মশা মারতে কামান দাগা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে শহরবাসীর। এ বার পাখি তাড়াতেও দেখা মিলবে কামানের। মশা মারার কামান থেকে ধোঁয়া বার হয়। কিন্তু এই কামান থেকে বার হবে শব্দ। ‘দুম দুম’ সেই আওয়াজ শুনে ধারেকাছে ঘেঁষবে না পাখি।
কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে বসছে এই স্বয়ংক্রিয় বন্দুক বা ‘জোন-গান’। তা থেকে অবশ্য গুলি বেরোবে না। ফলে পাখি মরবে না, শুধু ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। ৪০ সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিট, যে কোনও সময় অন্তরই ওই আওয়াজ হতে পারে। আপাতত এক মিনিট অন্তর অন্তর আওয়াজ হবে বলে ঠিক হয়েছে। মেশিনের সঙ্গে লাগানো থাকবে গ্যাস সিলিন্ডার। জানা গিয়েছে, ১০ কিলোগ্রাম গ্যাসে ১৭ হাজার বার ‘দুম’ করে আওয়াজ হবে। এক একটি আওয়াজের মাত্রা ১০০ থেকে ১২০ ডেসিব্লের মধ্যে।
|
জোন-গান। |
এর অর্থ, বন্দুক হাতে বা পটকা ফাটিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশ থেকে পাখি তাড়ানোর দিন শেষ। তবে এর জন্য জনা ২৫ পাখি-তাড়ুয়ার চাকরি অবশ্য যাচ্ছে না। বিমানবন্দরের ভিতরে ও বাইরে খাবারের সন্ধানে ভিড় করে পাখিরা। প্রধানত আসে বাজ, চিল জাতীয় বড় পাখি। তাদের তাড়াতেই পাখি-তাড়ুয়াদের ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাঁরা বিভিন্ন শিফটে সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রানওয়ের পাশের ঝোপে লুকিয়ে থেকে পটকা ফাটিয়ে পাখি তাড়াতেন। বন্দুকের ব্যবহার অবশ্য বেশ কিছুদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “এত বড় এলাকা। ওঁদেরও কাজে লাগবে। তবে মেশিন বসিয়ে ভাল ফল আশা করছি।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, পাঁচটি ‘জোন-গান’ ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে কলকাতার রানওয়ের পাশে। তা ছাড়া এমন চারটি মেশিন বসেছে যা থেকে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ বেরোবে। ‘বার্ড-এক্সপেলার’ নামের এই যন্ত্র থেকে বার হওয়া নিজেদের আওয়াজ শুনে পাখির দল ভয় পেয়ে এবং বিভ্রান্ত হয়ে ৪০০ মিটার এলাকার মধ্যে আসবে না বলেও মনে করছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। থাকছে লেজার টর্চ এবং পিস্তল। পক্ষী বিশারদ বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরীর কথায়, “এর কোনওটাতেই পাখির ক্ষতি হবে না। শুধু ভয়ে রানওয়ের ধারেকাছে আসবে না পাখির দল।”
বিমান প্রচণ্ড গতিতে নামা-ওঠার সময়ে রানওয়ের আশপাশে পাখি থাকলে তার সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে পাখির। সে ক্ষেত্রে পাখিটির নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বড়সড় ক্ষতি হয় বিমানেরও। ইঞ্জিনের মধ্যে পাখি ঢুকলে আকাশে সমস্যায় পড়তে পারেন যাত্রীরাও। এমন ঘটনা কলকাতায় নতুন নয়। রানওয়ে
থেকে উঠেই পাখির ধাক্কায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়ে আবার বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে বিমানএমন ঘটনাও ভুরিভুরি রয়েছে। সম্প্রতি এ রকম ঘটনার সংখ্যা কমলেও তা বন্ধ হয়নি।
মেশিন বসার পরেই কাজ চলে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন পাখি-তাড়ুয়ারা। ১ নভেম্বর থেকে তাঁদের বিমানবন্দরে ঢোকার পরিচয়পত্র দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পাকা চাকরি নয়, এঁরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। এক পাখি-তাড়ুয়ার কথায়, “আমি ২০ বছরের বেশি এই কাজ করছি। এখন আচমকা কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তো সমস্যায় পড়ব।” সোমবারই এ নিয়ে বিমানবন্দর অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করেন ইউনিয়নের কর্তারা। কর্মী-ইউনিয়নের নেতা রামকৃষ্ণ বক্সীর কথায়, “যে মেশিনগুলি বসেছে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও চালানোর জন্যও তো লোকের প্রয়োজন। আমরা তাই ওঁদের পুনর্বহালের জন্য অনুরোধ করেছিলাম।” অধিকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদেরও কাজে লাগানো হবে। |