নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
সচিন ব্যাকফুটে যেমন স্বচ্ছন্দ, তিনি তেমনটাই ব্যাক গিয়ারে।
১৯৯তম টেস্ট খেলতে আজ, বুধবার ইডেনে নামছেন সচিন তেন্ডুলকর। তার আগের দিন দুর্গাপুর থেকে ১৯৯ কিলোমিটার ব্যাক গিয়ারে গাড়ি চালিয়ে কলকাতায় পৌঁছলেন ইস্পাতনগরীর ‘এ-জোন’ এলাকার বাসিন্দা সুনীতকুমার চক্রবর্তী। দুর্গাপুর শহরে ‘ব্যাক গিয়ার সুনীত’ নামেই পরিচিত তিনি। কারণ, সে ভাবেই লম্বা রাস্তা দিব্যি গাড়ি চালাতে পারেন তিনি। বেশ কয়েক বার সে ভাবে লম্বা রাস্তা পাড়িও দিয়েছেন।
|
২০০৬ সালে সচিনের সঙ্গে দেখা করেন সুনীতবাবু। |
সুনীতবাবু জানান, ১৯৯৮ সালে প্রথম এ ভাবে গাড়ি চালানো শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বেরিয়ে পড়েন বর্ধমানের উদ্দেশে। যাত্রার সূচনা করেন তত্কালীন বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের বছর কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে বর্ধমান। পতাকা নেড়ে যাত্রার সূচনা করেন কলকাতার তত্কালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর শান্তিনিকেতন থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত যাত্রার সূচনা করেন তত্কালীন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ তিনি কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে ২০১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যান ওয়াঘা সীমান্তে। যাত্রার উদ্বোধন করেন তত্কালীন রাজ্যের ক্রীড়া যুবকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়ের শুভেচ্ছা জানাতে ২৩৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছন মুম্বইয়ের বান্দ্রায় সচিনের বাড়িতে। সচিন বাড়িতে ছিলেন না। তবে তার আগে ২০০৬ সালেই কলকাতায় খেলতে এসে সুনীতবাবুর গাড়িতে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন সচিন।
সচিন তাঁর ১৯৯তম টেস্ট কলকাতায় খেলবেন, এ কথা ঘোষণা হতেই সচিনকে শুভেচ্ছা জানানোর বিশেষ ভাবনা মাথায় আসে সুনীতবাবুর। ঠিক করেন, দুর্গাপুর থেকে কলকাতা প্রায় ১৯৯ কিলোমিটার রাস্তা তিনি ব্যাক গিয়ারে চালিয়ে যাবেন। সে কথা জানিয়ে সিএবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সুনীতবাবু জানান, তাঁর এক পরিচিতের মাধ্যমে এই খবর শুনে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সুনীতবাবু যাত্রা শুরু করেন দুর্গাপুর থেকে। সূচনা করেন আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় যে হোটেলে ভারতীয় দল রয়েছে, সেখানে পৌঁছন তিনি। বিকেলে ফোনে সুনীতবাবু বলেন, “সিএবি-র মাধ্যমে সচিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সময় পেলেই তিনি দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন।”
|
মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুর থেকে কলকাতার রওনা হওয়ার সময়ে। |
গাড়ি চালানো শেখানো তাঁর পেশা। শিক্ষার্থীদের বলেন, “একাগ্রতা, সচেতনতা আর মাথা ঠান্ডা রাখলেই দুর্ঘটনার ভয় নেই।” স্টিয়ারিংয়ে বসে ঘাড় পিছনের দিকে ঘুরিয়ে ব্যাক গিয়ারে গাড়ি চালান সুনীতবাবু। তিনি বলেন, “উল্টো দিকে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছি না। সেখানে সোজা চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে কী করে? এই বার্তাই দিতে চাই সবাইকে।”
ব্যাক গিয়ারে চালাতে গিয়ে গাড়ির গিয়ার বক্সে সামান্য রদবদল করতে হয়েছে বলে জানান সুনীতবাবু। বরাবর তিনি একটি বিশেষ সংস্থার গাড়ি চড়ে সফর করেছেন। সেই সংস্থার দুর্গাপুরের শো-রুমের সিইও অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুনীতবাবু আমাদের সংস্থার গাড়ির উপরে ভরসা রাখায় আমরা খুশি।” ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র দুর্গাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সমীর বসু বলেন, “ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এটা করে থাকেন। মোটর স্পোর্টস হিসেবে আমরা উত্সাহ দিয়ে থাকি।” |