সরকার দর নির্দিষ্ট করে দিলেও জেলার কিছু বাজারে বেশি দরে আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলবারও। আলুর চাহিদার কথা জানিয়ে প্রশাসনের চালু করা হেল্পলাইনে এ দিন ফোন করেন জেলার বহু মানুষ। তবে খুচরো ব্যবসায়ীরা আলুর জোগানের অভাবের কথা দাবি করলেও তা মানতে চায়নি কৃষি বিপণন দফতর।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হেল্পলাইন খোলার কথা জানতে পেরে অসংখ্য মানুষ ফোন করেছেন সেখানে। হেল্প লাইনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় আলু পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক প্রিয়দর্শী সেন মঙ্গলবার বলেন, “এ দিন দুর্গাপুর মহকুমায় ৫০০ কুইন্ট্যাল ও আসানসোল মহকুমায় ৬০০ কুইন্ট্যাল আলু পাঠানো হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আগামী কাল থেকে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। কেউ আলু না পেলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে প্রয়োজনের কথা জানাতে বলা হয়েছে। তাহলেই প্রশাসন তাঁর জন্য আলুর ব্যবস্থা করবে।” |
এ দিন পর্যন্ত দুর্গাপুর শহরে সরকারি উদ্যোগে আলু বিক্রি নজরে পড়েনি। মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, আজ, বুধবার আলু সরকারি ভাবে বিক্রি করা হবে। আসানসোলে মঙ্গলবার শিবির করে আলু বিক্রি হলেও তার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
জেলা কৃষি বিপণন দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গত ৩ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার প্রায় একশো হিমঘর থেকে ৮.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বেরিয়েছে। মজুত রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৭২ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন। মঙ্গলবার দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গিয়েছে, জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৭ টাকা কেজি দরে। আলুর জোগানে ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি খুচরো ব্যবসায়ীদের। কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিকের পাল্টা দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই এই অভাব থাকার কথা নয়। তাঁর অভিযোগ, পুজোর আগে পর্যন্ত এ বছর আলুর দাম টানা এক জায়গায় থেমে ছিল। উত্সব মরসুমের সুযোগ নিয়ে লাভের পরিমাণ হঠাত্ বাড়িয়ে নিতে মজুতদারেরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে তাঁর অভিযোগ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার আলু ব্যবসায়ী, হিমঘর মালিক ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। বৈঠকে ঠিক হয়, কোন হিমঘর থেকে কত আলু বেরোচ্ছে তা নথিবদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া পুলিশ কড়া নজর রাখবে, যাতে অন্য রাজ্যে আলু চলে না যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে দুর্গাপুর মহকুমার কাঁকসা, অন্ডালের বিভিন্ন জায়গায় সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে।
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, সাড়ে ন’শো কেজি আলু গলসির একটি হিমঘর থেকে এনে আজ বুধবার আসানসোল বাজারে বিক্রির উদ্যোগ হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, সোম ও মঙ্গলবার বাজারে আলুর জোগান কম ছিল। আজ বুধবার থেকে তা কেটে যাবে বলে আশ্বাস তাঁর। কমিশনারেটের ডিসিপি (সদর) শীষরাম ঝাঁঝারিয়া বলেন, “সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার আসানসোল ও দুর্গাপুর, দুই মহকুমার বিভিন্ন বাজারে পুলিশ নজরদারি চালিয়েছে।”
এ দিন আসানসোল মূল বাজারে একটি শিবির করা হয়েছিল মহকুমা প্রশাসনের তরফে। সেখান থেকে আলু বিক্রি হয়। তবে এই আলু নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। কারণ আলুর মান খারাপ থাকায় অনেক ক্রেতা ১৩ টাকা কেজি দরে আলু নিতে অস্বীকার করেন। মহকুমাশাসক জানান, কোথাও কোথাও এই ধরনের সমস্যার খবর মিলেছে। বুধবার থেকে তা কড়া হাতে দমন করা হবে। বরাকর স্টেশন রোডে একটি আলুর আড়তে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মহকুমাশাসক জানান, আর যেন এমন ঘটনা না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রতি বাজারে বুধবার থেকে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে। |