|
|
|
|
ভুয়ো লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ কোর্টের |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বেসরকারি লগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যেই ‘কার খাট ব্যাঙ্ক’ (বাংলায়, এক সপ্তাহের ব্যাঙ্ক) মালিকদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করল আইজলের সিজেএম আদালত।
আদালতের যুক্তি, লগ্নির অবাস্তব প্রস্তাব জেনেও স্বেচ্ছায় স্বীকৃতিহীন সংস্থায় টাকা রেখেছেন সাধারণ মানুষ। সে ক্ষেত্রে আইন তাদের সুরক্ষা দিতে পারে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকাল ধরে মামলা চললে, বাজেয়াপ্ত টাকা লগ্নিকারীদের ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। সে কারণেই, এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন আইজলের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মিশেল লালরিনসাংগা। আদালতের নির্দেশে বাজেয়াপ্ত অর্থ রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়। সরকারই তা লগ্নিকারীদের ফেরতে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
আমানতকারীদের হয়ে আদালতে লড়াই শুরু করা হেলেনা লালসাওনকিমি অবশ্য হাল ছাড়েননি। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টের আইজল বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছিলেন। গতকাল হাইকোর্ট তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে।
২০০৭ সালে আইজলের সি লালমুয়ানপুইয়া ‘কার খাট ব্যাঙ্ক’ নামে স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্প চালু করেন। ১০০ টাকা জমা দিলে সপ্তাহ শেষে ১১০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সুদের লোভে ‘কার খাট ব্যাঙ্ক’-এর ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে মিজোরাম, কাছাড়ে। পুলিশের হিসেবে, মাত্র ছ’মাসের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার পর আচমকাই ওই ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থার কর্ণধার এবং তার শাগরেদরা ধরা পড়েন। জেল হয় সকলের। পরে জামিনও হয়ে যায়। কিন্তু, ভুয়ো লগ্নিকারী সংস্থা থেকে টাকা ফেরতের বিষয়ে আইন না-থাকায় আমানতকারীরা এখনও কোনও টাকা ফেরত পাননি।
মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “এ ধরণের সংস্থার কাছ থেকে টাকা আদায় করে আমানতকারীদের ফেরত দেওয়ার আইন নেই। বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগে মামলা করা যায়। নকল নথি দেখালেও নালিশ জানানো যেতে পারে। কিন্তু, ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে না-পারলে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যেতে পারেন।”
তবে কী টাকা পাওয়ার কোনও উপায় নেই?
বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, “নথিভুক্ত লগ্নি সংস্থা হলে কোম্পানি বিষয়ক আইনে মামলা করা যায়। সে ক্ষেত্রে সংস্থার নামে থাকা সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরতের উপায় থাকে। মিজোরামে অধিকাংশ লগ্নি সংস্থা নথিভুক্ত নয়। তাই ওই ধারায় মামলা করা যাবে না।”
আইজলের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা লগ্নি করতে কাউকে বাধ্য করেনি। লগ্নিকারীরা স্বেচ্ছায় বেশি টাকার লোভে টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁরা এ সংক্রান্ত প্রমাণপত্রও দেখাতে পারেননি। তা-ই প্রতারণার ধারা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। অভিযুক্তরা সরকারি বা অধিগৃহীত সংস্থা বা নথিভুক্ত সংস্থার কর্মচারী নন, তাই তাদের বিরুদ্ধে ৪০৯ ধারাও ব্যবহার করা যায় না। অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ফৌজদারি মামলা প্রয়োগের আর্জির প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, “অভিযুক্তরা লগ্নিকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ হারে সুদ দিয়েছে। টাকা আদায়ের জন্য কাউকে ভয়ও দেখানো হয়নি। তা-ই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করা যায় না। পুলিশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। সে কারণে সমস্ত মামলা থেকে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়া হল।” এখনও পর্যন্ত ওই সব ভুয়ো আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে উদ্ধার ১১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৮৯ টাকা লগ্নিকারীদের ফেরত দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, কে, কত টাকা দিয়েছেন সে সবের নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কোনও লেনদেনই নিয়ম মেনে হয়নি।
সিজেএম আদালতের রায় জেনেই, আমানতকারীদের হয়ে লড়াই চালানো মানবাধিকার কর্মী হেলেনা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গতকাল আইজল বেঞ্চের বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞা, মিজোরামের ডিজি এবং মুখ্য সচিবকে নোটিস পাঠিয়েছেন। ২ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে। সিজেএম আদালতের রায় এবং মিজোরামের ‘প্রোটেকশন অফ ইনটারেস্ট অফ ডিপোজিটরস্ ফিনানসিয়াল এসট্যাবলিসমেন্ট অ্যাক্ট’-এর প্রতিলিপিও চেয়ে
পাঠানো হয়েছে।
বিচারপতি ভুঁইঞা বলেন, “আমানতকারীদের দাবি সঠিক। প্রয়োজনে তাঁদের সবাইকে আদালতে ডেকে পাঠানো হবে।”
|
|
|
|
|
|