|
|
|
|
ভোট মরসুমে ভীতি ছড়াচ্ছে
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
|
|
নরেন্দ্র মোদীর পটনার সভায় বিস্ফোরণের তদন্ত এগোচ্ছে নিজস্ব পথে। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ঘুম কেড়েছে আরও এক চিন্তা। সামনে ভরা ভোট-মরসুম। প্রথমে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট, তার পর লোকসভা ভোট। এই সময়ে কী ভাবে হামলার ছক কষছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন? কারণ, তাদের পাণ্ডা ইয়াসিন ভটকলকে গ্রেফতার করেও যে মুজাহিদিনের ডানা ছাঁটা যায়নি, সেটা এখন স্পষ্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, হামলার প্রস্তুতি পুরোদমে শুরুও করে দিয়েছে দেশজ জঙ্গি সংগঠনটি। বহুমুখী পন্থায় এগোচ্ছে তারা। মগজ ধোলাই করে বা টাকার লোভ দেখিয়ে জঙ্গি দলে নয়া শিক্ষানবিশ নিয়োগ এবং সীমান্তপারের মদতে হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদায়বেলায় দেশে সার্বিক অস্থিরতা তৈরি করা আপাতত তাদের লক্ষ্য। গোয়েন্দারা এ-ও বলছেন, হিন্দু মৌলবাদ-কে ‘পাল্টা মার’ দিতে উদ্যত সংখ্যালঘু জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টায় কসুর করছে না সীমান্তপারের শক্তি।
বস্তুত, ১৯৯১ সালে অযোধ্যায় বিতর্কিত কাঠামো ধ্বংস এবং ২০০২-এ গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সমর্থকদের কামরায় আগুন লাগা এই দু’টি ঘটনার পরেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাম জন্মভূমি আন্দোলনের হাত ধরে হিন্দু মৌলবাদী ভাবনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই এ দেশে পাল্টা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে এক নয়া সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তানি সন্ত্রাস নয়, ভারতীয় সংখ্যালঘু যুবকদেরই সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার নতুন আতঙ্ক। জামাত-ই-ইসলামি-র প্রভাব ছিলই। তাতে ঘৃতাহুতি দেয় ওই দুই ঘটনা। সুযোগ বুঝে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিমি (স্টুডেন্টস ইসালিমক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া) এবং তার পর ক্রমশ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জন্ম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “শুধু গুজরাতের দাঙ্গা নয়। আমেরিকায় ৯/১১-র হামলার পরে অনেক নির্দোষ মুসলমানকেই হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। সিমি-র সদস্যদের তখন বোঝানো হয়েছিল, মুসলমানদের গোটা পৃথিবী থেকেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ৯/১১-র পরে আমেরিকার ওসামা বিন লাদেন-বিরোধী অভিযান তা বোঝানো আরও সহজ করে দেয়।” সে সময়ে সিমি-নেতৃত্ব বিন লাদেনকে ‘প্রকৃত মুজাহিদ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। আজ এত বছর পরেও পটনার বিস্ফোরণের সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে বিন লাদেনের ছবিই উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দা-কর্তারা তাই আশঙ্কা করছেন, এ দেশের সংখ্যালঘু যুবকদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা চলছে এখনও। কখনও তা করছে ইয়াসিন ভটকল, কখনও তেহসিন আখতার। ভটকলকে জেলে পোরা হলেও লোকসভা নির্বাচনের আগে আরএসএস তথা উগ্র হিন্দুত্বের জুজু দেখিয়ে সেই চেষ্টা নতুন করে শুরু হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এমনিতেই মুজফ্ফরনগর থেকে শুরু করে জম্মুর কিস্তওয়ারে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এ সব জায়গায় সংখ্যালঘুরাই নিশানা হচ্ছেন বলে প্রচার চালাচ্ছে মৌলবাদী সংগঠনগুলি। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এর পর সংখ্যালঘু যুবকদের বোঝানো হতে পারে যে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে তাঁদের বিপদ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ অবশ্য দাবি করছেন, এখন আর শুধু মগজ ধোলাইয়ে কাজ হচ্ছে না। তার সঙ্গে নাশকতার জন্য নগদ টাকাও ছড়ানো হচ্ছে। গোয়েন্দা-কর্তাদের বক্তব্য, পটনা বিস্ফোরণের মূল ষড়যন্ত্রী তেহসিন আখতার নাশকতার পুরস্কার হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা নগদ দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। অগ্রিম হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়াও হয়। বিস্ফোরণের পরে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ধৃতরাই জেরার মুখে এ কথা জানিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। অতীতেও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নাশকতার ঘটনায় মোটা টাকা ছড়ানো হয়েছিল। ফলে মগজ ধোলাই বা প্রশিক্ষণ ছাড়াও এখন অনেকে নাশকতায় যোগ দিচ্ছে। যার ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধগয়া বা পটনায় কম মাত্রার বিস্ফোরণ ঘটেছে। পটনাতেই দেখা গিয়েছে, হামলা চালানোর আগে জঙ্গির হাতেই ফেটে গিয়েছে বোমা।
কিন্তু এত টাকা আসছে কোথা থেকে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সন্ত্রাসবাদীরা এ দেশের হলেও তাতে উস্কানি আসছে সীমান্তের ও-পার থেকেই। সিমি থেকে যারা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে গিয়েছিল, তারা হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই (ডিরেক্ট অ্যাকশন)-এর কথা ভেবেছিল। তখন তাদের সাহায্য করেছিল দুবাই, করাচি থেকে শুরু করে মুম্বই, কলকাতার মাফিয়ারা। যারা আসলে আইএসআই ও পাকিস্তানি জঙ্গি-সংগঠনগুলির হাতের পুতুল। ডেভিড কোলম্যান হেডলি এই কথাই খোলসা করে জানিয়ে দিয়েছিল। এখন সেই মাফিয়ারা না থাকলেও আইএসআই বা লস্কর-ই-তইবার মদত অটুট রয়েছে। আর সেই মদতে ভর করেই আগামী দিনে নাশকতার ছক কষছে বেনিয়াপুকুরের মফিদুল ইসলাম লেনের ছেলে আমির রেজা খান-রা।
এই নাশকতার একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই ভটকলের গ্রেফতারের পর ঝিমিয়ে পড়া ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন-কে চাঙ্গা করা। পটনার পর তাই দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, জয়পুর, বারাণসী, লখনউয়ের বড় শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকছে। তার ওপর বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা ইতিমধ্যেই ভোটের প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন। তাঁদের সভাগুলিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাটাও এখন গোয়েন্দাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে নাশকতার অভিযোগে ধৃতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে গেলেও যে বিরূপ ফল হতে পারে, সে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক নেতারাই। যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কথায়। নীতীশ বলেছেন, “পটনা কাণ্ডের দোষীদের কাঠগড়ায় তুলে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। তাতেও অবশ্য রাজনৈতিক রং দেওয়ার
চেষ্টা হবে।” |
পুরনো খবর: মুজাহিদিনকে সন্দেহ, সময়ই প্রশ্ন নীতীশের |
|
|
|
|
|