াইট লাইটনিংকে সামলানো সহজ কাজ ছিল না। সচিনের যে কখনও অসুবিধে হয়নি বলব না। কেপটাউনে একটা ম্যাচে আমি তিন আর সচিন চারে ব্যাট করেছিলাম। আমাকে ডোনাল্ডের একটা ওভারের আগে বলল, “এই ওভারটা তুমি খেলো। আমার অসুবিধে হচ্ছে ওকে সামলাতে।” ও রকম আগুনে পেসের সঙ্গে স্লেজিংও চলত ডোনাল্ডের। ফলে খুব কঠিন ছিল ওর বিরুদ্ধে খেলা। অ্যালান ডোনাল্ডের বিরুদ্ধে সচিন সমান তালে লড়েছে ঠিকই, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলারের বিরুদ্ধে আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং। ডোনাল্ডের বল সামলাতে গেলে যে দু’টো শট সব থেকে ভাল খেলতে হয়, সেই হুক আর পুল পন্টিংকেই সব চেয়ে ভাল খেলতে দেখেছি। আমরা ডারবানে ৬৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরের ম্যাচেই কেপটাউনে সচিনের ১৬৯ রানের ইনিংসই ডোনাল্ডের বিরুদ্ধে ওর সেরা ইনিংস। সচিনের খেলা কয়েকটা অন দ্য রাইজ স্ট্রেট ড্রাইভ এখনও চোখে ভাসে।
ডোনাল্ডের অস্ত্র: পেস ও বাউন্স
সচিনের উত্তর: স্ট্রেট ড্রাইভ
যুদ্ধের ফল: অমীমাংসিত
ডোনাল্ডের বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: রিকি পন্টিং
ছবি: দেবীপ্রসাদ সিংহ
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে ডোনাল্ড নয়, হ্যান্সি ক্রোনিয়ের বল খেলতেই সব থেকে বেশি সমস্যা হত সচিনের। বিশেষ কোনও কারণ ছিল না। আমারও যেমন পল কলিংউডের বল খেলতে সমস্যা হয়েছে। উইকেটও দিয়েছি ওর বলে আউট হয়ে।

গ্লেন ম্যাকগ্রা
কখনও দেখেছি ম্যাকগ্রা সচিনকে অসহায় ভাবে দাঁড় করিয়ে আউট করেছে, আবার কখনও সচিন ব্যাটে পাল্টা জবাব দিয়েছে। যে কোনও বড় ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধেই ম্যাকগ্রার লড়াই যদি বর্ণনা করা যায়, তা হলেও এ রকমই হবে। লারা, দ্রাবিড় যে কেউ। একতরফা কেউ কাউকে টেক্কা দিতে পারেনি। সচিনের একটা সময় ম্যাকগ্রার আউটসুইং সামলাতে অসুবিধে হচ্ছিল। বাউন্সে ভরা উইকেটে সচিন ঠিক
করল মিডল স্টাম্প গার্ড নিয়ে খেলবে যাতে অফ স্টাম্পের বাইরের বলগুলো নিখুঁত ভাবে ছেড়ে দিতে পারে। ম্যাকগ্রা স্ট্র্যাটেজি বদলে সচিনকে এর পরের দু’টো ইনিংসে ইনসুইংয়ে আউট করেছিল। ভয়ঙ্কর অ্যাকিউরেসি ছিল ম্যাকগ্রার। বাজে কথা বলে ব্যাটসম্যানের মাথা গরম করে দিয়ে ছ’টা বল একই জায়গায় রেখে ব্যাটসম্যানের পরীক্ষা নিতে পারত। ওর মতো স্লেজিং করতে কাউকে দেখিনি। মেলবোর্নে খেলা একটা ইনিংসের কথা মনে পড়ছে যেটায় সচিন ১১৬ করেছিল। ওটাই ম্যাকগ্রার বিরুদ্ধে ওর সেরা। বড় মঞ্চে বেশ কয়েক বার অজি পেসার সচিনকে টেক্কা দিলেও আমি বলব কালিস ও সচিনই ম্যাকগ্রাকে সব থেকে ভাল সামলেছে। নাইরোবিতে ভেজা উইকেটেও সচিন যে ভাবে ম্যাকগ্রাকে সামলেছিল, কোনও দিন ভুলব না।
ম্যাকগ্রার অস্ত্র: নিখুঁত লাইন-লেংথ, সুইং
সচিনের উত্তর: স্ট্রেট ড্রাইভ,
কভার ড্রাইভ
যুদ্ধের ফল: কেউ জেতেনি
ম্যাকগ্রার বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: কালিস, সচিন

