পঞ্চায়েত, পুরসভার পরে এ বার কংগ্রেস পরিবারেও ভাঙন ধরাতে নেমেছে তৃণমূল!
রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের যে হিড়িক চলছে, তার ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে অসুস্থ কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পরিবারে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা চেষ্টা করছেন, লোকসভা ভোটের আগে প্রিয়বাবুর ভাই, কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিকে দলে টানার। শাসক দলের শীর্ষ সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সত্যবাবুকে তৃণমূলে দেখা যেতে পারে।
প্রিয়বাবু ভোটে দাঁড়ালে তাঁর অন্যতম সহযোগী ছিলেন সত্যবাবু। প্রিয়বাবুর ঠিক পরের ভাই। উত্তর দিনাজপুরের সর্বত্র তো বটেই, রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজে তাঁকে দেখা যেত। প্রিয়বাবুর একদা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, অধুনা তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সত্যর সঙ্গে আমার যা কথাবার্তা হয়েছে, তাতে ও তৃণমূলে আসছেই। আমার মনে হয়, সত্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। আমরা ওকে তৃণমূলে স্বাগত জানাচ্ছি!” প্রিয়-ভ্রাতাকে তৃণমূলে আনার ব্যাপারে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন সুব্রতবাবুই। তৃণমূল শিবিরের জল্পনা, দলে এনে আগামী লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ থেকে সত্যবাবুকে ঘাসফুল চিহ্নে প্রার্থী করা হতে পারে। প্রিয়-জায়ার সঙ্গে প্রিয়-ভ্রাতাকে লড়িয়ে দিয়ে প্রিয়-আবেগের ফায়দা তখন তুলতে চাইবে তৃণমূলও!
স্বয়ং সত্যবাবু অবশ্য বিশদে কোনও মন্তব্য করছেন না। যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, “আমি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।” তবে সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “ইদানীং সত্যর খুব সমস্যা হচ্ছিল। প্রিয়দা কংগ্রেস করতেন ঠিকই।
কিন্তু এখন তো তিনি সক্রিয় নন। আর সত্য সক্রিয় রাজনীতি করে। এখন অধিকাংশ জায়াগাতেই কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীরা তৃণমূলে চলে আসছে। বলতে গেলে কংগ্রেসটা তৃণমূলই হয়ে যাচ্ছে!” এই কারণেই সত্যবাবুদের কংগ্রেস করতে সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যাখ্যা দিয়ে সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “তৃণমূলে যোগ দিলে ওর পক্ষে কাজের সুবিধাই হবে।”
সত্যবাবুর পরের ভাই গোপাল দাশমুন্সিও সক্রিয় কংগ্রেস কর্মী। দল ভাঙানোর পরিকল্পনায় গোপালবাবুও তৃণমূল নেতাদের নিশানায় রয়েছেন বলে দলীয় একটি সূত্রের ইঙ্গিত।
তবে তাঁর দেওরদের দলত্যাগের সম্ভাবনার ব্যাপারে রায়গঞ্জের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির বক্তব্য, “আমিও শুনেছি। আমি ওঁকে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি তো না বলেছেন!”
একই সঙ্গে দীপা অবশ্য এ-ও মনে করেন যে, “পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে দাশমুন্সি পদবিটা ব্যবহার করতে চাইছে তৃণমূল! এটা কোনও রাজনীতি নয়। একটা ঘৃণ্য পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা!”
তাঁর তৃণমূলে যোগদানের ব্যাপারে কানাঘুষো শুরু হওয়ায় নিজেকে কিছুটা আড়ালেই রাখছেন সত্যবাবু। কংগ্রেস ছাড়ার ব্যাপারে সরাসরি প্রশ্নের কোনও জবাব তো দিচ্ছেনই না, সংক্ষেপে মন্তব্য করে টেলিফোন নামিয়ে রাখছেন। প্রিয়বাবুর ভাই লোকসভায় প্রার্থী হবেন কি না, এই ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য তৃণমূল শিবিরে না-থাকলেও সত্যবাবুর ঘনিষ্ঠ জনেরা জানিয়েছেন, তাঁকে ‘উপযুক্ত কাজে’ লাগানো হবে বলে মুকুলবাবু কথা দিয়েছেন।
মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, “কিছু পাওয়ার জন্যে তো সত্যবাবুর মতো রাজনৈতিক কর্মীরা তৃণমূলে আসছেন না!” তা হলে কেন আসছেন? মুকুলবাবুর ব্যাখ্যা, “তৃণমূল এমন একটা দল, যার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল এমন একটা দল, যে দলে এলে স্বচ্ছতার সঙ্গে উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কাজ করা যায়। এমন দলে যাঁরাই আসবেন, তাঁদের আমরা স্বাগত জানাই।”
|