সম্পাদকীয় ২...
পতন
বারাক ওবামা ২০০৮ সালে যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন, তখন তাঁহাকে সর্বাধিক সাহায্য করিয়াছিল পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবলিউ বুশের বিবিধ অন্যায়। প্রার্থী ওবামা সেই উত্তরাধিকার বর্জনের শপথ করিয়াছিলেন। বিদেশ নীতি হউক, আর অন্তর্দেশীয় নীতিই হউক, বুশ-ঐতিহ্য উৎপাটনের প্রতিজ্ঞায় ভোটে জিতিয়াছিলেন। সুবাগ্মী, তাহার উপর কৃষ্ণাঙ্গ: পরিবর্তনের ধুয়াটি তাঁহার ভাবমূর্তির সহিত ভালই গিয়াছিল। প্রথম পর্বের নানা আশাভঙ্গ সত্ত্বেও চার বৎসর পর দ্বিতীয় বারেও তাঁহাকে অনেকটাই উতরাইয়া দিয়াছিল পরিবর্তন-বন্ধু ভাবমূর্তিটি। প্রেসিডেন্ট পদে আসীন অবস্থায় গত পাঁচ বৎসরে তাঁহার চারিপাশে বহু উত্থানপতন, সাফল্য-ব্যর্থতা তরঙ্গ তুলিয়াছে, বুঝাইয়া দিয়াছে তিনিও আর পাঁচ জন মরণশীল নেতার ন্যায় প্রশাসনিক কৃতি অপেক্ষা ভোটের গলাবাজিটিই অধিকতর দক্ষতার সহিত করিয়া থাকেন। তবে এ যাবৎ কালের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি হতাশা-ব্যর্থতাকে ছাপাইয়া গেল আড়িপাতা-বিষয়ক কেলেঙ্কারিটি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সব রীতি ও নীতি ভাঙিয়া সকল দেশের, এমনকী ইউরোপের মিত্রদেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যক্তিগত ফোনালাপও আড়ি পাতিয়া শুনিয়া আসিতেছে। শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে কোনও অগ্রগণ্য রাষ্ট্র এ ভাবে কূটনৈতিক নিয়মকানুন ভাঙিতে পারে, তাহা অচিন্তনীয়। ওবামার প্রশাসনিক নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার ব্যক্তিগত নৈতিকতাও এ বার কলঙ্কিত। পরিবর্তনের বদলে বুশীয় পুরাতনের মায়াতেই তিনি নিজেকে সঁপিয়া দিয়াছেন, ইহাই শুধু প্রমাণিত হইল না, প্রমাণিত হইল যে তিনি হয় চূড়ান্ত অনৈতিক রাজনীতিক, আর নয়তো চূড়ান্ত অদক্ষ প্রশাসক, যিনি অধীনস্থ সংস্থা কী করিতেছে তাহার কোনও খবরই রাখেন না।
জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার এই কার্যপ্রণালী নিশ্চিত ভাবেই সেই পূর্বতন বুশ জমানার উত্তরাধিকার, যাহা ওবামা বর্জন করিতে চাহিয়াছিলেন। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ নামিয়া বুশ প্রত্যয়ের সহিতই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করা মনস্থ করিয়াছিলেন। ওবামাও তাহাই করিয়া গিয়াছেন, এ বার স্পষ্ট। ইহা কেবল মার্কিন প্রশাসনের নীতিবদ্ধতার প্রশ্ন নহে, বৃহত্তর কূটনীতির ভিত্তিতেই কুঠারাঘাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্ব প্রকার গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদানের চুক্তি হয়। পরবর্তী কালে এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয় আরও কয়েকটি দেশ, আপাতত যাহারা মার্কিন মিত্র বলিয়া খ্যাত। এই চুক্তি মান্য হইলে পরস্পরের উপর গোয়েন্দা নজর রাখিবার কোনও নৈতিক অধিকারই থাকিতে পারে না, প্রয়োজনও থাকিতে পারে না। যে কোনও মিত্র-দেশ ইহার পর অমিত্র হইয়া যাইবার সিদ্ধান্ত লইতে পারে।
মার্কিন দেশ বা মার্কিন প্রেসিডেন্টের যত কুখ্যাতিই হউক না কেন, ব্যক্তি হিসাবে বারাক ওবামার যে স্খলন ইহাতে প্রকট হইল, তাহা অনেক বেশি দুর্ভাগ্যজনক। ঐতিহাসিক চরিত্র তথা ব্যতিক্রমী নায়ক হিসাবে অনেক মার্কিন-শত্রুর কাছেও তাঁহার একটি আলাদা পরিচিতি ছিল। পশ্চিম এশিয়া কিংবা আফ্রিকায় এখনও কিছু সম্ভ্রম তাঁহার জন্য রক্ষিত, লিবিয়া সিরিয়া মিশর এবং আফগানিস্তান সত্ত্বেও। এই একটি ঘটনাই অবশিষ্ট সব সম্ভ্রম ধ্বস্ত করিতে সমর্থ। অতঃপর ইতিহাস বুশ-ওবামাকে এক বন্ধনীতে ফেলিয়া একটি যুগ বর্ণনা করিবে: ওবামার ভোটাররা কি ইহা দুঃস্বপ্নেও ভাবিয়াছিলেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.