|
আজ নির্বাচন থাকলেও বুথে
কোনও মানুষ দেখা যেত না
রবি শাস্ত্রী |
|
আগে এ রকম ব্যাপার কখনও হয়নি। পরেও কোনও দিন হবে না। যে ভাবে এক জন মানুষের জন্য গোটা দেশ একইসঙ্গে আনন্দ করছে, আবার যন্ত্রণাও পাচ্ছে! আগামী বারো দিন ভারতবর্ষ যেন গোমড়ামুখে থমকে থাকবে। বুধবারই যদি কলকাতা বা মুম্বইয়ে নির্বাচন থাকত, তা হলে পোলিং বুথগুলোতে হয়তো কেবল কুকুর আর পোকামাকড় দেখা যেত। কোনও মনুষ্য নয়।
দু’দশকেরও আগে এক কিশোরকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। যে এখন গুডবাই জানানোর সময় এক বিশাল মহীরূহে পরিণত। সচিন তেন্ডুলকর এক জনই ছিল। আছে। থাকবে। আমাদের সব মরণশীলের মধ্যে একমাত্র অমরত্বে উত্তীর্ণ মানুষ।
প্রত্যেক ভারতবাসী সচিনের শেষ দু’টো টেস্টে যে মাঠে হাজির থাকবেন না সেটা ঠিক। এর পরের সেরা উপায় হল টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখা। সচিন একবার এই সিরিজে ব্যাট হাতে ক্রিজের দিকে এগোক, আমি বাজি ধরতে রাজি যে, এক জন মানুষও সেই মুহূর্তটার সাক্ষী না থেকে পারবেন না। টিভি না থাক, মোবাইলে ইন্টারনেট তো আছে। সচিনের প্রতিটা পদক্ষেপের দিকে কোটি কোটি জোড়া চোখ নজর রাখবে। আর কয়েকশো হৃদপিণ্ডের ধুকপুকুনি চলবে। এমনকী অন্য জগতের কিংবদন্তিরাও চোখ তুলে তাকাবেন ওর দিকে।
কেউই ভারতের চারটে ইনিংসে সচিনের থেকে অন্তত দুটোর কমে সেঞ্চুরি আশা করছে না। প্রত্যেকের আশা ওর ভারী ব্যাট বলের উপর নেমে এসে বোলারের পাশ দিয়ে সোজা বাউন্ডারিতে পৌঁছে দেবে। কিংবা অফস্টাম্পের বাইরে বলও ওর পেলব কব্জির মোচড়ে মিড উইকেট দিয়ে সিধে চার হবে। স্লিপ ফিল্ডিং চিরে ওর স্টিয়ারগুলো। ফাইন লেগে প্যাডল সুইপগুলো। কভারে ব্যাকফুট পাঞ্চগুলো। তীক্ষ্ম সিঙ্গলসগুলো। আর সব শেষে ওর দু’হাত তুলে আকাশের দিকে তাকানো সব কিছু শেষ বারের মতো এই সিরিজে দেখা যাবে।
সচিন বরাবরের মতোই ওর সাধনায় মগ্ন হয়ে আছে। যেটা গোটা ক্রিকেটজীবন ধরে করে এসেছে। টেস্টের আগে একেবারে নিখুঁত অনুশীলন। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে বোলার বাছা। টেস্ট শুরুর আগের রাতে খানিকটা অস্বস্তি, টেনশনে থাকা। প্রতিটা ডেলিভারি খেলার আগে সেই বলটা বাদে জাগতিক সব কিছু নিজের মন থেকে হটিয়ে দেওয়া। অন্য সবার কাছে সচিনের এটা শেষ সিরিজ। কিন্তু স্বয়ং সচিন এখনও ওর সেই বরাবরের প্রচণ্ড সিরিয়াস প্রস্তুতির থেকে একবিন্দু সরেনি।
অনেক কারণেই তাই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াইটা গৌণ হয়ে উঠতে চলেছে। তা সত্ত্বেও বুধবার সিরিজ শুরুর প্রতিটা ফ্রেম, প্রতিটা শব্দ আমি চেটেপুটে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি। ইডেনের হাজার হাজার দর্শকের মুখ সচিন-মুখোশে ভর্তি থাকবে। সচিনের ছবি সাঁটা টি-শার্টে, সচিনের নামে অগুণতি ব্যানার-পোস্টারে ইডেন হয়তো ঢাকা পড়ে যাবে।
সচিনের বিদায়ী সিরিজ শুরুর আর তর সইছে না যে! |