কারখানার বাইরের রাস্তায় বোমার আঘাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও এক যুবক। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কড়েয়া থানা এলাকার তিলজলা রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যেই বোমা ছোড়ে একদল দুষ্কৃতী। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত আমির ও সাবির নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত নানা, রোহিত, কুরবান, বিজি, সামশের, সিকান্দারের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা সন্ধ্যায় আধ ঘণ্টা ধরে পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতু অবরোধ করে রাখা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানি গিয়েছে, মৃত মহম্মদ ইয়াসিন (৩৫) বিহারের বাসিন্দা। এই এলাকার একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় তিনি কাজ করতেন। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ খাবার খেয়ে তিনি ও মালিক মহম্মদ আক্রম কারখানার বাইরে ফুটপাতের উপর ঘুমোতে যান। একদল দুষ্কৃতী আচমকাই তাঁদের লক্ষ করে বোমা ছোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বোমাটি সরাসরি ইয়াসিনের মাথাতেই লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। আক্রম গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রমের চোখ ও পায়ে বোমার আঘাত লেগেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাজ সেরে রোজকার মতো এ দিনও কারখানার বাইরে রাখা খাটে ঘুমোতে গিয়েছিলেন ইয়াসিন ও আক্রম। তার পরেই রাতে এলাকায় নানা-সহ একদল দুষ্কৃতীদের গালিগালাজ করতে শোনা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তার পরেই তারা কারখানার দিকে বোমা ছোড়ে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আক্রমের ভাই গুলাম মুস্তাফা বলেন, “কারখানা লাগোয়া আমাদের ঘর। আমরা ভিতরে ঘুমোচ্ছিলাম। আক্রম ও ইয়াসিন বাইরে শুয়েছিল। মাঝরাতে বিকট আওয়াজে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দরজার ধাক্কা মারার শব্দ শুনতে পাই। তড়িঘড়ি দরজা খুলতেই দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় আক্রম দাঁড়িয়ে। তাঁর ডান চোখটি নেই। সেখান দিয়ে রক্তের স্রোত নেমে আসছে। কী ঘটেছে তা বলার মতো ক্ষমতা তাঁর ছিল না। এর পরে বাইরে বেরিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় ইয়াসিন পড়ে রয়েছে। তাঁর মাথাটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন।” খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কড়েয়া থানার পুলিশ। ইয়াসিনের দেহটি ময়না তদন্তের পাঠানো হয়েছে। আজ, সোমবার ইয়াসিনের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, নানার মা খুটিয়ার এই এলাকায় একটি চোলাই মদের দোকান রয়েছে। সেটি এই কারখানা লাগোয়া। মাস কয়েক আগে আবগারি দফতর চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। তার কিছুদিন পরেই তোলাবাজি-সহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ নানা সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। মাস খানেক আগে তারা জেল থেকে ছাড়া পায়। পুলিশের অনুমান, এই কারখানার লোকেরাই যে এই ব্যবসার সম্পর্কে পুলিশে খবর দিয়েছিল এমন ধারণা দুষ্কৃতীদের হয়েছিল। এর প্রতিশোধ নিতে এবং জেল থেকে ফিরে এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতেই এই বোমাবাজি বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবে জেল থেকে ফিরে এসেও তারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত। তোলাবাজি করত। এই কারখানাটিতেও তারা তোলাবাজি করতে চেয়েছিল। যাতে তাঁরা রাজি হয়নি। ফলে এলাকায় তারা নিজেদের প্রভাবও বিস্তার করতে পারছিল না। |