রেশন দোকান থেকে সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করতে পারেনি। এ দিনও শহরের বিভিন্ন বাজার থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে বাসিন্দাদের। সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে ১৫টি রেশন দোকানে আলু পৌঁছে দেওয়া হলেও বাসিন্দাদের অনেকেই জানতেন না, ঠিক কখনও থেকে তারা সেখান থেকে আলু কিনতে পারবেন। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “৫০ কেজি হিসাবে ৩৪৫ বস্তা আলু এ দিন আনা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ দফতর থেকে রেশন দোকানগুলিতে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। |
সেখান থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে মাথা পিছু ১ কেজি করে আলু এ দিন কিনতে পারবেন বাসিন্দারা।” মহকুমাশাসক জানান, রেশন কার্ড দেখিয়ে পরিবার পিছু ১ কেজি আলু পাবেন বাসিন্দারা খাদ্য সরবরাহ দফতর জানিয়েছে যে কোনও বাসিন্দা ১ কেজি করে আলু কিনতে পারবেন। কোনও কার্ড লাগবে না। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়িতে সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করতে জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব। এ দিন জলপাইগুড়ির হিমঘর থেকে ৮০ বস্তা আলু আনা গিয়েছে। অপর দিকে ইসলামপুর থেকে একটি আলুর ট্রাক বাইরে যাচ্ছে সন্দেহে খড়িবাড়ি থানার পুলিশ সেটিকে আটকায়। যে ব্যবসায়ীর আলু তাঁর সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিকরা কথা বলার পর তিনি গাড়ির ২৬৫ বস্তা আলু ১১ টাকা কেজি দরে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিকে বিক্রি করতে রাজি হন। প্রশাসনের উদ্যোগে তা খাদ্য সরবরাহ দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে এ দিন শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে থাকা ৫৬ টি রেশন দোকানকে ৪ বস্তা (৫০ কেজির) করে আলু দেওয়া হয়েছে।
শিলিগুড়ির বাসিন্দা সঞ্জয়কুমার, মালতি ভকতের মতো অনেকেই জানান, রেশন দোকান থেকে পরিবার পিছু ১ কেজি করে আলু মিলবে বলে তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু কবে থেকে পাওয়া যাবে তা জানেন না। এ দিন ক্ষুদিরামপল্লি বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে তাঁরা আলু কিনেছেন। মালতিদেবী বলেন, “৩০ টাকা করে আলু কিনতে হচ্ছে। বাজারে আলুর দর না কমা পর্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।”
মালদহেও সরকারি দরে আলু বিক্রি শুরু করাতে পারেনি প্রশাসন। আলুর আকাল সামাল দিতে জেলার ৬ টি হিমঘর থেকে আলু তুলে শুক্রবারা থেকে জেলার ১৫ টি ব্লকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার জেলার ছ’টি হিমঘরের মালিক, সদর মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক, ইংরেজবাজার ও সামসী নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক নীলকমল বিশ্বাস। পরে তিনি বলেন, “জেলার ছ’টি হিমঘরে এক লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৬৭ হাজার কুইন্টাল আলু মজুত আছে। তার মধ্যে ৫৭ হাজার কুইন্টাল আলু বীজের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি ৭৮ হাজার কুইন্টাল আলুর মধ্যে ২০ শতাংশ আলু বাজারে বিক্রির জন্য হিমঘর মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।”
জলপাইগুড়িতে সরকারি দরে আলু বিক্রি করল জলপাইগুড়ির প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। আলু বিক্রি নিয়ে ক্ষোভ দেখান খুচরো ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দাবি করেন, প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা কম দামে খুচরো বিক্রেতাদের কাছে আলু বিক্রি করতে হবে। তা হলে তাঁরাও ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে পারবেন। এ দিকে, বালুরঘাটে বাসিন্দারা আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সেই ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরেই। ১৩ টাকা দরে আলু সরবরাহ নিয়ে আড়তদার, বণিকসভার প্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক সজলকান্তি টিকাদার বলেন, হিমঘরে চাষিদের কিছু আলু মজুত রয়েছে। ওই আলু জোর করে নেওয়া যাবে না। চাষিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হবে। পাশাপাশি, অসমে আলু যাওয়া বন্ধ করতে বক্সিরহাট থানা এলাকায় বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিলেন কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে অসম সীমানা লাগোয়া বক্সিরহাট থানা এলাকাকে করিডর করে ওই রাজ্যে আলু পাচারের একটি চক্র রমরমা কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অবশ্য জানায় বৈধ নথি ছাড়া গত আলু ভর্তি চারটি ট্রাক অসম লাগোয়া এলাকায় আটক করা হয়েছে। |