|
|
|
|
নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প অধরা পশ্চিমে |
যন্ত্রচালিত পাম্প দিয়ে জল তোলার উদ্যোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই। সরকারি উদ্যোগে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি এখনও। তারই মধ্যে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জানাল, এ বার থেকে আর মানুষকে কল টেনে কষ্ট করে জল তুলতে হবে না। কারণ, এ বার ‘হ্যান্ডপাম্প’ এর পরিবর্তে যন্ত্রচালিত ‘পাম্প’ বসানো হবে গ্রামে গ্রামে।
নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অনেকটাই পিছিয়ে। এখনও পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ১৩ শতাংশ মানুষের কাছে এই প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে! কবে গ্রামের সব বাড়িতে তা পৌঁছনো যাবে? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুণ্ডু বলেন, “প্রতি বছরই নতুন নতুন প্রকল্প রূপায়ণের চেষ্টা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব গ্রামীণ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত জল দেওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হবে।”
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে রাজ্যে পঞ্চায়েত তথা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে গ্রামে গ্রামে দ্রুত নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে কালীপুজোর পর একটি জরুরী বৈঠকও হবে। সেখানেই কর্মপদ্ধতি তৈরি করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। তবে যত দিন না গ্রামে গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্প চালু করা যাচ্ছে তত দিন গ্রামের নলকূপ দিয়েই পানীয় জলের সমস্যা মেটানো হবে বলে দফতর জানিয়েছে। |
|
ঝাড়গ্রামের জামাই বস্তিতে যন্ত্রচালিত পাম্প। ছবি:দেবরাজ ঘোষ |
ওই লক্ষ্য অধরা থাকলেও জেলার মানুষের জল সমস্যার সমাধানে আসছে নতুন প্রকল্প। তা হল ‘হ্যান্ডপাম্প’-এর পরিবর্তে যন্ত্রচালিত ‘পাম্প’ বসানো হবে গ্রামে গ্রামে। কেন? দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ সেনের কথায়, “গ্রীষ্মকালে জলস্তর যত নীচে নেমে যায় ততই কলের হাতল টিপে জল তোলা কষ্টকর হতে থাকে। এই সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতেই, যন্ত্রচালিক পাম্প ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এই যন্ত্রচালিত পাম্পগুলি যুক্ত থাকবে সৌর প্রযুক্তির মাধ্যমে। রাখা হবে একটি ট্যাঙ্কও। যে ট্যাঙ্কে ৫ হাজার লিটার জল ধারণ ক্ষমতা থাকবে। ট্যাঙ্কে জল কমলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যন্ত্র চালু হয়ে গিয়ে ওই ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে যাবে। গ্রামবাসীরা ট্যাঙ্কের কল খুলে জল নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বর্ষাকালে টানা সূর্যের দেখা না মিললে জল মিলবে কী করে? সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “যন্ত্রচালিত হলেও হাতল রাখা হবে। একটানা সূর্যের আলো না পাওয়া গেলে হাতল টিপেও জল তোলা যাবে।” দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে এই ধরনের নলকূপ বসানো হবে। প্রথম ধাপে ৪০০টি নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দফতর। প্রতিটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। পরীক্ষা মূলক ভাবে ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রামের জামাই বস্তিতে একটি এমনই একটি নলকূপ বসানো হয়েছে। তাতে কোনও সমস্যা নেই বলেই দফতরের দাবি। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই এই ৪০০টি নলকূপ বসানো হবে বলে দফতর জানিয়েছে।
একই সঙ্গে নলবাহিত পানীয় জলের প্রকল্প দ্রুত তৈরির কাজ চলবে বলে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জানিয়েছে। দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জেলায় ১৩৫টি নলবাহিত জল প্রকল্প চলছে। যাতে ৬ লক্ষ ৮৩৪৪ জন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। জনসংখ্যার নিরিখে তা ১৩.২৯ শতাংশ। আরও ৫৩টি প্রকল্প রূপায়ণের কাজ চলছে। যার মধ্যে ২৮টি প্রকল্প দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে বলে দফতরের দাবি। এই ৫৩টি প্রকল্প চালু করা গেলে জেলার প্রায় ২০.৮৯ শতাংশ মানুষ উপকৃত হবেন। বাকি বৃহৎ অংশের ক্ষেত্রে কী হবে? আধিকারিকদের দাবি, আরও কিছু নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রীও এই বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “ইচ্ছে থাকলেও এখনই ১০০ শতাংশ বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়া কঠিন। কারণ, দফতরের সেই পরিকাঠামোও নেই। ফলে ধীরে ধীরে নতুন প্রকল্প করতে হবে। আবার কিছু পুরনো প্রকল্পে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা নষ্ট যাচ্ছে। তাও ঠিক করতে হবে। না করলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেবে।” সম্প্রতি পুরনো প্রকল্প সংস্কার ও নতুন প্রকল্প মিলিয়ে ৪০টি প্রকল্পের প্রস্তাবও রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে দফতর জানিয়েছে। |
|
|
|
|
|