প্রসূতির মৃত্যুতে আগুন নার্সিংহোমে
চিকিৎসার গাফিলতিতে সদ্য প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল খানাকুলের একটি নার্সিংহোমে। আতঙ্ক ছড়ায় বাকি রোগীদের মধ্যেও। পুলিশ আসার আগে স্থানীয় মানুষই তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেন অন্য একটি নার্সিংহোমে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ স্থানীয় শাবলসিংহপুর গ্রামের আসন্নপ্রসবা নমিতা জানাকে (২৬) ভর্তি করা হয় খানাকুলের নন্দনপুরের ওই নার্সিংহোমে। তাঁর স্বামী হারু জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সাড়ে ৭টা নাগাদ চিকিৎসকেরা জানান, নবজাতক ভাল আছে। তবে নমিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাঁকে তৎক্ষণাৎ প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। মা-শিশুকে নিয়ে নমিতার বাড়ির লোকজন রওনাও দেন হাসপাতালের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, পথেই রাত ৮টা নাগাদ মারা যান নমিতা।
অগ্নিদগ্ধ নার্সিংহোমের এক তলার ওষুধের দোকানটিও।—নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মাঝপথ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নমিতার দেহ নিয়ে ফের নার্সিংহোমে হাজির হন তাঁর আত্মীয়েরা। রাত তখন প্রায় ৯টা। অভিযোগ, নার্সিহোমে চিকিৎসার গাফিলতিতেই নমিতার মৃত্যুর দাবি তুলে তাণ্ডব শুরু করেন তাঁরা। খবর পেয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাজির হন শাবলসিংহপুরের কিছু বাসিন্দা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, বিপদের আঁচ পেয়ে তখনই পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, পুলিশ আসার আগেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। শ’খানেক লোক নার্সিংহোমে ভাঙচুর শুরু করে। নীচের তলায় ওষুধের দোকানটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চলে লুঠপাঠও। আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। চিকিৎসকের গাড়ি, একটি মোটরবাইক ও কয়েকটি সাইকেল ভাঙচুর করে তাতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় মানুষের দাবি, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে তাণ্ডব চালান রোগিণীর বাড়ির লোকজন ও তাঁর গ্রামের কিছু মানুষ। পরে পুলিশ এলে রণে ভঙ্গ দেন তাঁরা।
গোলমাল চলাকালীনই স্থানীয় মানুষের হস্তক্ষেপে চিকিৎসাধীন ১২ জন রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই নার্সিংহোমের কর্ণধার তথা চিকিৎসক অজিত সামুই তিন তলায় ছিলেন। কর্মীদের নিয়ে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সকলকেই নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান গ্রামের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সদস্য বিজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “পৌনে ১১টা পর্যন্ত পুলিশ ও দমকল না পৌঁছনোর ফলেই এত বাড়াবাড়ি হল। আশপাশের লোকজন জড়ো করে সাধ্য মতো প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা ছিল মারমুখী। শেষে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালায়।” পরে দমকল আসে। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ-দমকল, দু’পক্ষেরই বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানাবর্তী প্রত্যন্ত ওই এলাকায় পৌঁছনোর রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে যতটা সময় লাগার কথা, ততটাই লেগেছে।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসবে জটিলতা থাকায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। প্রসবের পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় নমিতাকে। দ্রুত সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল প্রসূতির পরিবারকে। অজিতবাবু বলেন, “ওই মহিলার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু মৃত্যুর কারণ তদন্তসাপেক্ষ। আমাদের ত্রুটি থাকলে সে জন্য আইনি পথ আছে। কিন্তু, যে ভাবে ক্ষয়ক্ষতি করে আমাদের সকলকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হল, তা নিন্দার!” মৃতার স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামের কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।”
শনিবার রাতেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানান থানায়। মৃতার পরিবারের তরফে রবিবার রাতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে। তবে মৃতার দেহ ময়না-তদন্তের আগেই সৎকার করে দেওয়া হয় বলে পরিবার সূত্রের খবর। সদ্যোজাতকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.