ডুমরাকুড়ির পরে গোপীনাথপুর। রঘুনাথপুরের গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে ফের জমি দান।
গোপীনাথপুর গ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণে পাঁচ ডেসিম্যাল (প্রায় পৌনে চার কাঠা) জমি দান করেছেন তিন সহদোর। শুক্রবার বিডিও (রঘুনাথপুর ১ ব্লক), পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের (বিএলএলআরও) উপস্থিতিতে মদন বাউরি, মোহন বাউরি ও মুরুলী বাউরি জমি দান করেন। দু’দিন আগে ওই ব্লকেরই ডুমরাকুড়ি গ্রামের চার প্রান্তিক চাষি তাঁদের গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছ’লক্ষ টাকা মূল্যের জমি দান করেছিলেন। এ বার দান করা জমির বাজারমূল্য অন্তত তিন লক্ষ টাকা। |
জমিদানের পরে। —নিজস্ব চিত্র। |
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকে ছ’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ হলেও জমির অভাবে সমস্যায় পড়েছে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। বিএমওএইচ লিধুরাম হাঁসদা জানান, যে গ্রামগুলিতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি জমির অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। সেই প্রেক্ষিতেই গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে জমি চেয়ে আবেদন জানানোর কাজ শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। ফলও মিলছে। ডুমরাকুড়িতে স্বাস্থ্য দফতরের আবেদনে সাড়া দিয়ে এবং গ্রামের মানুষের স্বার্থে জমি দান করেছেন চার প্রান্তিক চাষি। গোপীনাথপুর গ্রামের তিন ভাই জমি দিয়েছেন, গ্রামে মানুষ অসুস্থ হলে যাতে প্রাথমিক চিকিৎসা পান, সেই লক্ষ্যেই। ডুমরাকুড়ির মতোই নিঃশর্তে গোপীনাথপুর মৌজার ১৭৪ নম্বর প্লটের পাঁচ ডেসিম্যাল জমি (খতিয়ান নম্বর-২) এ দিন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের নামে দান করেছেন ওই তিন ভাই।
কিন্তু, কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে জমি দানে সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা?
এর অন্যতম কারণ, ব্লক এলাকায় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা। গোপীনাথপুরের এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের কৃষ্ণ মাহাতোর। এ দিন জমির দানপত্রে অন্যতম সাক্ষী হিসাবেও থাকা কৃষ্ণবাবু বলেন, “এতদিন প্রশাসন ও গ্রামবাসীর মধ্যে যোগসূত্রে গড়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। আমরা সেই সেতুবন্ধনের কাজটাই করার চেষ্টা করছি।” বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “প্রতিটি গ্রামেই কিছু অংশের মানুষ চান এলাকার উন্নয়ন হোক। প্রশাসনের দায়িত্ব, সেই অংশের মানুষদের খুঁজে বের করে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা। রঘুনাথপুর এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র গঠনে গ্রামবাসীদের এগিয়ে আসার ঘটনা সেই প্রচেষ্টারই ফসল।”
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক লিধুরাম হাঁসদা জানান, গোপীনাথপুরের বর্তমান উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চলে এক ব্যক্তির কাঁচাবাড়ির দাওয়ায়। ফলে প্রতিষেধক মজুত রাখা, ওষধ দেওয়া, প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাজ করতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাঁর কথায় “আমরা এই অবস্থার বদল ঘটাতে চাইছি বলেই গ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গঠনে উদ্যোগী হয়েছি।”
রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে এ দিন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী মদনবাবু, রাজ্য সরকারের কর্মী মুরুলীবাবু ও পেশায় চাষি মোহনবাবু জানান, দশ-বারো বছর আগে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের দাদা মনু বাউরির। গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় ন্যূনতম চিকিৎসার সুযোগও মেলেনি। একই ঘটনা ঘটেছিল পড়শি বিভূতি বাউরির ক্ষেত্রে। তিন ভাইয়ের কথায়, “গ্রাম থেকে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্র রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। অসুস্থ দাদাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু মেলেনি। সেই সময়েই গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলাম। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গ্রামে এসে জমির অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গঠনের সমস্যা জানাতেই দেরি না করে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
লিধুরামবাবুর অবশ্য আশ্বাস, “ওঁদের দানের মর্যাদা রেখে আমরা দ্রুত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করব।” |