কুবের উবাচ
সজল কর্মকার (২৯) • বাবা (৫৯) • মা (৫২)
রাজ্য সরকারি কর্মী • পিএফ এখনও চালু হয়নি • আগামী বছর বিয়ের পরিকল্পনা
• থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে • সংসার খরচ চালান মূলত বাবা • গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে
• চান প্রতি বছর বেড়াতে যেতে • পুরীতে হোটেল ব্যবসা করতে আগ্রহী
• লক্ষ্য ভবিষ্যতের জন্য মোটা সঞ্চয়ও
মাসে নিট আয়
খরচ (মাসে)
ব্যক্তিগত ২,০০০
সংসারে দেন ৩,০০০
অফিস কো-অপারেটিভে মাসিক কিস্তি
৩,০০০ (মোট ঋণ ৬০,০০০)
সঞ্চয় (মাসে)
পোস্ট অফিস লাইফ ইনশিওরেন্স ২,৫৫০ (বিমা মূল্য ১০ লক্ষ, ২৯ বছর)
রেকারিং ১,০০০ পিপিএফ ৫০০
অফিস কো-অপারেটিভ ১,০০০
নিউ বিমা গোল্ড ১৭২ (বিমা মূল্য ৫০ হাজার, ২০ বছর)
জীবন সরল ২৫৩ (বিমা মূল্য ৬২,৫০০, ২১ বছর)
জীবন আনন্দ ৭৪১ (বিমা মূল্য ২ লক্ষ, ২৫ বছর)
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
সজলের বয়স কম। স্বপ্ন অনেক। নিজের চিঠিতে বিয়ে, গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা, বিদেশে ঘুরতে যাওয়া, ব্যবসা করার মতো ইচ্ছের কথা লিখেছেন তিনি। তবে, তাঁর এখন যা বেতন, তাতে সব স্বপ্ন সফল হওয়া সম্ভব নয়। আগামী দিনে বেতন বাড়বে। তখন চেষ্টা করলে হয়তো কিছু লক্ষ্যপূরণ করা সম্ভব হবে। তবে পরিবার শুরু হলে খরচও তেমনই বাড়বে। তাই সব কিছু পেতেই হবে, এই মানসিকতা না-থাকাই ভাল। নইলে সঞ্চয়ে টান পড়বে।
অবশ্য শুধু সজল নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই বিভিন্ন শখ-আহ্লাদ থাকে। কিন্তু সীমিত আয়ে তার সবটা পূরণ করা যায় না। তাই সজলকে এবং সমস্ত পাঠককেই আমার পরামর্শ— প্রথমে নিজের লক্ষ্যগুলো ভাল করে যাচাই করুন। প্রয়োজন অনুসারে তা সাজিয়ে নিন। দেখুন কোনটা না-হলেই নয়। তার পর সেই অনুযায়ী সঞ্চয়ে মন দিন।
সজল তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। এই বয়সে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় চারপাশের প্রলোভনে সঞ্চয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি না আমরা। এ জন্য কয়েকটি কারণ বিশেষত দায়ী। সেগুলি নিয়ে সতর্ক করতে চাই। যেমন—
(১) প্রতিদিনই নিত্যনতুন পণ্য আসছে বাজারে। যা অন্যের আছে, তা আমারও থাকতে হবে— এই প্রতিযোগিতায় গা ভাসিয়ে ফেলি আমরা অনেকেই।
(২) অফিসে দীর্ঘ সময় কাটানোর ক্লান্তি মেটাতে সপ্তাহের শেষে খুব বেশি টাকা খরচ করে ফেলাও নতুন নয় আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে।
(৩) প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ফেলার নজিরও আমাদের চারপাশে অনেক।
(৪) কম বয়সেই ফ্ল্যাট বা বাড়ির মতো স্থাবর সম্পদ কেনার দিকে মন দিচ্ছে আজকের প্রজন্ম। ফলে প্রায় সারা জীবনই তাঁদের কাটাতে হচ্ছে বিশাল ঋ
ণের বোঝা মাথায় নিয়ে।
(৫) সঞ্চয়ের জন্য সামনে অনেক বছর রয়েছে। তাই এখন খরচ করার সময়। এই মানসিকতায় পড়ে বেশি টাকা রোজগার করার পরও, খরচ করে ফেলার অভ্যাস আর নতুন নয়।
(৬) এখন বেসরকারি সংস্থাগুলিতে বেসিক স্যালারি (মূল বেতন) খুবই কম। কিন্তু তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভাতা যোগ হয়ে বেতনের অঙ্ক যথেষ্টই বেশি। ফলে অবসর জীবনের জন্য পিএফের পরিমাণও সেখানে খুব একটা বেশি হয় না। পাশাপাশি, অনেক জায়গাতেই নেই পেনশনের সুবিধা। যে কারণে অবসর জীবনের নিশ্চয়তাও আর আগের মতো নেই।
(৭) বহু মানুষের সঞ্চয় সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। যে-কারণে লগ্নি করলেও, তা সঠিক সময়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ফল দেয় না।
এ বার আসি সজলের প্রোফাইলে। তাঁর বাবাই আপাতত সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সে কারণে তিনি মন দিতে পারেন নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার বিষয়টিতে। এখন থেকে সঠিক লগ্নি পরিকল্পনা করতে পারলে আগামী দিনে তিনি কী ভাবে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবেন, আজ সেই পরামর্শই দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।

