কোনও পুরুষের জন্য শিরা কাটিনি

এক সময় একচেটিয়া সিরিয়াল করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে কি সিরিয়াল করাটাকে বাতিল করে দিলেন?
(হাসি) আপাতত কোনও সিরিয়ালেই কাজ করছি না। নিউ এজ সিনেমায় লম্বা ইনিংস খেলাটাই আমার লক্ষ্য।

দ্বিতীয় ইনিংসে এগোনোর প্রথম ধাপটা কি ‘নায়িকা সংবাদ’ ছিল?
খানিকটা তাই। মেগাসিরিয়াল করার সময় সিনেমার অফার আসত। কিন্তু করতে পারিনি। ফিরলাম বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নায়িকা সংবাদ’ দিয়ে। বলা যায়, এটা বড় ইনিংসের জন্য আমার একটা স্টেপিং স্টোন।

আপনার দাদু প্রচুর বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করেছেন...
আমার দাদু অজয় বসু। ‘শঙ্খবেলা,’ ‘বিলম্বিত লয়’, ‘রাজবধূ’, ‘পূজারিনী’র মতো বহু বাংলা ছবি প্রযোজনা করেছেন। কিন্তু যখন শুনলেন আমি অভিনয় করব তখন বললেন, ‘এটা ঠিক করলে না। দেখি কত দূর যাও।’ তখন আমার মাত্র ষোলো বছর বয়স। দাদা (দাদুকে আমরা দাদা বলি) হয়তো ভেবেছিলেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গেলে স্মার্ট আর ফাইটার হতে হবে। দাদু ভেবেছিলেন যে এই ‘আদুরে’ নাতনি ফাইট করতে পারবে না।

সিরিয়ালের জগতে তো ফাইট করেই বেশ দাপটে কাজ করেছেন। হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে দিলেন কেন?
আমি সব সময় চেয়েছিলাম অভিনেত্রী হতে। ভাল রোল করতে। দু’বছর অভিনয়ের জন্য ব্যাক টু ব্যাক আনন্দলোক পুরস্কারও পেয়েছিলাম। আমার ক্ষেত্রে একটা স্যাচুরেশন চলে এসেছিল। আমাকে টাইপকাস্ট করে দেওয়া হয়েছিল বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া মেয়ের রোলে। তখনকার দিনে নতুন নতুন রট আয়রনের সোফা ব্যবহার করা হত বাংলা টেলিভিশনের সেটে। আর সেই সরু সরু হাতলওয়ালা রট আয়রনের সোফাতে বসে আমাকে আমার স্ক্রিন-বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ন্যাকামি করে বলতে হত, ‘বাপি বাপি আমার অমুকটা চাই।’ দিন যত এগোত সেই রট আয়রনের হাতলগুলো সরু থেকে মোটা হল ঠিকই কিন্তু আমার রোলগুলো একই রকম রয়ে গেল। শেষের দিকে কোনও পরিচালক আমার কাছে এসে যদি বলতেন, ‘একটা রোল আছে। একদম আপনার জন্য ভেবেই লেখা।’ আমি বলতাম বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া মেয়ে কি? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসত, একদম তাই। আর আমি বলতাম, না, একদম করতে চাই না। অন্য কেউ হলে বলতেন ডেট নেই। আমি বলেই দিতাম ইন্টারেস্টেড নই।

এটা কি ঠিক পরিচালক পার্থ সেনের সঙ্গে আপনার পরিবারের একটা গণ্ডগোল চলছে?
প্রথম দিকে পার্থ সেনের সঙ্গে আমি অনেক কাজ করেছি। তার পর আই মুভড অন। উনি আমাদের একটা প্রোডাকশনে সিনেমা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। এত বছর পরেও সেটার হিসেব দিতে পারেননি। সেটা নিয়েই একটা ঝামেলা রয়েছে।

