পর্যটক আবাসে পর্যটকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। পর্যটকদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করুন।
রাজ্যের পর্যটন দফতরের কর্মীদের একাংশের কর্মসংস্কৃতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, সরকারকে এখন রীতিমতো নির্দেশ পাঠিয়ে আচরণের এই অ-আ-ক-খ শেখাতে হচ্ছে! শুধু আচার-আচরণের প্রথম ভাগ নয়, পর্যটক আবাসের ঘরগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যও কর্মীদের নির্দেশ দিতে হচ্ছে পর্যটন দফতরকে। বুধবার মহাকরণে এই নির্দেশ জারির কথা জানান পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী নিজেই। তিনি বলেন, “আসন্ন শীতের পর্যটন মরসুম থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে।”
ভারতীয় সমাজদর্শন অতিথিকে দেবতার আসনে বসাতে শিখিয়েছে। ভারতের দর্শনীয় স্থানে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের টানতে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন বিভাগের হয়ে অভিনেতা আমির খানের ‘অতিথি দেবো ভব’ অনুষ্ঠান সমাদৃত হয়েছে। পর্যটক আবাস পরিচ্ছন্ন রাখা বা অতিথিদের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার তো কর্মীদের কাজেরই প্রাথমিক শর্ত। তা হলে এত দিনে রাজ্য সরকারকে এমন নির্দেশ দিতে হচ্ছে কেন?
মন্ত্রী বলেন, “বহু ক্ষেত্রেই পর্যটক আবাসের ঘর, বিছানা, শৌচাগার পরিষ্কার থাকে না বলে পর্যটকদের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় পর্যটকেরা যা জানতে চান, পর্যটক আবাসের কর্মীরা তার উত্তরও ঠিকমতো দেন না।” কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, কিছু দিন আগে তিনি মালদহ পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে আবাসের কর্মীদের ওই ব্যবহারের নমুনা দেখেছেন। |
রাজ্য পর্যটন উন্নয়নের নিগমের অধীনে আপাতত ২৮টি পর্যটক আবাস বা ট্যুরিস্ট লজ আছে। তার মধ্যে কয়েকটি আবাসের খাবারের মানও দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে বহু পর্যটক অভিযোগ করেছেন নিগমের কাছে। পর্যটকদের সঙ্গে কর্মীদের ভাল ব্যবহার করতে বলে সরকারি নির্দেশ জারি হওয়ার পরে পর্যটক আবাস চালানো আদৌ সরকারের কাজ কি না, সেই প্রশ্নটাই ফের সামনে চলে এসেছে।
ট্যুরিস্ট লজ চালানোটা যে সরকারের কাজ নয়, খোদ মন্ত্রী এ কথা মেনে নিয়েছেন। এক সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, ক্রমাগত লোকসানে চলা অন্তত চারটি ট্যুরিস্ট লজ চালানোর দায়িত্ব থেকে সরে আসবে পর্যটন দফতর। কিন্তু নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরোধিতায় পর্যটন দফতর শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারেনি। তবে পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব হস্তান্তরের বদলে আপাতত কয়েকটি লজে শুধু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মতো কিছু দৈনন্দিন কাজ (হাউস-কিপিং)-এর ভার বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যটন দফতর। মন্ত্রী জানান, তাঁর দফতর সুন্দরবনের ঝড়খালিতে ৯৮ একর জমি পেয়েছে। সেখানে ইকোট্যুরিজম বা পরিবেশ-পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থার সহায়তা নেওয়া হবে সেই কাজেও।
পরিষেবার দুর্দশার ব্যাপারে পর্যটন কর্মীদের সংগঠন কী বলছে?
কর্মীর অভাবের কথা বলছে কর্মী ইউনিয়নের একাংশ। তাদের বক্তব্য, পর্যটক আবাসগুলিতে কর্মীর অনুমোদিত পদ ৫০০। কিন্তু কর্মী আছেন বড়জোর শ’তিনেক। সেই জন্যই পরিষেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু কর্মীর অভাব তো আন্তরিক আচরণের বাধা হতে পারে না। কর্মীরা সেটুকু করবেন না কেন? স্বভাবতই জবাব এড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।
বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার উপরেও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করছে রাজ্য। মন্ত্রী জানান, মাঝেমধ্যেই খবর পাওয়া যায় এবং পর্যটন দফতরেও অভিযোগ আসে যে, এ রাজ্যে কর্মরত কিছু ভ্রমণ সংস্থা পর্যটকদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করছে।
সেটা দেশের মধ্যে হচ্ছে, বিদেশেও হচ্ছে। ওই সব ভ্রমণ সংস্থার উপরে নজরদারি চালাতে চায় পর্যটন দফতর। ঠিক হয়েছে, এ রাজ্যে কাজ করছে, এমন সব পর্যটন সংস্থাকে এ বার থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে পর্যটন দফতরে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। যে-সব সংস্থা ভিন্ রাজ্য বা বিদেশ থেকে বাংলায় আসা পর্যটকদের গাড়ি ভাড়া দেয়, পর্যটন দফতরে তাদেরও নাম নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পর্যটকেরা কোথাও কোনও অসুবিধায় পড়লে যাতে রাজ্য পর্যটন দফতরের সহায়তা পান, সেই জন্য চালু করা হচ্ছে একটি টোল-ফ্রি নম্বরও। |