খুন নাকি দুর্ঘটনা বিতর্কিত ফারাওয়ের মৃত্যু ঘিরেও তৈরি নয়া বিতর্ক!
তুতানখামেন। ফারাও রাজত্বের কনিষ্ঠতম শাসক। ইতিহাস বলছে, মাত্র উনিশ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। কিন্তু কী ভাবে? নানা মুনির নানা মত। তাতে নয়া সেংযাজন, মিশরের তুতানখামেন-বিশেষজ্ঞ প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস নাউনটনের গবেষণা। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, তুতানখামেনের যে খুনের তত্ত্ব প্রচলিত ছিল, তা সঠিক নয়। বরং তাঁর গবেষণা বলছে, যুদ্ধের ময়দানে কোনও ভাবে ঘোড়ার গাড়ির তলায় চাপা পড়েছিলেন তুতানখামেন। মৃত্যু হয় তাতেই।
নিজের দাবির সমর্থনে একাধিক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছিলেন ক্রিস। প্রথম দিকে অবশ্য নিছক কৌতূহলের জেরেই ময়না-তদন্ত করান তুতানখামেনের মমিটির। বাদ পড়েনি এক্স-রে, সিটি স্ক্যানের মতো আধুনিক পরীক্ষাও। আর তার পরই নতুন তত্ত্ব তুলে ধরেন তিনি। ক্রিসের মতে, ঘোড়ার গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন তুতানখামেন। আর তাতেই সম্পূর্ণ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল দেহটি। চাকার তলায় ভেঙে গিয়েছিল বাঁ-হাত। ভেঙে গিয়েছিল বুকের হাড়ও। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল মাথার খুলি। এ হেন ক্ষতবিক্ষত দেহ সমাহিত করতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল বলেই ধারণা ক্রিসের। তবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে তাঁর আবেদন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরও গবেষণা হোক। |
|
|
দগ্ধ তুতানখামেনের মমি।
|
ডিএনএ-র ভিত্তিতে তৈরি ছবি। |
|
তথ্য বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩৩ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে রাজত্বের হাল ধরেছিলেন তুতানখামেন। ন’বছর সিংহাসন সামলানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ১৩২৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তরুণ ফারাওয়ের। এর পর নীল নদ দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। কেটেছে বহু বছর। ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ও জর্জ হার্বার্ট নামের দুই প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রথম সন্ধান পান তুতানখামেনের পাথরের সমাধিটির। সমাধির ভিতরে মমিটি প্রায় অক্ষত ছিল। মমির পাশ থেকেই উদ্ধার হয়েছিল পাকা সোনা দিয়ে বানানো রত্নখচিত মুখোশও। কায়রো সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত সেই মুখোশ এখনও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
তবে মৃতদেহটি মোটেও অক্ষত ছিল না। কালো হয়ে পুড়ে গিয়েছিল ১৯ বছরের সেই তরুণ দেহ। ছিল অসংখ্য ক্ষতও। যা দেখে কিছু দিন আগেই মিশরের এক দল গবেষক দাবি করেছিলেন, সমাহিত করার আগে রহস্যজনক ভাবে আচমকা আগুনে পুড়ে গিয়েছিল ফারাও রাজত্বের এই অষ্টাদশ উত্তরাধিকারীর দেহ। তবে এই পুড়ে যাওয়ার কারণ কী, তা নিয়ে রয়েছে একাধিক মত।
কারও মতে, মমি তৈরিতে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হতো, তার বিক্রিয়াতেই ঘটেছিল দুর্ঘটনা। কারও বা মত, দীর্ঘদিন ধরে বিষ প্রয়োগ করে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। আর সেই বিষের কারণেই কালো হয়ে গিয়েছিল তাঁর গায়ের রং। ওই রং দেখেই পোড়া বলে ভ্রম হয় গবেষকদের। ১০ নভেম্বর একটি ইংরেজি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হতে চলেছে সেই গবেষণাগুলির ভিত্তিতে তৈরি তথ্যচিত্রও। সেই বিতর্কিত মৃত্যু-ইতিহাসেই নয়া অধ্যায় শুরু করল ক্রিসের তত্ত্ব। |