এক দিনও কাটেনি, ফের বিপত্তি এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমানে। গত কাল রাতে লন্ডন থেকে দিল্লি আসছিল এআই ১১৬ বিমানটি। মাঝআকাশে হঠাৎই বেজে ওঠে বিপদঘণ্টা। বিলাসবহুল ওই বিমানের ব্রেকে সমস্যা দেখা দেওয়ায় আর ঝুঁকি নেননি চালক। দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের জন্য যোগাযোগ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই রানওয়ের মাটি ছোঁয় ড্রিমলাইনারটি। এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপদে আছেন বিমানের ১৭৪ জন যাত্রী ও ১০ কর্মী। দিল্লি বিমানবন্দর সূত্রে খবর, রাত ২টো ২২ মিনিটে আঠাশ নম্বর রানওয়েতে জরুরি অবতরণ করে বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি।
এই বিপত্তির কয়েক ঘণ্টা আগে মেলবোর্নে নামার সময় উইন্ডশিল্ডে (সামনের দিকের কাচে) চিড় ধরে যায় এয়ার ইন্ডিয়ারই আর একটা ড্রিমলাইনারে। তড়িঘড়ি তা সারাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কালকেই ফিরতি উড়ানটি দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থা। বিপত্তি অবশ্য এই প্রথম নয়, দু’সপ্তাহ আগেই বেঙ্গালুরুতে মাঝআকাশে খসে পড়েছিল ড্রিমলাইনারের পেটের একটা অংশ।
এত অত্যাধুনিক বিমানে কী ভাবে এত সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। বোয়িংয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। তবে ড্রিমলাইনারে যা গোলমাল দেখা দিয়েছে, তার কোনওটাই বড় সমস্যা নয়। একই মত এয়ার ইন্ডিয়ার এক শীর্ষ কর্তারও। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি জানান, নতুন বিমান চালু হলে এ রকম ছোটখাটো সমস্যা লেগেই থাকে। হাওয়ার চাপ বা পাখির ধাক্কায় যে কোনও বিমানেরই সামনের দিকের কাচ ভাঙতে পারে। যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্নে কিন্তু কোনও রকম আপস করা হচ্ছে না।
ভারতে ড্রিমলাইনারের স্বপ্নের উড়ান চালু হয়েছে মোটে এক বছর আগে। গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের আকাশে ড্রিমলাইনার চালু করে এয়ার ইন্ডিয়া। কম তেল খরচ করে যাতে বহু দূরের রাস্তা পাড়ি দেওয়া যায়, সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ বিমান। গোড়ায় এয়ার ইন্ডিয়া দু’টো ড্রিমলাইনার চালু করলেও পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচে। কিন্তু এক মাস কাটতে না কাটতেই শুরু হয় সমস্যা।
এয়ার ইন্ডিয়ার নয়, তবে জাপানি এক সংস্থার দুটি ড্রিমলাইনারের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যায়। ব্যাটারি সাত-তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগ জমা পড়ার পর নভেম্বরে সমস্ত ড্রিমলাইনারের উড়ান বন্ধ করে দেয় বিমানটির প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িং। জানুয়ারিতে নতুন করে এই স্বপ্নের উড়ান চালু হলেও সমস্যা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, নতুন ধরনের বিমান এয়ারবাস ৩২০ যখন চালু হয়েছিল তখনও ঠিক এমনটাই হত। নতুন কোনও বিমান চালু হলে চালক-ইঞ্জিনিয়ার সকলেরই মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তা ছাড়া প্রতিবারই কোনও না কোনও নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে চালকেরাও বেশিরভাগ সময় ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
ব্রেকে সমস্যার দেখা দেওয়ার আতঙ্কে কাল যে বিমানটি জরুরি অবতরণ করে, পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেখানে কোনও সমস্যাই নেই। অনুমান করা হচ্ছে, ইলেকট্রনিক প্যানেলের গণ্ডগোলেই বেজে উঠেছিল বিপদঘণ্টা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আজই আবার বিমানটি দুবাই উড়ে গিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি, বড় ধরনের গণ্ডগোল যে ছিল না এটাই তার প্রমাণ।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক এয়ার ইন্ডিয়ার এক অভিজ্ঞ বিমানচালকও জানিয়েছেন, নতুন এই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সবই অন্য রকম। তবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই।
নিত্যদিন নতুন সমস্যার পরও ড্রিমলাইনারের উপর থেকে ভরসা হারাচ্ছে না এয়ার ইন্ডিয়া। বরং আগামী দু’বছরের মধ্যে আরও আঠারোটি ড্রিমলাইনার তাদের হাতে পৌঁছবে। স্বপ্নের উড়ান তাই থামছে না এখনই। |