|
|
|
|
নতুন দিদি |
পুরনো দিদির নাম রচনা। নতুন দিদি দেবশ্রী। অভাবিত পালাবদলের খোঁজ দিচ্ছেন সংযুক্তা বসু |
দিদির মন ভাল নেই। দিদি যে পড়ে গিয়েছেন ‘পরিবর্তনের চক্করে।
এই দিদির পদবিতে ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’ থাকলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন।
তিনি রচনা।
বাংলা টেলিভিশনের সেই জনপ্রিয় শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের সঞ্চালক রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গাতেই যে এ বার আসছেন দেবশ্রী রায়। শোনা যাচ্ছে এই শো-য়ের নতুন সঞ্চালকের মুখ হিসেবে দেখা যেতে পারত নাকি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যানেলের পছন্দের প্রথম নাম হয়ে ওঠেন দেবশ্রী।
কেমন ভাবে নেবেন দর্শক রচনার এই আচমকাই আড়ালে চলে যাওয়া? এর উত্তর দর্শকই জানেন।
দীর্ঘদিন ধরে টিভি-পরদার চুম্বক-টানে দিদি হিসেবে উজ্জ্বল একমেবাদ্বিতীয়ম রচনাই। বিভিন্ন সিজনে যত বারই এসেছেন, গ্রামবাংলা থেকে শহুরে মধ্যবিত্ত ড্রইংরুম সর্বত্রই তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তা রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে। দর্শকদের মতে শো-তে হাজির অতিথিদের সঙ্গে আত্মীয়ের মতো ব্যবহার, আন্তরিক বাচনভঙ্গি, স্বতঃস্ফূর্ততা, উচ্ছল হাসির তোড়ে চড়চড় করে বেড়েছে টিআরপি। ওঁর আগে একবার জুন মাল্য এসেছিলেন সঞ্চালক হয়ে। কিন্তু টালিগঞ্জের জোর গুজব ছিল জুনের সিজনে টি আর পি দ্রুত পড়তে শুরু করেছিল। ফিরে এসেছিলেন রচনা ঢেলে সাজানো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের নানা গেম শো আর নতুন ধরনের সব উপহার নিয়ে, স্বমহিমায়।
শুধু যে সঞ্চালক হিসেবে রচনা মানুষকে শো-মুখো করায় সফল হয়েছেন তাই নয়। দাসানি স্টুডিয়োতে শ্যুটিং চলাকালে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের ফ্লোর ও সেট পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, সেই সময়ও রচনা সংবেনশীল ভাবে অংশগ্রহণকারী আর কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। আগুনের ধোঁয়ায় আটকে পড়া ফ্লোরের অবস্থা দেখার জন্য ব্যাকুল ভাবে ছুটে গিয়েছেন। সঞ্চালক রচনার সংবেদনশীলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। কাগজে ছাপা হয়েছে ওই দিন হঠাৎ অসুস্থতায় ক্ষণিকের জন্য তাঁর জ্ঞান হারানোর ছবি।
একডাকে ছোট পরদার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হিসেবে এ ভাবেই গোটা বাংলা রচনাকে চেনেন। |
|
|
বড় পরদার নায়িকা হিসেবে থেকেও
টেলিভিশনে কাজ করার প্রথম সাহস
দেখিয়েছিলাম তো আমিই
দেবশ্রী রায় |
আমি ব্যস্তই থাকব। শো শেষে সব
ঠিকঠাক থাকলে, আবার ফিরব ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হয়ে
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
ছবি: রানা বসু |
তা হলে কেন আবার এই পালা বদল? রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের ভাবমূর্তিকে মূলধন করেই কি জি বাংলা এ বার আর এক নতুন মলাটে হাজির করতে চাইছেন এই গেম শো? কী ঘাটতি হচ্ছিল রচনার শোয়ে?
না, কোথাও কোনও খামতি ছিল না তাঁর সঞ্চালনায়। এমনটাই মনে করছেন জি বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় কাযনির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় কুট্টি। বললেন, “খুব সুন্দর সঞ্চালনা করে এসেছেন এত দিন রচনা। কিন্তু আমাদের চ্যানেলের নিয়মই হল নানা নতুন মুখ এনে এক্সপেরিমেন্ট করা। সেই জন্যই আমরা এ বার দেবশ্রী রায়কে নিয়েছি। রচনাও নায়িকা ছিলেন। ছোট পর্দায় প্রথম আসেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ দিয়েই। এ বার দেবশ্রীকে প্রথম বার ছোট পরদায় গেম শোয়ে নিয়ে আসছি আমরা। মানুষের কাছে এটা একটা বড় চমক তো হবেই। সবাই তাঁকে দেখার জন্য আগ্রহী থাকবেন। এটাই আমাদের ইউএসপি।”
শুধু যে দেবশ্রী রায় আসছেন তা নয়। এই শো-কেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কী ফর্ম্যাটে, কী খেলার বৈচিত্রে, কী আলোর সাজসবেতেই থাকবে নতুন ভাবনার ছোঁয়া আর ‘গ্র্যাঞ্জার’, জানাচ্ছেন কুট্টি।
— কেমন হবে দেবশ্রীর লুক? উত্তরে তিনি বললেন, “ওঁকে দেখা যাবে এক নতুন ‘অবতার’য়ে। এমনটা তাঁকে আগে আর কেউ কখনও দেখেনি।”
—তা হলে কি রচনা আর ফিরবেন না এই শোয়ে? “না, তা কেন হবে? এত সফল ভাবে উনি শো করে গিয়েছেন। হয়তো ছ’মাস বাদেই ওঁকে আবার ফিরিয়ে আনা হবে। আমাদের চ্যানেলের নিয়মই হল রোটেট করা। যাতে একই মুখ দেখতে দেখতে দর্শকদের একঘেয়েমি না এসে যায়,” সবিনয়ে বলেন কুট্টি।
কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। যতই দেবশ্রীকে নতুন ‘অবতার’ হিসেবে পেশ করা হোক না কেন, তিনি তাঁর বিধায়ক পদের কাজকর্মের সঙ্গে নিয়মিত শ্যুটিংয়ের ভারসাম্য রাখবেন কী ভাবে? তার ওপর সামনে নির্বাচন! দেবশ্রী জানান, তিনি এ ব্যাপারে চ্যানেলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। মার্চ নাগাদ ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার সময় শ্যুটিংয়ের দিনক্ষণ অ্যাডজাস্ট করবে চ্যানেল। আপাতত মাস ছ’য়েক তিনি টানা কাজ করে যাবেন। “আমার কোনও অসুবিধা হবে বলে তো মনে হয় না। মাসে মাত্র ন’দিন শু্যটিং। ঠিকই ব্যবস্থা হয়ে যাবে,” শান্ত গলায় বলেন দেবশ্রী। কী ভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি নতুন ‘অবতার’য়ের সাজের জন্য? হেসে বলেন দেবশ্রী, “কেমন হবে সেটা তো চ্যানেল জানে। তবে আমি তো আর টিভিতে এই প্রথম নই। বড় পরদার নায়িকা হিসেবে থেকেও টেলিভিশনে কাজ করার প্রথম সাহস দেখিয়েছিলাম তো আমিই। তাই নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। সবাই মিলে টিম ওয়ার্ক। তাতেই দাঁড়িয়ে যাবে। মানুষ যেমন করে আমাকে এত দিন ভালবেসে এসেছে সে ভাবেই আমি তাঁদের কাছে হাজির হব। এইটুকু আমি জানি।”
‘দিদি নম্বর ওয়ান’ শোয়ের নিয়মিত দর্শক ইন্দ্রাণী ঘোষের মতে তিনি ‘দিদি নম্বার ওয়ান’ বলতে বোঝেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। এমনকী তাঁর স্বামীও রচনার বড় ভক্ত। রচনার এই সব একান্ত নিজস্ব ‘ডেডিকেটেড’ দর্শক কী ভাবে গ্রহণ করবেন নতুন দিদি দেবশ্রীকে? “আশা করা যায় ভাল ভাবেই নেবেন তাঁরা দেবশ্রীকে। দেবশ্রীরও ফ্যানফলোয়িং বিরাট। কত দিন ধরে কাজ করছেন উনি। তা ছাড়া ছোট পরদায় দেবশ্রীর মতো একজন সুঅভিনেত্রীকে দেখতে পাওয়াটাও দর্শকের স্বাদ-বদল ঘটাবে। এবং আমাদের শো অন্য মাত্রা পাবে। যোগ হতে পারে নতুন অডিয়েন্সও,” বলেন কুট্টি।
