নিহত ৫, জখম ৭০
মুজাহিদিনকে সন্দেহ, সময়ই প্রশ্ন নীতীশের
বুদ্ধগয়া মহাবিহারে জঙ্গি-হামলার সঙ্গে পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মিল খুঁজছেন গোয়েন্দারা। আর নীতীশ কুমারের আঙুল বিস্ফোরণের দিন ও সময়ের দিকে।
গাঁধী ময়দানে আজ নরেন্দ্র মোদীর সভা শুরুর আগেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বিহারের রাজধানী। পুলিশের বক্তব্য, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম মাত্রার বিস্ফোরক (লো-ইনটেনসিটি বম্ব) ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, এ ধরনের হামলায় জড়িত রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এ দিনের বিস্ফোরণের পিছনেও রয়েছে এই সংগঠনই। ওই সন্দেহের পক্ষে কিছু প্রমাণও মিলেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আজ সকালে পটনা স্টেশনে বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় ইমতিয়াজ আনসারি নামে এক দুষ্কৃতীকে। আটক করা হয়েছে আরও ৪ জনকে। রাঁচির বাসিন্দা ইমতিয়াজ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য বলে তদন্তকারীদের অনুমান। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, ধৃতের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফোন নম্বরও পাওয়া গিয়েছে।
বিস্ফোরণে রক্তস্নান। নরেন্দ্র মোদীর সভা শুরুর আগে। রবিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।
জেরায় সে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও পুলিশের দাবি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এতে তদন্তের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হবে। ইমতিয়াজ শুধু নয়, রাঁচি পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এস এন প্রধান রাঁচিতে বলেছেন, “পটনা বিস্ফোরণে জড়িতদের অনেকেই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা।” ইমতিয়াজকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ দিন রাতেই রাঁচির কিশোরগঞ্জ এলাকার ভুঁইয়াটোলিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। রাঁচির এইচইসি এলাকা থেকে দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের পরপরই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। হামলার বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নিতে থাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। বিস্ফোরণের তদন্তে এনআইএ-এর সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান নীতীশ। বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়ার পরপর বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন তিনি। রাজ্যের নিরাপত্তা নয়, রাজনীতি নিয়েই তিনি বেশি ভাবিত বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। আজও বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করেন, “এই সভা যে হবে, ছ’মাস আগে থেকে জানত নীতীশ প্রশাসন। তা সত্ত্বেও ওই বিস্ফোরণ। এতেই প্রমাণিত হচ্ছে, নীতীশের পুলিশ কতটা ব্যর্থ!” একই ভাবে বিবৃতি দিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখিও।
নীতীশের কিন্তু বক্তব্য, এই ধরনের কোনও হামলা হতে পারে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন কোনও আগাম হুঁশিয়ারি ছিল না। এটা কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ হতে পারে।” আজ, বিস্ফোরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিহার সরকারের এক মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন যে, এই ঘটনার মধ্যে ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হচ্ছে, সন্ত্রাস নয়। নীতীশকে দুর্বল করাই এই বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিল বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু নীতীশ নিজে সাংবাদিক বৈঠকে সে পথে হাঁটেননি। তিনি বুঝেছেন, প্রমাণ ছাড়া ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলাটা ভুল চাল হবে। তাই তিনি কোনও দল বা গোষ্ঠীর প্রতি দোষারোপ করেননি।
মোদী বা সঙ্ঘ পরিবারের নাম না করেই নীতীশ মনে করিয়ে দেন, বিস্ফোরণের জন্য যে দিন ও সময় বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটাকেও উপেক্ষা করা যায় না। তাঁর কথায়, “যা ঘটেছে, সেটা বিহারের পরম্পরা নয়।... বিস্ফোরণের দিনক্ষণ ইঙ্গিত করছে, রাজ্যের পরিবেশ দূষিত করার চেষ্টা চলছে। যে সময় বিস্ফোরণটা হয়েছে, সেটা খুবই দুশ্চিন্তার।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরপিএন সিংহও সরাসরি জঙ্গিদের দিকে আঙুল তুলতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, “এটা কোনও জঙ্গি সংগঠনেরই কাজ, এখনই সেটা বলে দেওয়া যায় না।”
পটনার সিনিয়র পুলিশ সুপার মনু মহারাজ বলেন, “বুদ্ধগয়া এবং পটনায় একই ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।” ধারাবাহিক ওই বিস্ফোরণের তদন্তে পটনায় পৌঁছেছে এনআইএ এবং এনএসজি-র তদন্তকারীরা। রাতেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তাঁরা। সংগ্রহ করেন নমুনাও।
কী কারণে হামলা করা হল? পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, “রীতিমতো পরিকল্পনা করেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাসের আবহাওয়া তৈরির চক্রান্ত কষেছিল হামলাকারীরা। সভাস্থলে আতঙ্ক ছড়ালে পদপিষ্ট হয়ে অনেক বেশি প্রাণহানিও হতে পারত।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ৩-৪টি দলে ভাগ হয়ে পটনার বিভিন্ন প্রান্তে বিস্ফোরক রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। আজ সকালে পটনা জংশনে বিস্ফোরণে হত যুবক ওই দলেরই সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। বিস্ফোরকের ‘টাইমার’ ঠিক করার সময় বোমাটি ফেটে তার মৃত্যু হয়। তবে, তার নাম-পরিচয় জানানো হয়নি। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় ইমতিয়াজকে।
এ বছরেরই ৭ জুলাই বুদ্ধগয়া মহাবিহারে পরপর বিস্ফোরণে ২ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী-সহ ৫ জন জখম হয়েছিলেন। ওই হামলাতেও ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’-এর নাম সামনে এসেছিল। বুদ্ধগয়ায় পরপর বিস্ফোরণের পর, ২৯ অগস্ট বিহারের নেপাল-সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা ইয়াসিন ভটকলকে।
পুলিশের বক্তব্য, দ্বারভাঙা জেলায় তার সংগঠনের জাল ছড়িয়েছিল ইয়াসিন। তরুণ-যুবাদের সন্ত্রাসের পথে এগিয়ে দিচ্ছিল সংগঠনের ‘দ্বারভাঙা মডিউল’-ই। এখনও তারা সক্রিয়।
আজকের ঘটনায় তা-ই ওই জঙ্গিদলের সদস্যদের জড়িত ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের। বিহারের উচ্চপদস্থ এক পুলিশকর্তার দাবি, কে বা কারা পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, দু’-তিন দিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

কোথায় কখন


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.