কেউ কেউ তো বলেন আপনি সাফল্য হ্যান্ডেল করতে পারেননি ঠিকমতো। এমনটাও শোনা যায় যে আপনি নাকি বারোটায় সেটে গিয়ে দুপুর দু’টোর মধ্যে বলতেন প্যাক আপ...
এই রকম তো কখনও হয়নি। আমি অ্যাজমাতে ভুগি। একবার এমন একটা অ্যাটাক হয়েছিল যে আমি এক ঘণ্টা দেরিতে সেটে পৌঁছেছিলাম। আমার সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। হ্যাঁ, আমি ইমোশনাল। রেগে যেতাম সহজে। তবে লাস্ট ব্রেক-আপটার পরে আমি নিজেকে পালটে ফেলেছি।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
শেষ সম্পর্কটা ভাঙল কেন?
আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড লন্ডনে চলে যাওয়ার পর সম্পর্কে ইতি টেনে দিলাম আমরা। আমি লন্ডন গিয়ে থাকতে পারব না। আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই। তবে এইটুকু বলতে পারি যে এই সম্পর্কের পরে আমি অনেকটাই বদলে গিয়েছি।

মানে এখন আর কোনও পুরুষের জন্য হাতের শিরা কাটবেন না...
(নিস্তব্ধ) আমি কোনও পুরুষের জন্য হাতের শিরা কাটিনি।

বলা হয় যে, আপনি তিন-তিনবার সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছেন। প্রত্যেক বারই সেটা প্রেমঘটিত।
কোনও ব্যক্তির জন্য তা আমি করিনি।

তা হলে তিন-তিন বার একই ভাবে শিরা কেটেছিলেন কেন? ন্যাড়া তো একবারই বেলতলায় যায়...
আমার বাবা ডাক্তার। বাড়িতে তো অন্য কোনও ওষুধ কখনও আমার হাতে দেওয়া হত না। শ্যুটিং সেরে বাড়ি ফিরতে দেরি হত। মা একদিন স্পষ্ট বলেছিলেন, যদি শ্যুটিং সাতটার মধ্যে শেষ করতে না পারি তা হলে যেন গাড়ির চাবি, ক্রেডিট কার্ড টেবিলের ওপর রেখে যাই। আমি যে ভাবে মানুষ হয়েছি তাতে এই সব ফেলে রেখে যাওয়াটা আমার পক্ষে বেশ কঠিন। আবার অভিনয়টাও আমার প্যাশন। সেটাও ছাড়তে পারব না। তখনই রাগে আমি...

...তাই ফিল্মি কায়দায় ব্লেড চালালেন? এখন রাগ হলে কি....
(হাসি) একদম না। বললাম না পালটে গিয়েছি। এখন অনেক সংযত।

আপনি নাকি এক সময় প্রোডাকশন কন্ট্রোল করতেন...
এটা কি কখনও সম্ভব? আমি কি সলমন খান যে প্রোডাকশন কন্ট্রোল করব?

তবু অনেকের ধারণা যে আপনার টাকার অভাব নেই। তাই আপনি কেরিয়ার সম্পর্কে সিরিয়াস নন...
ভুল ধারণা। আমি কোনও দিন অর্থাভাব দেখিনি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নিজের অভিনয় কেরিয়ারটা নিয়ে আমি সিরিয়াস নই। প্রসেনজিতের সঙ্গেও আমি ছবি করেছি। আরে...মুম্বইতে তো কত অভিনেত্রী আছেন যাঁরা আমার থেকে অনেক বেশি ধনী পরিবারে মানুষ হয়েছেন। কেউ কি কোনও দিন বলে যে রণবীর কপূর বা করিনা কপূর ওঁদের কেরিয়ার সম্পর্কে সিরিয়াস নন?

