ঋণ নিয়ে জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন বাসন্তীর কুলতলির বাসিন্দা চিন্তামণি পুরকাইত। টানা বৃষ্টিতে জমিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেননি। ফলে জমিতে পড়ে থাকা পাকা ধান থেকে কলা বেরিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন গাছ। শুধু চিন্তামণি পুরকাইত নন, নষ্ট হয়েছে বাসন্তীর শিবগঞ্জের বাসিন্দা গোলাম রহমান মল্লিকের ১০ বিঘা জমির ধানও।
বর্ষা শেষের নির্দিষ্ট সময়ের পরে সমানে বৃষ্টি চলার ফলে অন্যান্য জেলার মতো ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকা-সহ ভাঙড়-১ ও ২ ব্লকেও। অনেক চাষিই ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন কি করে ঋণ শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরাও।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৭টি ব্লকে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে আউশ, আমন ধান ও সবজি চাষ হয় ৩ লক্ষ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ভাঙড়-১ ও ২ ব্লক, বিষ্ণুপুর ১ ও ২ ব্লক, মগরাহাট, বারুইপুর, বাসন্তী-সহ বিভিন্ন এলাকায়। বাসন্তীর ১০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়। এর মধ্যে ২৫ হেক্টর জমির ৫০ মেট্রিক টন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভাঙড়-২ ব্লকের ২০৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৬৭ হেক্টর জমির আমন ধান, ৬১ হেক্টর জমির খরিফ শস্য, ৪২ হেক্টর জমির শীতকালীন সব্জি, ২৫ হেক্টর জমির ফুল চাষ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভাঙড়-২ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর অফ এগ্রিকালচার ডি মহালানাবীশ বলেন, “শুধুমাত্র ভাঙড়-২ ব্লকেই ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।”
জেলার ডেপুটি ডাইরেক্টর অফ এগ্রিকালচার আশিষ লাহিড়ি বলেন, “জেলার ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ৮০ শতাংশ জমিতে ধান ও সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২৭২ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড আছে তারা শস্যবিমার টাকা পেয়ে যাবেন। তবে ৫০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসে।” চাষিদের অভিযোগ, বহু জায়গায় নিকাশি ব্যবস্থাতেও রয়েছে গলদ। সেজন্যও হয়েছে চাষের এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি। আপাতত সরকারি সাহায্যের আশাতেই বুক বাঁধছেন চাষিরা। |