জেলে যুবকের মৃত্যু, তুলকালাম এন্টালিতে
বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকা এক যুবকের জেলে মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল এন্টালি থানা এলাকার মালিপাড়া অঞ্চল। জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে জখম হলেন এক পুলিশকর্মী। মহিলাদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের হাতে প্রহৃত হলেন স্থানীয় এক আইনজীবীও।
পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম অভিজিত্‌ পাত্র (২২)। বাড়ি মালিপাড়ায়। এলাকায় ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধে
অভিজিত্‌ পাত্র।
যুক্ত থাকার অভিযোগে গত ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় তাকে। ২২ অক্টোবর আদালত অভিজিত্‌কে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলে তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ নভেম্বর হঠাত্‌ বুকে ব্যথা হওয়ায় অভিজিত্‌কে জেলের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। এর পরে সোমবার পর্যন্ত দফায় দফায় তাকে চিকিত্‌সার জন্য এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। গত সোমবার রাতে অভিজিত্‌কে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে শয্যা খালি না-থাকায় তাকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। অভিযোগ, শম্ভুনাথে না নিয়ে গিয়ে অভিজিত্‌কে জেলেই ফেরত নিয়ে আসেন কর্তব্যরত দুই জেলরক্ষী। মঙ্গলবার ভোরে জেল হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ এই খবর মালিপাড়ায় আসার পরেই অশান্তি শুরু হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে অভিজিত্‌কে এবং এতে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। এর পরেই বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক ও আইনজীবী দেবব্রত সরকারের বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায় ও ভাঙচুর করে। মারধর করা হয় তৃণমূলকর্মী দীপঙ্কর পাল ও স্থানীয় যুব তৃণমূলের সভাপতি কিশোর দাসকেও। খবর পেয়ে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যেতেই তাদের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। আহত হন কনস্টেবল ইন্তিকার খান।
স্থানীয় ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের দীপালি দাসের অবশ্য দাবি, “কোনও সমাজবিরোধীই আমাদের আশ্রয়ে থাকতে পারে না। বিক্ষোভকারীরা কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে।”
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, পুলিশ এসেই বেপরোয়া ভাবে লাঠি চালাতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দা রুনু কয়াল বলেন, “কোনও মহিলা পুলিশ ছিলেন না। পুরুষ পুলিশকর্মীরাই ঘরে ঢুকে মহিলাদের হেনস্থা করেন। অভিজিতের বাবাকেও মারধর করা হয়।” মৃত যুবকের মা ঝরনা পাত্র জানান, অভিজিতের স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে। ওই যুবকের রোজগারেই চলত পরিবার। ঝরনাদেবীর অভিযোগ, “জেলের মধ্যেই আমার ছেলে মারা গিয়েছে। ওর স্ত্রী ও সন্তানের ভার সরকারকে নিতে হবে। এই ঘটনায় যারা দায়ী, তাদেরও উপযুক্ত শাস্তি চাই।” তাঁর অভিযোগ, “অভিজিত্‌কে কেন মারা হল, স্থানীয় বাসিন্দারা তৃণমূল নেতাদের কাছে তা জানতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওঁরা উল্টে পুলিশ ডেকে মার খাইয়েছেন।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, “জেল হেফাজতেই অভিজিত্‌ পাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে। মহিলাদের মারধরের বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”
কারা দফতর সূত্রে খবর, জেল হেফাজতে মৃত্যু হওয়ায় নিয়মমতো বিষয়টির বিচারবিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। পাশাপাশি, জেল-কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জেলের এক কর্তা বলেন, “শম্ভুনাথে নিতে বলা সত্ত্বেও নেওয়া হয়নি। তাই প্রাথমিক ভাবে একটা গাফিলতি তো রয়েইছে। এ জন্য কারা দায়ী, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.