এখন তো সিরিয়াসলি সিনেমা করতে চান। কী ধরনের কাজ করতে উৎসুক?
আমি সব ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার।

দেব, জিতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ছবি করার ইচ্ছে রয়েছে?
গাড়ির রেডিয়োতে প্রায়ই শুনি ‘তুই আমার হিরো’। আমার বেশ ভাল লাগে। দর্শক হিসেবে আমি ‘দাবাং’ আর ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ দেখেছি। দুই ঘরানার সিনেমাই করতে চাই।

রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব ছিল। ওঁর ছবিতে আপনাকে দেখা গেল না কেন?
রাজ আমার ভাইয়ের মতো। টেলিফিল্মে অনেক আগে কাজ করেছি আমরা। সেটা রাজের কেরিয়ারের প্রথম দিকে। কিন্তু তার পরে ও যে ধরনের ছবি করে এসেছে আমি তা করিনি।

‘রংবাজ’য়ে দেব আর ‘বুনো হাঁস’য়ে দেব কার বিপরীতে অভিনয় করার লোভ বেশি?
আমার কোনও ছুঁতমার্গ নেই। তবে ‘বুনোহাঁস’য়ে দেবের বিপরীতে কাজ করার উৎসাহটাই আমার বেশি।

বলিউডে যে নতুন ধরনের সিনেমা হচ্ছে সেগুলোর নিরিখে টলিউডের নতুন ধারার ছবি কেমন লাগে?
টলিউডে আজকাল বেশ ভাল কাজ হচ্ছে। তবে বাঙালিরা বেশি ইমোশনাল। শহুরে ছবি যখন বলিউডে বানানো হয়, সেখানে কোনও গানই থাকে না। মনে আছে, ‘দ্য লাঞ্চবক্স’য়ের সেই দৃশ্য যেখানে নিমরত জানাচ্ছেন ইরফানকে যে তাঁর স্বামীর বোধহয় একটা অ্যাফেয়ার রয়েছে। কেমন নির্লিপ্ত ভাবে কথাটা বলা। এখানে ওই ধরনের একটা দৃশ্যে অভিনেত্রীর চোখে জল থাকবেই। কারণ এখানকার দর্শক একটু ড্রামা, একটা মিষ্টি গান চায়।

নতুন ইনিংসে কী কাজ করছেন এখন?
অনিন্দ্য ঘোষের একটা থ্রিলার করছি। আমার বিপরীতে রয়েছে রাজদীপ গুপ্ত। ছবিতে ঋতুদি (সেনগুপ্ত) রয়েছেন। আর একটা সিনেমা করছি বিশ্বনাথের সঙ্গে। পরিচালক নতুন। নাম, অর্ক।

পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় আর আপনাকে নিয়ে কত গুজব...
হি ওয়াজ জাস্ট অ্যানাদার ডিরেক্টর ইন মাই কেরিয়ার।

লাই ডিটেক্টর থাকলেও কি আপনি একই উত্তর দেবেন?
(হেসে) হ্যাঁ। হিন্দিতে একটা প্রবচন আছে। সুবহা কা ভুলা অগর সাম কো ঘর লৌট আ যায়ে তো উসে ভুলা নহি কহেতে।

যদি ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’য়ের একটা সিক্যুয়েল করা হয়, আপনি তাতে অভিনয় করবেন?
উফ্! ওটা তো করা হয়ে গিয়েছে। আবার ওটা কেন?

ওটাতে তো বেশ সাহসী কিছু দৃশ্য ছিল। নতুন ধারার সিনেমা করতে গেলে সেই সাহসটা দেখাবেন তো?
আমি বেশ কনজারভেটিভ। পরদায় চুমু খেতে অসুবিধা নেই আমার। বেডসিনও করতে পারি। কিন্তু বেয়ার-বডিতে আমি কম্ফর্টেবল নই। ওটার জন্য একটা অন্য ধরনের কমিটমেন্ট দরকার সিনেমার প্রতি। যেটা আমার হয়তো নেই।

এই কমিটমেন্ট না থাকুক, সম্পর্কে কমিটমেন্টে বিশ্বাস করেন? নাকি ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড-য়ে?
কমিটমেন্টে বিশ্বাস করি। আমি সিঙ্গল। বছর পাঁচেকের মধ্যে বিয়ের কথা ভাবছি না। লাভ-কাম-অ্যারেঞ্জড বিয়েতে আমি বিশ্বাসী। প্রেমের জন্য বাড়িতে ঝামেলা করতে পারব না। দাদাকে প্রমিস করেছি, ইন্ডাস্ট্রি থেকে কাউকে বিয়ে করব না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.