বিয়ের পরিকল্পনা
আগামী বছর বিয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সজলের। কিন্তু এই খাতে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত সঞ্চয় নেই তাঁর। এ জন্য রেকারিং এর টাকা কিছুটা হলেও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু তা-ও খুবই সামান্য। ফলে বাবার সঞ্চয়ের উপর তাঁকে নির্ভর করতেই হবে। তাঁর চিঠি অনুযায়ী, অফিস কো-অপারেটিভ থেকে ঋণ নিয়ে একটি নেকলেস কিনেছেন তিনি। যা বিয়েতে কাজে লাগবে।

গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা
আপাতত গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা স্থগিত রাখা ছাড়া গতি নেই সজলের। আমার মতে, গাড়ির থেকেও ফ্ল্যাট কেনার উপরই জোর দেওয়া উচিত তাঁর। এখন মাসে হাতে থাকছে ১,১০০ টাকা। অফিসের ঋণ শোধ হলে যোগ হবে ৩ হাজার টাকা। ওই ৪,১০০ টাকা কোনও ব্যালান্সড ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) রাখতে পারেন। যা দিয়ে কিছুটা হলেও ডাউনপেমেন্টের তহবিল গড়ে তোলা যাবে। বাকি টাকা ঋণ নিতে হবে।

বেড়াতে যাওয়া
প্রতি বছর বেড়াতে যেতে চান সজল। বিদেশেও যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। এ জন্য বিয়ের পরেও ওই ১,০০০ টাকার রেকারিং ডিপোজিট চালিয়ে যান। মাইনে বাড়লে সেই টাকার কিছুটা রাখুন রেকারিং-এ। এ ভাবে প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়ার তহবিল তৈরি করুন। বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে এখনই সফল হবে না। তবে সঞ্চয় চালিয়ে গেলে ও বেতন বাড়লে সেই সুবিধা নিতে পারবেন।

ব্যবসা শুরু
পুরীতে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা লাগবে শুধু হোটেল লিজ নিতে। রয়েছে তা চালানোর খরচও। বেতন বাড়লেও, সেই টাকা জোগাড় করা চট করে সম্ভব নয়। কার্যকরী মূলধনের জন্য নিতে হবে ঋণও। ফলে এই পরিকল্পনা আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখতেই হবে।

স্বাস্থ্যবিমা
বাবা-মা দু’জনেরই বয়স হয়েছে। ফলে পরের বার বেতন বাড়লে প্রথম কাজ তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা করানো। নিজের জন্যও একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করিয়ে রাখুন। বিয়ের পর সেখানে স্ত্রীর নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।

অবসর পরিকল্পনা
আমি আলাদা করে পেনশন প্রকল্পে লগ্নি করার পক্ষপাতী নই। বরং বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা রেখে একটা মূলধন গড়ে তুলে, অবসরের ঠিক পরেই তা অ্যানুইটিতে বদলে নিতে পারলে অনেক বেশি লাভ হয় বলে আমার মত।
সজলের পিএফ চালু হলে সেই টাকা অবসর জীবনে কাজে লাগবে। পিপিএফে প্রতি মাসে আপনি ৫০০ টাকা রাখেন। আগামী দিনে অবশ্যই সেই পরিমাণ বাড়ান। এ ছাড়াও, বিভিন্ন জীবন বিমা এবং অফিস কো-অপারেটিভের টাকা অবসর জীবনের জন্য রাখুন। বেতন বাড়লে অন্যান্য প্রকল্পে টাকা রাখার কথা ভাবুন।

জীবনবিমা
ডাকঘর জীবনবিমা ছাড়া অন্যান্য বিমার মূল্য খুবই কম। সজলের নিজের সংসার হলে কিন্তু তাঁর বিমার মূল্য অবশ্যই বাড়াতে হবে। সে জন্য এখন থেকেই ভেবে রাখুন টার্ম পলিসির কথা।
আগামী দিনে যদি সজল নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে লগ্নি চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে কিন্তু ভবিষ্যতে সুন্দর জীবন অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁর জন্য। তবে সে জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর লগ্নির পর্যালোচনাও করতে হবে তাঁকে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.