মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতার কারণেই শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় এডিসের বংশ বিস্তার ঘটেছে। তা এতটাই মারাত্মক আকার নিয়েছে যে এ বছর গত দুই মাসে ডেঙ্গিতে উত্তরবঙ্গে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তার মধ্যে ৫ জনই শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। ১৬০০-র বেশি বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি, মাদুরাইয়ের সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মেডিক্যাল এন্টামলজির এক রিপোর্টেই ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্যই রোগ ছড়িয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল শিলিগুড়িতে এসে সমীক্ষা চালায়। তা ছাড়া জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় সমীক্ষা চালানো হয়। মাদুরাইয়ের সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মেডিক্যাল এন্টামলজিতে সমীক্ষায় সংগ্রহ করা মশার নমুনা, লার্ভা পাঠান। তা পরীক্ষা করেই রিপোর্ট দিয়েছে মাদুরাইয়ের ওই কেন্দ্র।
দার্জিলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, মাদুরাইয়ের সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মেডিক্যাল এন্টামলজির থেকে রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এডিস এলবোপিটাস মশার দাপটেই শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। ওই প্রজাতি ছাড়া এডিস ইজিপ্টাই মশাও রয়েছে। মশার জন্মনিয়ন্ত্রণ যথাযথ ভাবে করতে না পারার জন্যই অত্যাধিক হারে তা বংশ বিস্তার করেছে। সেই কারণে ওই কাজে এবং সচেতনতা প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছে।” গত দু মাস ধরে তা করাও হচ্ছে বলে জানান ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক।
ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিলে শিলিগুড়ি শহরে বাহক মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে উদাসীনতা নিয়ে পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়। স্বাস্থ দফতরের বক্তব্য, শহরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি এবং মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাসিন্দাদের সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করে দেখার জন্য সুডার মাধ্যমে পুরসভাকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। গত অগস্টের আগেই প্রায় ৯০ হাজার বাড়ি সমীক্ষা করে কোনও জ্বরে আক্রান্ত রোগী নেই বলেই তারা রিপোর্ট দিয়েছেন। তা ছাড়া বাড়িগুলিতে ঢুকে ফুলের টব বা পাত্রে জল জমে থাকলে তা উল্টে দিতে বলা হয় স্বাস্থ্য কর্মীদের। স্বাস্থ্য দফতরের সন্দেহ ওই কাজ ঠিক মতো হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য স্বাস্থ্য দফতর মিথ্যে অভিযোগ তুলছে। সে সময় যা পরিস্থিতি ছিল তাই জানানো হয়েছে। পরে ফের বাড়িগুলিতে সচেতনতার কাজের জন্য টাকা চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া বাগডোগরা, মাটিগাড়া, ডেমডেমা বস্তির মতো রাজগঞ্জ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ানো নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতাকেই পুর কর্তৃপক্ষ এবং বাসিন্দাদের একাংশ দায়ী করেছেন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবার যথাযথ ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশই জানান, শিলিগুড়ি-সহ পাহাড় লাগোয়া সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এডিস মশা যে হারে বংশবিস্তার করেছে তা আগে কখনও ঘটেনি। জলপাইগুড়ি জেলার ডুয়ার্সে হাসিমারা, আলিপুদুয়ার, গরুবাথানের মতো এলাকাগুলিতেও একই অবস্থা। শিলিগুড়িতে যে সমীক্ষক দলটি এসেছিল তাতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এন্টামোলজিস্ট সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বদেশ দাস (ইন্সেক্ট কালেক্টর), দার্জিলিং জেলার ভেক্টর বর্ন ডিজিস বিষয়ে পরামর্শদাতা দীপেন্দ্র শর্মারা ছিলেন। শিলিগুড়ি শহরে ৫, ৪২-৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, শালুগাড়া, খোলাচাঁদ ফাঁপড়ি, বাগডোগরা, মাটিগাড়া, দাগাপুর এলাকা ঘুরে তাঁরা মশা ও লার্ভার নমুনা সংক্রহ করেন।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নির্মীয়মাণ বাড়ির আনাচেকানাচে পড়ে থাকা ভাঙা কৌট, বা পাত্রে এবং যে সমস্ত জায়গায় জল জমে রয়েছে সেগুলি এডিস মশার আঁতুর ঘর। তা ছাড়া পরিত্যক্ত ভাঙা গাড়ির যন্ত্রাংশ, ফেলে দেওয়া টায়ারের খাঁজে জমা পরিষ্কার জলে এই মশা বংশবিস্তার করে। তা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরভরই ওই কর্মসূচিতে প্রয়োজন মতো জোর দিতে। তা ছাড়া এখনও বিভিন্ন এলাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা আসছেন শিলিগুনি জেলা হাসপাতালা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। তাদের অনেকের শরীরে ডেঙ্গির জাবানু মিলছেও। ইতিমধ্যে ডেঙ্গির রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষার জন্য ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার যন্ত্রাংশ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে বসানো হয়েছে। শীঘ্রই তা চালু করা হবে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
|
সদ্যোজাতের মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়া |
চিকিৎসকের গাফিলতিতে সদ্যোজাত এক শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠল রঘুনাথপুর হাসপাতালে। মৃত শিশুর পরিবার ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। রঘুনাথপুর থানার মেট্যাল সহর গ্রামের ভ্রমর বাউরির সন্তানসম্ভবা স্ত্রী শকুন্তলা বাউরি শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার দুপুরে তিনি মৃত সন্তানের জন্ম দেন। ভ্রমরবাবুর অভিযোগ, “হাসপাতালে ভর্তি করার পরে চিকিৎসক স্ত্রীকে পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, সন্তানটি সুস্থ রয়েছে। তা হলে কী করে মারা গেল? চিকিৎসকের গাফিলতিতেই এই কাণ্ড ঘটল।” স্থানীয় জেলাপরিষদ সদস্য তৃণমূলের হাজারি বাউরির দাবি, “কিছু চিকিৎসকের গাফিলতিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।” হাসপাতাল সুপার শান্তনু সাহু বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে পুরুলিয়ায় সদ্যোজাতের দেহ কুকুরে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে শনিবার হাসপাতাল মোড়ে বিক্ষোভ দেখাল এসইউসি। হাসপাতাল সুপারকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। শুক্রবার হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় হাসপাতালের ট্যাগ লাগানো এক সদ্যোজাতের দেহ কুকরের মুখে দেখা যায়। জেলাশাসক সে দিনই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। মর্গের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেই ফের দেহ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |