নিউ টাউনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলির সিগন্যালে কোনও ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা নেই। অথচ প্রায় প্রতিটি মোড়েই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত থাকে নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে অফিসযাত্রীদের ভিড়। কিন্তু ক্যামেরা না থাকায় কোনও পুলকার যাত্রীকে তুলে কোন দিকে যাচ্ছে, তার কোনও রেকর্ডই থাকছে না পুলিশের কাছে। অভিযোগ, সেই সুযোগে নিউ টাউন এলাকায় একের পর এক ঘটছে অপহরণ থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক ঘটনা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নিউ টাউনের অদূরেই কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যেখানে ক্যামেরা বসেছে, সেখানে নিউ টাউনের মতো আধুনিক উপনগরীতে কেন তা বসবে না? বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতার মতো বিধাননগর কমিশনারেটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সিগন্যালে শীঘ্রই ক্যামেরা বসানো হবে। এর জন্য টাকার কোনও অভাব হবে না।
সম্প্রতি শহরে এক মহিলাকে গণধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দুষ্কৃতীরা ওই মহিলাকে পুলকারে তুলেছিল নিউ টাউনের চিনার পার্ক মোড় থেকে। কিন্তু জনবহুল চিনার পার্ক থেকে ওই মহিলাকে কখন গাড়িতে তোলা হয় ও গাড়িটি কোন দিকে যায়, তার রেকর্ড ছিল না পুলিশের কাছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, চিনার পার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে ক্যামেরা থাকলে ফুটেজের সাহায্যে গাড়ির নম্বর বা গাড়িকে চিহ্নিত করা সহজ হত। ওই অপহরণের ঘটনাই নয়। অভিযোগ, আগেও নিউ টাউনের কিছু এলাকায় রাস্তাতেই নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে।
নিউ টাউনের ইউনিটেক মোড় থেকে শুরু করে ক্যানসার হাসপাতাল মোড়, সিটি সেন্টার, নারকেলবাগান মোড়, নিউ টাউন বাস স্ট্যান্ড, আকাঙ্খার পাঁচ মাথা মোড় প্রতিটি জায়গায় প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যযাত্রী ও অফিসযাত্রীর যাতায়াত। বিশেষত নিউ টাউনের শপিং মলগুলিতে বেশি রাত পর্যন্ত মানুষজনের যাতায়াত চলে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির বিভিন্ন শিফ্ট শেষ হয় বিভিন্ন সময়ে। ফলত, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর অফিসযাত্রীর ভিড় লেগেই থাকে। তাঁদের প্রধান ভরসা বলতে পুলকারই। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বললেন, “বাসে এত ভিড় হয় যে বাধ্য হই পুলকারে উঠতে। সম্প্রতি যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার পরে ওই পুলকারে নিরাপত্তার যথেষ্ট অভাব বোধ করি।”
নিউ টাউনের গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা শপিং মলের সামনে পুলিশের নিরাপত্তা বলতে সেই মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থা। বিধাননগর কমিশনারেটের অবশ্য দাবি, গভীর রাত পর্যন্ত নিউ টাউনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে পুলিশি টহলদারি থাকে। থাকে পুলিশের জিপ ও ভ্রাম্যমাণ মোটরবাইকও। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারাও মেনে নিয়েছে, সব মোড়ে বা সব শপিং মলের সামনে সর্বক্ষণ পুলিশ মোতায়েন কার্যত অসম্ভব। বিধাননগরের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকরও কার্যত স্বীকার করে নেন, নিউ টাউন মোড়ের সিগন্যালে ক্যামেরা বসানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, “নিউ টাউনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সিগন্যালে ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষত সিটি সেন্টার (২)-এর সামনে পাঁচটি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে।” |