শহর-গ্রাম-মফস্সল মিলিয়ে সব ধরনের দর্শককে আকর্ষণ করতে চাইছেন এ বার জি বাংলা দেবশ্রীকে এনে। কিন্তু ঋতুপর্ণার সঙ্গে কথা বলেও তাঁকে আনা হল না কেন? কুট্টির যুক্তি হল, সঞ্চালক বাছাই করা হয় অনুষ্ঠানের ব্র্যান্ডের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই করে। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ ব্র্যান্ড ইমেজের সঙ্গে ঋতুপর্ণার ইমেজ মেলেনি বলেই শেষ পর্যন্ত তাঁর কথা আর ভাবা হয়নি। |
|
আমাদের চ্যানেলের নিয়মই হল রোটেট করা, যাতে একই মুখ
দেখতে দেখতে দর্শকদের একঘেয়েমি না এসে যায়
সুজয় কুট্টি |
|
—এটা তো আপনারা আগেই জানতেন যে ঋতুপর্ণার ইমেজের সঙ্গে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের ব্র্যান্ড ইমেজ নাও মিলতে পারে। তা হলে কেন ওঁর কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেলেন?
— একটা কাজ শুরু করার আগে নানা মানুষের সঙ্গে কথা
বলতে হয়। সেই ভাবেই আমরা কথা বলেছি ওঁর সঙ্গে। কথা বললেই যে কাজটা হবে তা তো নয়পালটা যুক্তি দেন কুট্টি।
ঋতুপর্ণা কী ভাবে নিয়েছেন এই ব্যাপারটাকে? “আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল জি বাংলা। সুজয় কুট্টির সঙ্গে এ নিয়ে কোনও কথা হয়নি। এই ধরনের অনুষ্ঠান করতে গেলে কিছু নিয়মকানুন এবং প্রতিশ্রুতি মানার ব্যাপার থাকে। সেই সব ক্ষেত্রে শেষমেশ আমার সঙ্গে চ্যানেলের মতামত ‘জেল’ করল না। তাই হল না। আর তা ছাড়া...” খানিকটা চুপ থাকেন ঋতুপর্ণা।
তা ছাড়া আর কী?
“আসলে আমার এখনও একটা দোনামনা আছে। এখনই টিভিতে মুখ দেখাব কি না তা নিয়ে। তা ছাড়া সামনে বেশ কিছু ছবির কাজও আছে। সময় অ্যাডজাস্ট করে গুছিয়ে কাজ করায় হয়তো অসুবিধে হত,” বলছেন ঋতুপর্ণা।
কিন্তু এতটা উদ্যম নিয়ে শো চালিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করে থমকে যাওয়ায় কী প্রতিক্রিয়া রচনার? বলেন, “আমার সে ভাবে কিছুই মনে হচ্ছে না।”
কিন্তু তা হলে আপনার হাতে তো এই মুহূর্তে কোনও কাজ থাকছে না!
—তা কেন হবে। এই মুহূর্তে হয়তো কাজ নেই। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ভরা শো। আমি ব্যস্তই থাকব। শো শেষ হলে সব যদি ঠিকঠাক থাকে, আবার ফিরব ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হয়ে।’
কথাগুলো বেশ কাটা কাটা ভাবেই বলেন রচনা। তিনি যে ফেরার আশা রেখেই যাচ্ছেন এটাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন।
এক সময় বাংলা ছবিতে প্রায় একসঙ্গেই কাজ করেছেন দুই নায়িকা। দেবশ্রী ও রচনা।
এ বার ছোট পরদায় তাঁদের পরীক্ষা। কে বেশি দর্শকের প্রশংসা পাবেন তা বোঝা যাবে আগামী ছ’ মাসের মধ্যেই।
দেবশ্রীকে নিয়ে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের শু্যটিং শুরু হবে ১১ তারিখ। তাঁকে এই গেম শোয়ে টিভিতে দেখা যাবে ১৭ নভেম্বর থেকে। |
|
|
|
|
|