শেন ওয়ার্ন
আমি এই লড়াই নিয়ে বলতে হলে শুরুতেই বলব ‘টোটাল ডমিনেন্স’ শব্দটা। সচিনের বিরুদ্ধে কেমন ভাবে বল করবে ভেবে উঠতে না পেরে মাঝেমধ্যে হতাশ হতে দেখেছি ওয়ার্নকে। আমিও বেশ ভাল খেলতাম ওয়ার্নের বল। তবে আমার ক্ষেত্রে একটা সুবিধে ছিল যে বলটা ভিতরের দিকে আসত। ওয়ার্নের বিরুদ্ধেই সচিনকে সব চেয়ে বেশি ইম্প্রোভাইজ করতে দেখেছি। অবশ্য বল হাওয়ায় খুব আস্তে আসত বলে সময়ও পেয়েছে নিজের মতো করে অ্যাডজাস্ট করে নিতে। চেন্নাইয়ে লেগ স্টাম্পের উপর তৈরি হওয়া ‘রাফ’য়ের উপর ওয়ার্ন বারবার বল ফেলার পর সচিন যে ভাবে আড়াআড়ি ব্যাটে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ওকে তিনটে ছয় মেরেছিল, সেটাকে দুর্দান্ত ছাড়া আর কী বলব! ওয়ার্নের বিরুদ্ধে আমার দেখা সেরা দুই ব্যাটসম্যান সচিন তেন্ডুলকর ও ভিভিএস লক্ষ্মণ।
ওয়ার্নের অস্ত্র: বৈচিত্র, গুগলি, ফ্লিপার
সচিনের উত্তর: আড়াআড়ি ব্যাটে মারা
যুদ্ধের ফল: সচিন জয়ী
ওয়ার্নের বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: সচিন, লক্ষ্মণ

মুথাইয়া মুরলীধরন
মুরলী একবারই সমস্যায় ফেলেছিল সচিনকে। সেটা ২০০৭ সাল। তা ছাড়া ওকে খেলতে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি সচিনের। মুরলীর বিরুদ্ধে আমিও সহজেই খেলতাম। সচিন-মুরলী দু’জনেই একে অন্যের বিরুদ্ধে এত বার খেলেছে যে, এই দ্বৈরথে নিজেদের ফাঁকফোকরগুলো কোথায় জানত। ভিডিয়ো অ্যানালিসিসের উপর সচিন কোনও দিনই প্রচণ্ড গুরুত্ব দিত না। রান এলেই বলত, ও সবের তেমন গুরুত্ব নেই। ফিরোজ শাহ কোটলায় মুরলী একটা ম্যাচে সাত উইকেট নিয়েছিল। সচিন ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে মুরলীকে সামলেছিল। মুরলীর বলে দারুণ সুইপ মারতে দেখেছি সচিনকে। এই দ্বৈরথে সচিন অনেক এগিয়ে থাকবে। তবে শ্রীলঙ্কান অফ স্পিনারকে সব থেকে ভাল সামলাতে দেখেছি ব্রায়ান লারাকে। স্পিনের বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করে অবিশ্বাস্য অন ড্রাইভ মারার ক্ষমতা ছিল লারার। মুরলীর বিরুদ্ধে ওই সেরা।
মুরলীর অস্ত্র: বৈচিত্র, ‘দুসরা’
সচিনের উত্তর: সুইপ
যুদ্ধের ফল: সচিন টেক্কা দিয়েছে মুরলীকে
মুরলীর বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: ব্রায়ান লারা

ডেল স্টেইন
ও রকম পেসে লেংথ ঠিক রেখে দু’দিকে স্যুইং করতে পারে একমাত্র ডেল স্টেইনই। একবার স্টেইনকে খেলতে খুব অসুবিধে হচ্ছিল সচিনের। সমস্যাটা হচ্ছিল মূলত আউটসুইংয়ে। ওই সময়টা কভার ড্রাইভ খেলা বন্ধ করে দিল সচিন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ফাস্ট বোলারকে পিছনে ফেলে দেবে সচিন। ২০১১-র কেপটাউনে খেলা শতরানের ইনিংস স্টেইনের বিরুদ্ধে সচিনের খেলা সেরা ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী সিরিজে সচিনের পরিবর্তে দলে যে-ই আসুক, স্টেইনকে খেলা সহজ হবে না।
স্টেইনের অস্ত্র: পেস, লেংথ, সুইং
সচিনের উত্তর: শট নির্বাচন
যুদ্ধের ফল: সচিন জয়ী (অল্প ব্যবধানে)
স্টেইনের বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: সচিন কারও চেয়ে পিছিয়ে থাকবে না

