রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জার নিয়োগ ঘিরে জটিলতা
ন ও বন্যপ্রাণী বাঁচানোর দায়িত্ব ডেপুটি রেঞ্জারদের। অরণ্য লাগোয়া লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতি, গন্ডার, চিতাবাঘ, বাইসন খাঁচাবন্দি করার ঝুঁকির কাজও তাঁদের করতে হয়। আর সেই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য দিনে তো বটেই, রাত-বিরেতেও আচমকা দুর্গম জঙ্গলে যেতে হয় রেঞ্জারদেরও। সেই সঙ্গে সামলাতে হয় অফিস। বরাদ্দ টাকা খরচের দায়িত্বও রয়েছে রেঞ্জ অফিসার বা রেঞ্জারদের। কিন্তু বন দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে নানা বনাঞ্চলে ১৫০ জন ডেপুটি রেঞ্জার ও ৫০ জন রেঞ্জারের পদ প্রায় ৩ বছর ধরে ফাঁকা। সেই সমস্যা মেটাতে অবসরপ্রাপ্ত রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জারদের চুক্তি ভিত্তিতে ফের নিয়োগ করতে নেমেও প্রতি পদে হোঁচট খাচ্ছে বন দফতর।
বন দফতর সূত্রেই খবর, যত সংখ্যক শূন্য পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছ থেকে তত আবেদন জমা পড়েনি। বন দফতর সূত্রের খবর, জঙ্গলমহল, ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত এলাকার শূন্য পদের জন্য কোনও আবেদনই জমা পড়েনি। যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে ক’জন ইন্টারভিউয়ে হাজির হবেন এবং ক’জনই বা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গল কিংবা উত্তরবঙ্গের দুর্গম বনাঞ্চলে গিয়ে কাজ করতে রাজি হবেন, তা নিয়েও বনকর্তাদের একাংশ সন্দিহান। সেই সঙ্গে রেঞ্জার পদে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হলে নানা আইনি জটিলতার আশঙ্কাও করছে বনকর্মীদের অধিকাংশ সংগঠনই।
তাই দফতরেরই অবসপ্রাপ্ত অফিসারদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণের কাজটা শেষ অবধি কতটা কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে খোদ বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও। বনমন্ত্রী বলেছেন, “রেঞ্জার ও ডেপুটি রেঞ্জারের শূন্য পদ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পূরণ করাই নিয়ম। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই সব পদে অফিসার নিয়োগ করতে এক-দেড় বছর লেগে যায়। সে জন্য অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের দিয়ে আপাতত কাজটা চালানোর কথা ভাবা হয়েছে। তবে পদের তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক কম। কতটা কী হয়, দেখা যাক।” বন দফতর সূত্রের খবর, শূন্য পদগুলির দায়িত্ব বর্তমানে কর্মরত অফিসাররাই সামলাচ্ছেন। কিন্তু একই অফিসারের উপরে একাধিক এলাকার দায়িত্ব থাকায় বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজে নানা গাফিলতি ঘটছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরে দলমার দাঁতালদের দৌরাত্ম্য রোখা, নজরদারি ও তদারকির কাজে নানা সময়ে বিঘ্ন ঘটছে। বন দফতর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের বক্সা, জলদাপাড়া ও কালিম্পঙের পাহাড়ি জঙ্গলে হাতি, চিতাবাঘ, বাইসন, হরিণ শিকারিদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। বন দফতরের বিরুদ্ধে নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগে রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জারদের অফিস ঘেরাও, বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দিতে চলতি বছরের গোড়ায় শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বন দফতর সূত্রের খবর, কিন্তু পিএসসি মারফত নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়। তাই অগস্টে ২০০টি শূন্য পদ দ্রত পূরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জারদের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে বন দফতর।
যা জানার পরে তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন বন কর্তাদের কাছে গিয়ে চুক্তি ভিত্তিতে রেঞ্জার নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ওই সংগঠনের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক অমল সিংহ বলেন, “শিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন বেকারদের ওই পদে নিয়োগ করলে ভাল হয়। তা যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ ডেপুটি রেঞ্জার পদে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের নিলে সমস্যা নেই। কিন্তু রেঞ্জার পদে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের নিলে সমস্যা হবে। কারণ, রেঞ্জাররা রাইফেল ব্যবহার করতে পারেন। অর্থ বরাদ্দ ও খরচ করতে পারেন। এমনকী, প্রয়োজনে বিট অফিসারদের শো-কজ করতে পারেন। কিন্তু চুক্তি ভিত্তিতে নিযুক্ত রেঞ্জার শো-কজ করলে স্থায়ী পদে কর্মরত ডেপুটি রেঞ্জার মানবেন কেন? তাতেই সংঘাত হবে। আমরা আশা করছি, বনমন্ত্রী সব দিক ভেবে পদক্ষেপ করবেন। ” বন দফতরের একাধিক ডিএফও-র গলাতেও সংশয়ের সুর। তাঁরা জানান, চুক্তি ভিত্তিক রেঞ্জাররা ১২ হাজার টাকা করে পাবেন। ডেপুটি রেঞ্জাররা পাবেন ১০ হাজার টাকা করে। তাঁদেরও ধারণা, এ অবস্থায় এই ঝুঁকির কাজ করতে কত জন শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.