অতি প্রশংসার মধ্যে
ফোকাস রাখাটাই পরীক্ষা
ডেন গার্ডেন্সে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমন এক সিরিজ খেলতে নামছে যেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই সচিন তেন্ডুলকর শো হয়ে থাকবে। সিরিজ চলাকালীন লোকে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলবে, ভারতের পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়া করা হবে, এই আলোচনাও বারবার উঠবে যে খেলাটা কী ভাবে সব অবস্থাতেই ব্যক্তির থেকে বড়। তা সত্ত্বেও সচিন-উন্মাদনাটা কোনও কিছুতেই থামবে না। এই সত্যিটাও কেউ বদলাতে পারবে না যে, সিরিজ জুড়ে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে সচিনের বিদায়।
সচিনকে একটা কথা আগেই বলেছিলাম যে, ও যখনই অবসর নিক, সিদ্ধান্তটা যেন আগাম ঘোষণা করে বিদায়ী সিরিজ খেলে। কারণ সেটাই ঠিক হবে। সচিনের মতো এত বড় মাপের ক্রিকেটারের জন্য উপযুক্ত বিদায়-মঞ্চ তৈরি করা যাবে। খেলাটায় যার এত অবদান, তার বিদায় রাজকীয়ই হওয়া উচিত। যেটা ইডেনে শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার মতে, সচিন কলকাতায় পা রাখার পর থেকে ওকে ঘিরে যে হইচই চলছে, সেটা ওর পুরো প্রাপ্য। আগামী দু’সপ্তাহ সচিন-স্তুতি চলবে। আর খুব ন্যায্য কারণেই।
ক্রিকেটের নন্দনকাননে সচিন
মেটাচ্ছেন দর্শকদের আবদার।
কলকাতা যে বাঁধভাঙা আবেগে সচিনকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সেটা দুর্দান্ত! মুম্বই সচিনের নিজের শহর। তাই মুম্বইয়ে ওকে নিয়ে আবেগের বিস্ফোরণটা খুব স্বাভাবিক। ঘরের নায়ককে তো প্রশংসা আর ভালবাসায় মুম্বইবাসী ভরিয়ে দেবেই। কিন্তু কলকাতাতেও সেই একই রকমের ভালবাসার বন্যা দেখে বোঝা যায় সচিন এতগুলো বছর ধরে ঠিক কত বড় মাপের জাতীয় আইকন হয়ে আছে!
একটা আন্তর্জাতিক চ্যানেলে সম্প্রতি সচিনের আগের দিকের কয়েকটা ইনিংস দেখছিলাম। ওকে তো খুব কাছ থেকে বহুবার খেলতে দেখেছি। অনেক বার নন স্ট্রাইকার এন্ড থেকেও। কিন্তু তা সত্ত্বেও টিভিতে আবার ওর ব্যাটিং দেখে নতুন করে বিস্মিত হলাম! সর্বোচ্চ মানের ওই ব্যাটসম্যানশিপ দেখতে দেখতে কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগে! কিন্তু সব ভাল জিনিসের মতোই সচিনের অসাধারণ কেরিয়ারেরও সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু তার পর যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটা ভরিয়ে তোলা ভীষণ, ভীষণ কঠিন। এই সব কিছুর মধ্যে দাঁড়িয়ে সচিনের জন্য আপাতত টেস্ট ম্যাচে ফোকাস করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আপনারা নিশ্চই দেখতে পাচ্ছেন, এর মধ্যেও ও কী ভাবে আশপাশের হইচই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। গত চব্বিশ বছর ধরে টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়ার যে রুটিনটা মেনে এসেছে, সেটাই ইডেনেও মেনে চলছে। যাতে ম্যাচের মধ্যে একশো শতাংশ ঢুকে পড়তে পারে। ওর জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হল সব কিছু ভুলে রিল্যাক্সড থাকা। সচিন জানে গোটা বিশ্ব ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এ বারের সেই তাকিয়ে থাকাটা একটু অন্য রকমের। আর এই জানাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে খোলা মনে খেলাই সচিনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে। ওকে আগামী পাঁচ দিন নিজের সমস্ত শক্তি শুধুই ক্রিকেটে চালিত করার একটা রাস্তা বের করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত প্রশংসাও মানুষকে ক্লান্ত করে দিতে পারে।
নিচ্ছেন অধিনায়কের ক্লাস।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার নজর থাকবে ইডেনের বাইশ গজের দিকে। এই পিচে এখনও পর্যন্ত একটাও বল খেলা হয়নি। পিচ ঠিক কী রকম আচরণ করবে, কেউ জানে না। অবশ্য সিএবি বা ইডেনের কিউরেটরকে দোষ দেওয়া যায় না। এ বছর বাংলায় অসম্ভব বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এমনকী বৃষ্টির জন্য নির্ধারিত রঞ্জি ম্যাচও ধুয়ে গিয়েছে। এমনিতে কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় নিজের কাজে প্রচণ্ড অভিজ্ঞ। তবু বলে দিতে পারি, উনিও এই সারফেসে প্রথম ডেলিভারি পড়ার আগে পর্যন্ত নার্ভাস হয়ে থাকবেন।
কাঁধের পেশিতে টান থাকায় রবীন্দ্র জাডেজা এই সিরিজে নেই। ভারতকে তাই চার বোলার নিয়ে নামতে হবে। দুই স্পিনার অশ্বিন আর ওঝা খেলবে। কিন্তু আসল লড়াই হবে পেসারদের জায়গা দু’টো কারা পাবে তা নিয়ে। উমেশ যাদব চোট সারিয়ে মাত্র একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ফিরেছে। ফলে ওকে নামানো নিয়ে সামান্য দুশ্চিন্তা থাকবে। তবে আসল প্রশ্ন হল, ফর্মে থাকা সামি আহমেদকে ওর ঘরের মাঠে ধোনি একটা সুযোগ দিতে পারে কি না।
গ্যালারিতে ক্রিকেট ঈশ্বরের অপেক্ষায় সেই পরিচিত ভক্ত।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত এক দিনের সিরিজে সামি ছিল ধোনির সেরা পেসার। নিজের গতি আর দক্ষতা দিয়ে সামি বুঝিয়ে দিয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখলে ভুল করবে। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সামির গতি অন্য কোনও পেসারের নেই। আগামী ১৫ মাসে বেশ কয়েকটা বিদেশ সফর রয়েছে ভারতের। সামি কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

ছবি: উৎপল সরকার ও শঙ্কর নাগ দাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.