বহু দিন ধরেই টেবিল টেনিসে চরম দুর্দিন চলছে দুই মেদিনীপুরে। এই অবস্থায় কিছুটা আশার আলো জাগাল একগুচ্ছ পুরস্কার।
চলতি বছরে বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএ) আয়োজিত রাজ্য প্রতিযোগিতায় এ বার চারটি পুরস্কার পেল মেদিনীপুর টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের খেলোয়াড়রা। দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে এই অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি কলকাতায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল বিটিটিএ। সেখানে মেদিনীপুরের কিরণজয় কুশীলাল বয়েজ মেনসে জেতার পাশাপাশি অনুর্ধ্ব ১৭-তেও জয়ী হয়েছেন। সৈকত দে অনুর্ধ্ব ১৪-এ জিতেছেন। আর দলগত ভাবে ছেলেদের মধ্যে রানার্স হয়েছেন অর্ক দাস, কিরণজয় কুশীলাল, দেবজয় কুশীলাল, রিতম সরকাররা। জেলা টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুনীল দত্তের কথায়, “আশা করা যায়, এই পুরস্কার জেলার খেলোয়াড়দের মধ্যে উৎসাহ জোগাবে।” |
অনুশীলনে ব্যস্ত এরিনা (বাঁ দিকে) ও শ্রীপর্ণা। রামপ্রসাদ সাউ। |
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় টেনিস খেলার প্রচলন ছিল না এমন নয়। ১৯৬৮ সালে ঝাড়গ্রামে কিছু টেনিস খেলোয়াড়ের উদ্যোগে জেলা সংস্থা তৈরি হয়েছিল। তখন চলচ্চিত্র দেখিয়ে সংস্থার কাজকর্ম চালানোর জন্য অর্থও তোলা হয়। ১৯৭৭ সালে ঝাড়গ্রামেই রাজ্য টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতাও হয়। ১৯৭৮ সালে সুনীল দত্ত রাজ্য চ্যাম্পিয়ান হন। ১৯৮০ সালে মেদিনীপুরের খেলোয়াড়রা দলগত ভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। তারপর থেকে আর তেমন সাফল্য মেলেনি। কিছু খেলোয়াড় যেমন খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কয়েক জন খেলা ছেড়ে কোচ হয়েছেন। যেমন, খড়্গপুরের শ্রীপর্ণা নন্দর কথা ধরা যাক। ইন্টার স্কুল মিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে একাধিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে কোথাও চ্যাম্পিয়ান, কোথাও রানার্স কোথাওবা তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান দখল করেছিলেন। এখন প্রশিক্ষক হয়েছেন। শ্রীপর্ণার কথায়, “অন্য জায়গায় খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। কিন্তু জেলায় সে সব হয় না।”
জেলায় কেন প্রতিযোগিতা করা যাচ্ছে না? সম্পাদক সুনীল দত্ত বলেন, “খরচ কে দেবে। সাহায্য চাইতে গিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়া টেবিল টেনিসের কথা বললেই সকলের মুখ বেঁকে যায়। তাই চেষ্টা করেও করতে পারিনি।”
অথচ, এমন নয় যে জেলায় খেলোয়াড় নেই। খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় (২)-এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এরিনা দত্ত এই বয়সেই একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় জাতীয় প্রতিযোগিতায় তার দল রুপোর পদক পেয়েছে। ২০১২ সালে ওই প্রতিযোগিতাতেই তার দল পেয়েছে স্বর্ণপদক। ব্যক্তিগত ভাবে স্কুলের এই সমস্ত প্রতিযোগিতায় দু’বার ব্রোঞ্চ পেয়েছে এরিনা। এরিনার কথায়, “এখানে ভাল খেলার সুযোগ নেই। তাই সমস্যা হয়।”
ভাল খেলার সুযোগ বলতে কী? খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভাল কোচ, নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রতিটি শহরেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন। সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি করা গেলে খেলোয়াড়রা উৎসাহ পাবে। সম্পাদক সুনীল দত্তের কথায়, “জেলা টেবিল টেনিস সংস্থা তৈরির সময় যে উৎসাহ ছিল, এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কী খেলোয়াড়, কী অভিভাবক কারও মধ্যেই তা নেই। কারণ, খেলার চল না থাকায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সকলেই সন্দিহান। টেবিল টেনিস খেলে জেলার কেউ যদি চাকরি পেতেন বা উঁচু জায়গায় যেতেন তা হলে হয়তো এই খেলা আরও জনপ্রিয় হত।” সুনীলবাবু নিজেই স্পোর্টস কোটায় রেলে চাকরি পেয়েছেন। নিজে উদাহরণ রয়েছেন, তবু কেউ উৎসাহ পাচ্ছে না কেন? তাঁর কথায়, “এত যুগ আগের কথা শুনে কারও উৎসাহ জাগে না। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে খেলাটাকে অন্তত কিছুটা জনপ্রিয় করা যায়।”
এ বারের সাফল্য হয়তো জেলার টেনিস খেলোয়াড়দের কিছুটা উৎসাহ জোগাবে, এমনটাই আশা ক্রীড়াপ্রেমীদের। |