সম্পাদকীয় ২...
নিয়ন্ত্রণই পথ
পিন্টু বিশ্বাস একটি নাম। শব্দ-শহিদের তালিকায় সপ্তম নাম। ১৯৯৭ সালে দীপককুমার দাসের মৃত্যুতে যে তালিকার সূচনা হইয়াছিল, পিন্টু বিশ্বাস সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। তিনিই শেষ, এমন আশা করিবার বিন্দুমাত্র কারণ পশ্চিমবঙ্গে নাই। তাঁহার পূর্বে যে ছয় জন শব্দবাজির প্রতিবাদ করিয়া নিহত হইয়াছিলেন, তাঁহাদের এক জনের আততায়ীরও শাস্তি হয় নাই। শাস্তি হইতে পারে, পুলিশ এমন মামলাই সাজাইতে পারে নাই। পুলিশের এই ব্যর্থতা যে সংকেত প্রেরণ করে, তাহা বুঝিতে শব্দ-দুষ্কৃতীদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। তাহারা জানে, মানুষ খুন করিয়াও পার পাওয়া যাইবে। তাহার সামাজিক, রাজনৈতিক কারণগুলি বহু আলোচিত। কিন্তু সেই কারণগুলিকে বাদ রাখিলেও, পুলিশের অপদার্থতা এক অ-পূর্ব মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে। কলিকাতায় শব্দবাজি ধরিতে গিয়া কতিপয় পুলিশকর্মী নিগৃহীত হইলেন। পরে আরও পুলিশ আসিয়া তাঁহাদের উদ্ধার করিয়া লইয়া গেল বটে, কিন্তু এই ক্ষেত্রেও অরপাধীরা ধরা পড়ে নাই, শাস্তি তো বহু পরের কথা। এমন তালপাতার সিপাইদের হাতেই যদি আইনরক্ষার ভার থাকে, আইন যে রক্ষিত হইবে না, তাহাতে আর আশ্চর্য কী?
শব্দবাজি বিভীষিকা। তাহাকে কঠোর ভাবে দমন করাই প্রশাসনের কর্তব্য। কিন্তু যে বাজিতে শব্দ নাই, কেবল আলো আছে, অর্থাৎ আপাতবিশ্বাসে যে বাজি ‘সামাজিক’, তাহাও কি নিরাপদ? যে দায়িত্বজ্ঞানহীন ভঙ্গিতে মানুষ বাজি ফাটান, তাহাতে দুর্ঘটনা না ঘটাই বিস্ময়ের। কোনও সভ্য শহরে মানুষের এমন যত্রতত্র বাজি ফাটাইবার অধিকার থাকিতে পারে না। শহরে একটি বা একাধিক স্থান চিহ্নিত করা দরকার— একমাত্র সেখানেই বাজি ফাটানো চলিবে। পৃথিবীর সব সভ্য শহরে তাহাই হয়। বস্তুত, কয়েক যুগ আগে ভারতেও তেমনই ঘটিত— সকলে জমায়েত হইয়া একটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই বাজি ফাটাইতেন। সেই অভ্যাস ফিরাইয়া না আনিবার কারণ নাই। নির্দিষ্ট স্থলে যদি সকলের জায়গা না হয়, তবে লটারির সাহায্য লইতে হইবে, অথবা ‘আগে আসিলে আগে পাইবেন’ ভিত্তিতে জায়গা বিক্রয় করিতে হইবে। যাঁহাদের জায়গা জুটিবে না, এক বৎসরের জন্য দুর্ভাগ্য মানিয়া লইতে হইবে। কিন্তু শহর জুড়িয়া যথেচ্ছ বাজি ফাটাইবার অভ্যাসটি বজায় রাখিতে দেওয়া যায় না। এই ব্যবস্থায় প্রশাসনের পক্ষেও নজরদারির কাজটি সহজ হইবে।
কিন্তু তাহাতেও যথেষ্ট হইবে কি? অর্থনীতির পরিভাষা ধার করিয়া বলিলে, বাজির ‘নেগেটিভ এক্সটার্নালিটি’ মারাত্মক। অর্থাৎ, যাঁহারা বাজি কিনিয়া তাহা জ্বালাইয়া আনন্দ করিতেছেন, তাঁহাদের আনন্দ হইতেছে বটে, কিন্তু তাঁহাদের কাজে সমাজের অন্য অনেকের প্রবল অসুবিধা হইতেছে। বাজির শব্দ, বিষাক্ত ধোঁয়া, আগুন, সবই অসুবিধার কারণ। বিপদেরও। বাজার ব্যবস্থায় সচরাচর এই ধরনের সমস্যার সমাধান নাই। কাজেই, বাজির ব্যবসায় লাগাম পরানো ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। এই কাজটি সরকারই করিতে পারে কি না, তাহা ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন। নিয়ম বাঁধিয়া দেওয়া যাইতে পারে, সরকারি বা সরকার অনুমোদিত বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও বাজি কেনাবেচা চলিবে না। কালোবাজারির চেষ্টা হইবে। হাজার হউক, দেশটির নাম ভারত। কিন্তু তাহা কঠোর ভাবে দমন করিতে হইবে। বাজি বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত হইলে অনাচারও ক্রমে কমিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.