বাজি পোড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ভাবনা
ব্দের তাণ্ডব ও তাকে জব্দ করার উদ্যোগের পাশাপাশি এ বার কলকাতায় সমস্ত রকম বাজি পোড়ানোর জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করার বিষয়টি ফের সামনে চলে এল। কারণ, আলোর বাজিতে যে বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার নেয়, সেটা গত চার-পাঁচ বছরে দীপাবলির সময়ে করা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে।
এ রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিলেন যিনি, হাইকোর্টের সেই প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পর্ষদের এক শীর্ষকর্তা দু’জনেই মনে করেন: শব্দবাজি নিয়ে প্রতি বার কালীপুজো ও দীপাবলির সময়ে এই চোর-পুলিশ না খেলে যে কোনও রকম বাজি পোড়ানোর জন্য শহরের প্রান্তে একটি জায়গা ও সময় নির্দিষ্ট করা হোক। যে রকম আছে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে।
পর্ষদের ওই শীর্ষকর্তার কথায়, “বাজি পোড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতে হবে। না হলে সমস্যা কিন্তু থেকেই যাবে।” ওই কর্তা আরও বলেন, “শব্দবাজি নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। কিন্তু আলোর বাজিতে তীব্র রাসায়নিক থাকে। যার বিষাক্ত ধোঁয়া স্বাস্থ্য, বিশেষ করে ফুসফুসের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। পশ্চিমের দেশগুলির বিভিন্ন শহরে শহরের প্রান্তে একটি জায়গা ও সময় নির্দিষ্ট করা থাকে। সেখানে সকলে বাজি ফাটাতে যান।” প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখানকার মতো বাড়ির সামনে, পাড়ায় কিংবা রাস্তার মোড়ে বাজি পোড়ানোর কথা উন্নত দেশগুলিতে ভাবা যায় না। কলকাতায় যেমন ময়দান আছে, সে রকম কিংবা বড় কোনও স্টেডিয়ামে ওখানে বাজি পোড়ানো হয় নির্দিষ্ট সময়ে।”
বিষ-ধোঁয়ার বিপদ
• বাজির ধোঁয়া থেকেশ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি।
• শ্বাসযন্ত্রে ঢোকে, বাতাসে এমন কণার সহনীয় পরিমাণপ্রতি ঘন মিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম।
• পর্ষদের সমীক্ষা বলছে, গত কয়েক বছরে কালীপুজোর সময়ে ওই পরিমাণপ্রতি ঘন মিটারে ২০০ থেকে ২৫০ মাইক্রোগ্রাম।
• নিদানসমস্ত রকম বাজি পোড়ানোর জন্য শহরের প্রান্তে আলাদা জায়গা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর পক্ষে নব দত্ত বলেন, “কলকাতার জনঘনত্ব খুব বেশি। কলকাতায় খোলা জায়গার পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। তাই আতসবাজি পোড়ানোর জন্যই নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া উচিত।” তবে নববাবুর বক্তব্য, “ময়দান, রবীন্দ্র সরোবর কিংবা সুভাষ সরোবরের মতো ফাঁকা জায়গা কলকাতায় থাকলেও ওই সমস্ত জায়গায় বাজি পোড়ানো হলে দেখতে হবে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের যাতে ক্ষতি না হয়।”
গত চার-পাঁচ বছর ধরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাতাসে ভাসমান যে সব কণা মানুষের শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে যায়, তার পরিমাণ কালীপুজোর-দীপাবলির সময়ে মানুষের সহনসীমার প্রায় দ্বিগুণ-আড়াই গুণে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনও কোনও বছর বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ আড়াইশো মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পালমোনোলজিস্ট পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, “দেওয়ালির ঠিক পরেই হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের মতো ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে রোগী ভিড় করছেন। এর মূল কারণ বাজির ধোঁয়া। কুয়াশা আর বাজির ধোঁয়া মিশে মারাত্মক আকার নেয়। সে দিক থেকে বিচার করলে বাজি পোড়ানোর আলাদা জায়গা করার ভাবনা স্বাস্থ্যকর।”
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ভর্তি রোগীদের জন্য যে কোনও রকম বাজির ধোঁয়াই অস্বাস্থ্যকর। শহরের যত্রতত্র বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় এসেছে।”
পশ্চিমবঙ্গ ১৯৯৭ সালে শব্দবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার পরে আর কোনও পদক্ষেপ এই ব্যাপারে দেখা যায়নি। বরং, ২০০৪-এর পর থেকে শব্দবাজি ফের তাণ্ডব শুরু করেছে। বেঙ্গালুরুর প্রায় ছ’লক্ষ ছাত্রছাত্রী এ বার পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখে কোনও রকম বাজি পোড়ায়নি, তারা আলো দিয়ে বাড়ি সাজানোর উপরেই জোর দিয়েছে। কলকাতায় এখনও এই ধরনের উদ্যোগের দেখা নেই।
শনিবার, কালীপুজোর দিন নিষিদ্ধ শব্দবাজি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশ ৪০০ জনকে গ্রেফতার করেছে, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তিনশো কেজিরও বেশি শব্দবাজি। পরিবেশকর্মী নববাবু বলেন, “আমরা নিজেদের উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলেছি, এলাকায় এলাকায় ঘুরেছি। প্রশাসন অনেক পিছিয়ে থেকে শুরু করলেও এ বার শব্দবাজির দাপট কিছুটা কমেছে পুলিশি তৎপরতার জন্যই।” লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজি সংক্রান্ত প্রায় ৭০টি অভিযোগ কন্ট্রোল রুমে এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে অভিযোগকারী পুলিশের তরফে সাড়া পেয়েছেন। উড়ুক্কু যান চালানোর ফলে ডিএল খান রোড, শেক্সপিয়ার সরণি, আলিপুর, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের কিছু বহুতলে শব্দবাজি ব্যবহার ঠেকানো গিয়েছে।” তবে তিনি স্বীকার করে নেন, “শনিবার রাত ১০টার পর কয়েকটি জায়গায় লাগামহীন ভাবে শব্দবাজি ফেটেছে। তার অন্যতম কারণ, ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের জয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.