দফতরের সামনে মাঠে বাজির বাজার বসিয়ে শব্দিবাজি বিক্রি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। কিন্তু দেওয়ালিতে দেদার শব্দিবাজি ফাটলো গোটা শিলিগুড়ি জুড়েই। যা নিয়ে দলমত নির্বিশেষে কাউন্সিলরদের একাংশের মত পুলিশ আরএও সক্রিয় হলে ভাল হত। পুলিশ অবশ্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কয়েকজনকে আটকও করে। তবে এ দিন সন্ধ্যার পর থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় শব্দবাজির দাপট ছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ৎৎদের তরফে কনট্রোল রুম-ও খোলা হয়েছে। তাদের একটি দলও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নজরদারি চালাচ্ছেন। কিন্তু শব্দিবাজি ফেটেছে অবাধেই। এ দিন পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “কোন শব্দ বাজি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি বা কোথাও শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ পেলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দল তা খতিয়ে দেখে আমাদের জানাবেন। সেই মতো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। তবে এ দিন রাত পৌনে ১০ টা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ মেলেনি। তবে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের বাজি ফাটানো হচ্ছে বুঝতে পেরে পুলিশ টহলদারির সময় কিছু মানুষকে ধরপাকড় করেছে।”
রবীন্দ্রনগর এলাকার কংগ্রেসের কাউন্সিলর তপন দত্ত থেকে বাম কাউন্সিলর দীপায়ণ রায়, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপ সিংহ সকলেই শব্দের বাজির ব্যাপক দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ করেন। লেকটাউন এলাকার বাসিন্দা কাউন্সিলর দীপায়ণবাবু বলেন, “পুলিশ কমিশনারেটেবাজির বাজার তৈরি করা হল। সেখানে পুলিশের নজরদারিতে বাজি বিক্রি হয়েছে। তার পরেও এত শব্দিবাজি কোথা থেকে এসেছে? বাস্তবে সে কাজের কাজ হয়নি তা স্পষ্ট।” দিলীপবাবুর কথায়, বয়স্ক মানুষ, বাচ্চাদের খতা ভেবে এ ধরণের শব্দবাজির ব্যবহারে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর নিখিল সাহানি জানান, পুলিশ আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে। তাতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আরও একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ভাল হত। সামনে ছট পুজো রয়েছে। তার আগে নিশ্চয়ই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক এই দিন জানিয়েছেন, শহরে কনট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তবে সেখানে অভিযোগ তেমন কেউ করেননি। অভিযোগ পেলে নিশ্চিয়ই আমাদের দল গিয়ে দেখবে। তবে বাজি ফাটানোর সময় সেটা নির্দিষ্ট শব্দের সীমা ছাড়াল কি না তখনই যন্ত্র দিয়ে মেপে দেখা সম্ভব নয়। কোথাও অভিযোগ পেলে আমাদের দলের কর্মীরা গিয়ে খতিয়ে দেখেন।”
তবে পুলিশ কমিশনারেটের নির্দিষ্ট জায়গায় যে ব্যবসায়ীরা বাজি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন, সেখানে তারা লভ্যাংশ ঘরে তুলতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ৫ দিনের এই বাজার শেষ হওয়ার পরেও সামান্য কয়েক জন বিক্রেতাই মহাজনের কাছ থেকে ধারের টাকা তুলতে পেরেছেন। কেন না বাজির বাজারে শব্দি বাজি বিক্রি হয়নি। অথচ পুলিশি কড়াকড়ি সত্ত্বেও রবিবারও হায়দরপাড়া, বিধান মার্কেট, গেটবাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে চুরিয়ে শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে। বাজির বাজারে আসার চেয়ে এই সমস্ত বাজারে গিয়ে শব্দবাজি কিনতেই উৎসাহী হয়েছেন অনেকেই। মাল্লাগুড়ি এলাকায় পুলিশ কমিশনারেটের ময়দানের বাজির বাজারে বাইরে কোনও বাজিই বিক্রি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানকার এক ব্যবসায়ী সুব্রত দাস এ দিন বলেছেন, “দোকানের সব বাজি বিক্রি হয়নি। যা বাজি বিক্রি হয়েছে তাতে লগ্নির টাকা ওঠেনি।” হকার্স কর্নার খুচরো ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পরিমল মিত্র অবশ্য এই বাজির বাজারকে সমর্থন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “এটি একটা খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। অনেক জায়গাতেই বিক্রি হয়েছে শব্দবাজি। পুলিশ অভিযান চালিয়ে, বাজার তৈরি করে কোনও লাভ হয়নি।” |