বড় রাস্তা বা বাজার এলাকা বনগাঁ শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। বাসের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে রয়েছে অটোর স্ট্যান্ড। এক জেরে নিত্য যানজটে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাঁদের দাবি, একটা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরি করা হোক। বেশ কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির জন্য প্রশাসনিক স্তরে বেশ কয়েকবার বৈঠক হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্যও কয়েকবার উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবেই এই টার্মিনাস তৈরির বিষয়টি কার্যকর হয়নি।
বনগাঁ শহর, বনগাঁ-বাগদা সড়কের উপর মতিগঞ্জ এলাকায় ও বনগাঁ থানার ও মহকুমা আদালত চত্বরে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে অস্থায়ী সব বাসস্ট্যান্ড। যশোহর রোডের ধারে নিউমার্কেটে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলেও রেহাই মেলেনি যানজট থেকে। অন্য দিকে, সপ্তাহে সোম থেকে শুক্রবার মতিগঞ্জ এলাকায় হাট বসে। দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি ভর্তি করে মালপত্র নিয়ে আসেন চাষিরা। এমনিতেই রাস্তার উপর সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকে। তার উপর হাটের দিনগুলিতে অন্য গাড়ির চাপে যাতায়াত করতে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। বনগাঁ-চাকদহ সড়কের উপর আবার বাসের সঙ্গে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক। তাতেও সমস্যা তৈরি হয়।
শুধু যে যাতায়াতের অসুবিধা, তা নয়। অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডগুলির কারণে বনগাঁ শহরে অপরাধও বাড়ছে বলে দাবি নাগরিকদের। সম্প্রতি বনগাঁ আদালত চত্বরের পাশে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করার অভিযোগও উঠেছে। বছর কয়েক আগে ওই এলাকারই বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসের ভিতর এক যুবককে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। আইনজীবীদেরও বক্তব্য, যত্রতত্র বাসস্ট্যান্ড গজিয়ে ওঠায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে। |
এই এলাকায় মহকুমাশাসকের দফতর, এসডিপিও-র অফিস, উপসংশোধনাগার-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি অফিস রয়েছে। অথচ পর্যাপ্ত আলো বা পুলিশি নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। কয়েক দিন আগে বনগাঁ মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বনগাঁ ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওই এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড সরানোর দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, “বাসস্ট্যান্ডে একেই বাস রাখার জায়গা নেই। বাস দাঁড়িয়ে থাকায় চলাফেরার অসুবিধা হচ্ছে। ওখানে বাস রাখার জায়গা নেই। বাস দাঁড়িয়ে থাকায় তার আড়ালের সুযোগ নিয়ে অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা মদ্যপানের আসর বসায়। মহিলারা যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়েন। এক মাসের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার জন্য মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি।” মহকুমাশাসক জানান, ওখানে পর্যাপ্ত আলো লাগানো বা বাসস্ট্যান্ড সরানোর বিষয়টি পুরপ্রধানকে দেখতে বলা হয়েছে। এসডিপিওকে পুলিশ ক্যাম্প বসানোর বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।
পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্নাদেবীর দাবি, “বনগাঁ শহরের বাইরে একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির জন্য পুরসভা কয়েকবার উদ্যোগী হয়েছিল। মহকুমাশাসক, জেলাশাসককে এ বিষয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি।” আলো লাগানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই এলাকায় আলো লাগানো হয়েছিল। তবে আরও আলোর প্রয়োজন রয়েছে। শীঘ্রই তা লাগানো হবে। তবে বাসস্ট্যান্ড সরানোর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা উদ্যোগী হলে আমরা সহযোগিতা করব।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুনীল সরকার বলেন, “আমরাও চাই বাস টার্মিনাস হোক। শুনেছি, এ জন্য জমিও দেখা হচ্ছে। কিন্তু বৈঠকে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।”
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের আশ্বাস, “বনগাঁয় একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির চেষ্টা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। শহরের মধ্যে জমি না থাকায় স্থানীয় চাঁপাবেড়িয়া এলাকায় পূর্ত দফতরের একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারকে জমিটি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে ওখানে বাস টার্মিনাস তৈরির জন্য দাবি জানানো হয়েছে। মন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছেন। সরকারি কিছু নিয়মকানুনের জন্য দেরি হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস হবেই।”
বনগাঁ মহকুমা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল বলেন, “বনগাঁর যানজট সমস্যার সমাধানে আমরাও চাই বাস টার্মিনাস হোক।” উত্তর ২৪ পরগনার জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, “বিষয়টি পরিবহণ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বাস টার্মিনাস যাতে তৈরির সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।”
প্রশাসনের এই চেষ্টা কতদিনে বাস্তব রূপ পায়, বনগাঁর মানুষ যানজট মুক্ত রাস্তা পান কি না সেটাই এখন দেখার। |