জোটের পুরসভায় শরিকদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগে থেকেই। জোট ভেঙে কেউ বেরিয়ে না এলেও উপ-নির্বাচনে জোট গড়ে লড়ার প্রশ্নেই যায়নি তারা। আসানসোল ও কুলটি পুরসভায় ক্ষমতাসীন দুই দল কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে এই তাল ঠোকাঠুকিতে লাভের আশা দেখছে বামফ্রন্ট।
আগামী ২২ নভেম্বর রাজ্যের নানা পুরসভার সঙ্গে ভোট হবে আসানসোলের তিনটি ও কুলটির একটি ওয়ার্ডে। দুই পুরসভাতেই ক্ষমতায় কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট। কিন্তু ওই চার ওয়ার্ডের জন্য দু’পক্ষই প্রার্থী দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচারেও নেমে পড়েছে তারা।
এক সঙ্গে বোর্ড গঠন করলেও আসানসোলে দু’দলের মধ্যে বছরখানেক আগে থেকেই বিবাদ বেধেছে। মাস দুয়েক আগে তা প্রকাশ্যে চলে আসে। কংগ্রেসের মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) গোলাম সরওয়ারকে নিয়ম বহির্ভূত কাজের অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেন তৃণমূলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে অবস্থান-বিক্ষোভ করে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য দাবি করেন, কেন মেয়র পারিষদকে সরানো হল, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে ও মেয়রকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মেয়র অবশ্য কংগ্রেসের আবেদনে সাড়া দেননি। সে নিয়ে এখনও বিবাদ চলছে। এরই মধ্যে এসে পড়েছে পুরসভার উপ-নির্বাচন। সেখানে কেউ কাউকে জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। সামনের বছর এই দুই পুরসভাতেই ভোট রয়েছে। তখন জোটের ভবিষ্যত কী হবে, উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষের পরেই সে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
এই চার ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন মনোজ পাণ্ডে। তিনি বলেন, “প্রদেশের সিদ্ধান্ত মতো আমরা সব আসনে প্রার্থী দিয়েছি।” এর হলে জোটের অস্তিত্ব সঙ্কট হবে কি না, সে নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে দলের অন্যতম প্রদেশ সম্পাদক আকাশ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “জোট এখন খাতায়-কলমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের কোনও সম্মান রাখছেন না তৃণমূলের কাউন্সিলররা। এ ভাবে জোটধর্ম বজায় থাকে না।” তাঁর আরও দাবি, মেয়র একতরফা নানা কংগ্রেস বিরোধী পদক্ষেপ করছেন। তিনি বলেন, “এর থেকে মুখোমুখি লড়াই করা অনেক সম্মানের।” আসানসোল পুরসভায় কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম বলেন, “এই উপ-নির্বাচনে ভোটারদের সামনে আমরা তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরব। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজে তৃণমূলের বৈষম্যকেও আমরা হাতিয়ার করব।”
কংগ্রেস নেতাদের এ সব বক্তব্য নিয়ে অবশ্য হেলদোল নেই তৃণমূলের। দলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “কংগ্রেস কী বলল, তাতে কিছু যায়-আসে না। গত চার বছর আমাদের কাজ দেখছেন শহরবাসী। তাঁরাই আমাদের জেতাবেন।” ক্ষমতাসীন জোটে থেকে জোটশরিকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কুত্সা করলে ভোটারেরা কংগ্রেসকেই বর্জন করবেন বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেসকে ছাড়াই আমরা বোর্ড চালিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের ছাড়া ওদের চলবে না। তবু জোটে থেকে আমাদের বিরোধিতায় নেমেছে।”
কংগ্রেস ও তৃণমূলের এই কাজিয়ায় দৃশ্যতই খুশি বামফ্রন্ট। আসানসোলের যে তিনটি ওয়ার্ডে নির্বাচন হচ্ছে, গত বার তার দু’টিতে জিতেছিলেন আরএসপি প্রার্থী। অন্যটিতে অল্প ব্যবধানে হারে সিপিএম। কুলটির আসনটিও গত বার জিতেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত চার বছর এলাকাবাসী জোট পরিচালিত বোর্ডের কাজ দেখেছেন। পরিস্থিতি এমন যে, প্রকাশ্যে বিবাদ শুরু করেছে দুই জোট শরিক। শহরবাসী এ সব দেখে ভেবেচিন্তেই ভোট দেবেন।” তাঁদের ধারণা, গত বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হওয়ায় বামফ্রন্টের পক্ষে লড়াই কঠিন হয়েছিল। এ বার তা না হওয়ায় খানিকটা সুবিধার আশা দেখছেন তাঁরা।
তাল ঠুকছেন সবাই। কী ভাবছেন পুরবাসী, বলবে ২২ নভেম্বরের ভোটবাক্স। |