ওয়াসিম আক্রম
শারজার ম্যাচটার কথা এখনও মনে আছে আমার। ওয়াসিমের বাউন্সার সচিনের হেলমেটে লাগল। এর পরও এতটুকু বিচলিত না হয়ে বড় রানের ইনিংস খেলেছিল। ওয়ান ডে-তে দু’জনের মুখোমুখি লড়াইয়ে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচে ওয়াসিম বনাম সচিন লড়াই দেখা যায়নি। ১৯৯৯-এ চেন্নাইয়ে খেলা আমার দেখা ওয়াসিমের বিরুদ্ধে ওর সেরা ইনিংস। ২০০৩-এর বিশ্বকাপের ইনিংসও একসঙ্গে রাখব। এমন একজন বোলার ওয়াসিম যার হাতে সব ধরনের অস্ত্র ছিল। দু’দিকে সুইং, স্লোয়ার, ইয়র্কার, বাউন্সার কোনওটা বাদ নেই। সচিনের কাছে কিন্তু ওয়াসিমকে সামলানোর পাসওয়ার্ড ছিল। ওই মাপের বোলারদের বিরুদ্ধে এরকম হবেই যে কখনও ব্যাটসম্যান জিতবে, আবার কখনও হারও মানতে হবে। এই লড়াইয়ের ফল সমান-সমান।
আক্রমের অস্ত্র: কোন অস্ত্র নেই, সেটাই প্রশ্ন!
সচিনের উত্তর: বোলারের মনকে পড়ে নেওয়া
যুদ্ধের ফল: অমীমাংসিত

ব্রেট লি
ফাস্ট বোলাদের মধ্যে সব থেকে ভদ্র। কিন্তু হাসিমুখে খুন করতে পারে এ রকম পেস রয়েছে। সঙ্গে বাউন্স। ওকে সামলাতে সচিনের শুরুর দিকে কয়েক বার সমস্যা হলেও দারুণ ভাবে সেটা হ্যান্ডেল করেছে। এর পর ২০০৩ ও ২০০৭-এর সিরিজ মিলে কী সব অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে লি-য়ের বিরুদ্ধে। সিডনিতে ডাবল সেঞ্চুরি করল যে ইনিংসটায় সে বার অনেক অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হয়েছিল ওর ব্যাটিংয়ে। সচিনের উইকেট অনেক বার ব্রেট লি পেলেও এই লড়াইয়ে সচিন অনেক এগিয়ে থাকবে আমার বিচারে।
লি-য়ের অস্ত্র: পেস, বাউন্স
সচিনের উত্তর: স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন
যুদ্ধের ফল: সচিন জয়ী
লি-য়ের বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: সচিন কারও চেয়ে পিছিয়ে থাকবে না

জেমস অ্যান্ডারসন
এমন একজন বোলার যার বিরুদ্ধে খেলতে আমার কখনও অসুবিধা হয়নি। দ্রাবিড়ও ওকে দারুণ সামলাত। যে সব বোলারের বল দু’দিকেই সুইং করে তাদের সামলাতে হলে হাত থেকে বল বেরোনোর সময় দ্রুত বুঝে নিতে হয় কোন দিকে বলটা স্যুইং করতে পারে। দ্রাবিড় এটা খুব ভাল বুঝতে পারত যখন জিমি অ্যান্ডারসনের মুখোমুখি হয়েছে। সচিন যখন অ্যান্ডারসনকে খেলেছে তখন কোনও বারই ও সেরা ফর্মে ছিল না। টানা আউটসুইং করে সচিনের
পরীক্ষা নেওয়ার পর হঠাৎ একটা ইনসুইংয়ে হয়তো সচিনকে আউট করেছে অ্যান্ডারসন। এর মধ্যেও ইংল্যান্ডের পেসারের বিরুদ্ধে ওভালে খেলা সচিনের ৯১ রানের ইনিংস আমার মনে থাকবে। আমার মনে হয় অ্যান্ডারসনের তালা খোলার চাবি হয়তো খুঁজে পায়নি সচিন।
অ্যান্ডারসনের অস্ত্র: দু’দিকে সুইং
সচিনের উত্তর: হয়তো উত্তর খুঁজে পায়নি
যুদ্ধের ফল: অ্যান্ডারসন জয়ী
অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে সেরা ব্যাটসম্যান: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়
বাটল রয়্যাল নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা জানানোর পরেও বলব সচিনকে টেস্টে পাঁচ বার আর ওয়ান ডে-তে তিন বার আউট করে সব থেকে বেশি বিপদে ফেলেছিল অনিয়মিত হ্যান্সি ক্রোনিয়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.