সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে জায়গা দখল ভিড় ট্রেনে
কাল ৬টা ২০। কাটোয়া-হাওড়া লোকালে অগ্রদ্বীপ থেকে উঠেছিলেন এক বৃদ্ধা ও তাঁর সদ্য বিধবা মেয়ে। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে যাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধা। কিন্তু ট্রেন নবদ্বীপ ছাড়ানোর পর থেকেই নিত্যযাত্রীদের ‘অত্যাচারে’ তাঁরা ট্রেন থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। প্রতিদিনই নিত্যযাত্রীদের বিরুদ্ধে এমন হাজারো অভিযোগ তোলেন অন্য যাত্রীরা। কাটোয়া থেকে হাওড়া ১৪৪ কিলোমিটার রাস্তা ট্রেনে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা চারেক। কাটোয়া-ব্যান্ডেল শাখার বেশিরভাগ যাত্রীরই ভরসা সকালের দিকের চারটে লোকাল ট্রেন। বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এই ট্রেন রুটে যাতায়াত করেন। ফলে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু ভিড়েও নিত্যযাত্রীরা নির্দিষ্ট কামরায় উঠে পড়েন এবং বসার জায়গা পেতেও তাঁদের বিশেষ বেগ পেতে হয় না বলে অন্যান্য যাত্রীদের দাবি। কিন্তু ভিড় ট্রেনেও নিত্যযাত্রীরা তাঁদের আসন দখল করেন কীভাবে? ভুক্তভোগীদের দাবি, নিত্যযাত্রীরা বিভিন্ন স্টেশন থেকে উঠলেও ট্রেনে তাঁরা একজোট।
ভিড়ে ঠাসা কাটোয়া স্টেশন।—নিজস্ব চিত্র।
প্রথমেই দু’দিকের আসনের মাঝে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। তারপরে শুরু হয় যাত্রীদের লক্ষ্য করে নানারকম মন্তব্য ও কটুক্তি। এতে বাধ্য হয়ে অনেকেই জায়গা ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়েন। আর এরপরেও যাঁরা বসে থাকেন, তাঁদের জন্যও রয়েছে নানা টোটকা। কাটোয়া শহরের অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, “গরমকাল। জানালার ধারে বসে আছি। অন্য নিত্যযাত্রীরাও রয়েছেন। ট্রেন নবদ্বীপ ছাড়ানোর পরে একদল নিত্যযাত্রী উঠলেন। তারপরেই শুরু হল কটুক্তি। তারপরেও আসন ছাড়ছি না দেখে জল খাওয়ার নামে গায়ের উপর জল ফেলা, মুখের সামনে ঢেঁকুর তোলা শুরু হল। বাধ্য হয়ে জিরাট স্টেশনে জায়গা ছেড়ে দিলাম।” তাঁর আরও অভিযোগ, সাধারণ যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গা না থাকলেও ট্রেনের মধ্যে গামছা বা টাওয়েল বিছিয়ে তাস খেলাও নিত্যযাত্রীদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ নিয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি বাধে বলেও জানা গিয়েছে। জিআরপি-র ব্যান্ডেল থানার এক প্রাক্তন ওসি জানান, কাটোয়া-হাওড়া লোকালে নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের গোলমালের কথা শোনা যায়। তবে কোনও পক্ষই থানা পর্যন্ত আসেন না।
শুধু পুরুষেরা নয়, নিত্যযাত্রীদের হাত থেকে রেহাই পান না মহিলারাও। কাটোয়ার প্রান্তিকপাড়ার বাসিন্দা, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুকল্যাণ স্বর্ণকারের দাবি, “কিছু দিন আগে অফিসবাবু হয়ে ট্রেনে উঠলেন জনাকয়েক যুবক। জানালার দখল পেলেও জায়গা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। কিছুক্ষণ যেতেই ভিড় ট্রেনেই সিগারেট ধরালেন। তারপর শুরু হল ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিযোগিতা। ফলে উঠে যেতে বাধ্য হলেন ওখানে বসে থাকা দুই মহিলা। এই কায়দাতেই গুপ্তিপাড়ায় নেমে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে। নিত্যযাত্রীদের জোর চলে মহিলা কামরাতেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালনা মহকুমা প্রশাসনের এক মহিলা কর্মীর অভিযোগ, এই লাইনে মহিলা নিত্যযাত্রীদের একটা বড় অংশ শিক্ষিকা। জায়গা পাওয়ার জন্য তাঁরা যা করেন চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
কিন্তু যাত্রীদের এত অভাব অভিযোগ নিয়ে কী বলছে যাত্রী সমিতি? বিবি লুপ নিত্যযাত্রী সমিতির সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায় পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর যুক্তি, “কোনও কোনও সময় এ ধরণের বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়। সমিতির সভায় এ নিয়ে আলোচনাও হয়।” ট্রেনও চলবে, চলবে আলোচনাও। এখন সাধারণ যাত্রীদের চলার পথে স্বস্তি মেলে কিনা সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.