শিলিগুড়ি থানা থেকে ২০০ মিটার দূরে এক প্রোমোটারকে মারধর করে কুপিয়ে সোনার চেন ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার জেরে শহরে আলোড়ন পড়েছে। মঙ্গলবার রাতে শহরের স্টেশন ফিডার রোডের বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির দফতরের সামনে মোড়ে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গণেশ চন্দ্র দাস নামের ওই প্রোমোটার বর্তমানে মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাঁর পা, কোমরে আঘাত রয়েছে।
থানার পাশের এলাকায় পুলিশের নজরদারির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বাসিন্দাদের পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলরেরা। তাঁদের অভিযোগ, পুরোপুরি ব্যবসায়িক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যার পর পুলিশের নজরদারি বিশেষ দেখা যায় না। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভ্যান নিয়ে ঘোরার পাশাপাশি পুলিশ কর্মীরা হেঁটে টহল দিলেও কার্যত তা এখন দেখাই যায়নি। এর সুযোগেই দুষ্কৃতীরা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি পুরসভার ৯ নম্বর এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে রয়েছে। দুটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরই কংগ্রেসের। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সবিতাদেবী অগ্রবাল বলেন, “পুলিশের নজরদারির অভাবেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যার পর এলাকায় পুলিশের টহলদারি ভ্যান দেখাই যায় না। আগে হেঁটে পুলিশ কর্মীরা ঘুরলেও তা বন্ধ। সম্প্রতি একটি সিগারেটের গুদাম, কাপড়ের দোকানে চুরি হয়। একটি বাড়িতেও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে কিছু জানালেই লিখিত দেওয়ার কথা বলা হয়।” একইভাবে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সীমা সাহা বলেন, “এই ধরণের ঘটনা ঘটায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। পুলিশ সঠিকভাবে নজরদারি করছে না।”
জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি ঘটনায় শঙ্কিত রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের ২ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুয়াল বলেন, “শিলিগুড়ি থানার পাশাপাশি মিলনপল্লি পুলিশ ফাঁড়ি হয়েছে। কিন্তু পুলিশের নজরদারি বাড়েনি। এর সুযোগে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। দ্রুত পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” শিলিগুড়ির থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ঘটনার পর রাতেই মিলনপল্লি এলাকা থেকে সোমন দত্ত নামের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীর নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং সোনার চেনের হদিশ মেলেনি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ধৃতকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুরানো কোনও গোলমালের জেরে ঘটনাটি কী না তাও দেখা হচ্ছে। এলাকায় নজরদারি বাড়াতে থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, প্রোমোটার গণেশবাবুর বাড়ি বাবুপাড়া এলাকায়। পাঁচতলা বাড়ির নিচেই তাঁর অফিস। রাত ৯টার পর তিনি বাইক নিয়ে বর্ধমান রোডের একটি পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথেই ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে গণেশবাবু জানান, পাওনাদারদের ৭০ হাজার টাকা দিতে যাচ্ছিলাম। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির সামনে একটি পানের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট কিনি। রাস্তার ধারে একটি কালীপুজোও হচ্ছিল। সেই সময় একটি ধৃত যুবক নাম ধরে ডেকে সামনে আসে। ছেলেটি মুখ চেনা হওয়ায় দাঁড়াই। হঠাৎ করে সামনে এসে বাইকের চাবি কেড়ে নেয়। তার পরে কালীপুজোর জলসার জন্য ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। আমি পরে সকালে কথা বলতে বলি। ও কোনও কিছু না বলে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ে। পিছু নিতেই তেড়ে এসে প্রথমে বাটাম দিয়ে পায়ে আঘাত করে। মাটি লুটিয়ে পড়তেই পিঠের উপরে বসে ধারাল কিছু দিয়ে পায়ে কুপিয়ে দেয়। ধস্তাধস্তির সময় টাকা ও সোনার চেন ছিনিয়ে নেয়। চিৎকার করায় এলাকার কয়েকজন যুবক এসে বাঁচায়। |