উচ্চতার লড়াইয়ে নজর শহরের
পুজোর অনেক আগে থেকেই কানাঘুষো আলোচনা। এ পাড়া-ও পাড়া থেকে ভেসে আসা খবরে কখনও চাপা উল্লাস, কখনও চিন্তার ভাঁজ। প্রতিমা তৈরির সময়ে অন্যের মণ্ডপের সামনে দিয়ে যেতে যেতে আড় চোখে মেপে নেওয়া, অন্দরে কতটা বাড়ছে কালী।
কালীপুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই এ সব চেনা দৃশ্য আসানসোলের নানা এলাকায়। কে কত উচ্চতার প্রতিমা গড়লেন, সে নিয়ে যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা। পুজোর আগে মুখ খুলতে নারাজ সবাই। তবে অন্য কেউ প্রতিমার উচ্চতায় এগিয়ে যাচ্ছে, এমন খবর এলে ক্লাবকর্তাদের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়। খবর উল্টো হলে আবার চওড়া হাসি। উচ্চতার এই লড়াইয়ে এ বারও মেতে উঠেছে আসানসোল। শহরবাসীর উৎসাহ দেখে এ বছর তাতে সামিল হয়েছে এমন কিছু পুজোও, এই লড়াই থেকে যারা আগে নিজেদের বিরত রেখেছিল।

গোপালনগর ক্রিকেট ক্লাব সর্বজনীন।
এই শিল্পশহরে উচ্চতার কালীর রেওয়াজ প্রথম শুরু করে আসানসোল গ্রাম লাগোয়া রামসায়র ময়দানের বিদ্রোহী সঙ্ঘ সর্বজনীন। ক্লাবের কর্তাদের দাবি, পুজোর বয়স যত বছর, প্রতিমার উচ্চতাও হয় তত ফুট। এ বার ৩৫তম বর্ষে প্রতিমা ৩৫ ফুটের। পুজোয় রামসায়র ময়দানে মেলা বসে, হয় অনুষ্ঠানও। কিন্তু শহরবাসীর তাতে বিশেষ হেলদোল নেই। তাঁরা শুধু দেখতে চান, কত বড় হল প্রতিমা।
আসানসোলের গোপালনগর ক্রিকেট ক্লাব সর্বজনীন তিন বছর ধরে বড় প্রতিমা গড়ছে। ক্লাবের অন্যতম প্রধান কর্তা অমর চট্টোপাধ্যায় জানান, গত বার তাঁরা ৩০ ফুটের প্রতিমা গড়েছিলেন। কিন্তু শহরের আর একটি ক্লাব তার চেয়েও বড় মূর্তি গড়েছে জেনে এলাকাবাসীর মুখ ভার হয়েছিল। তখনই তাঁরা দাবি জানিয়েছিলেন, পরের বার যেন কোনও ভাবে অন্যদের থেকে ছোট প্রতিমা না হয়। অমরবাবু বলেন, “এ বার তাই ৩৫ ফুটের মূর্তি বানিয়েছি আমরা।”
প্রায় ২৯ বছর ধরে শ্যামাপুজোর আরাধনা করছে আসানসোলের বুধা লাগোয়া দেশপ্রেমী ক্লাব। এলাকার একমাত্র সর্বজনীন এই পুজোয় প্রতি বার ছিমছাম মণ্ডপে মানানসই প্রতিমা দেখে এসেছেন পাড়ার লোকজন। কিন্তু এ বছর পরিবর্তন এনেছেন তাঁরাও। ক্লাবের সম্পাদক জয়ন্ত দাঁ বলেন, “এ বার আমাদের মূর্তি ৪০ ফুটের।” হঠাৎ করে রীতি ভেঙে উচ্চতার দৌড়ে সামিল হলেন কেন, সে প্রশ্নে জয়ন্তবাবুর দাবি, বড় প্রতিমা গড়ার ইচ্ছা তাঁদের অনেক দিনের। কিন্তু সে জন্য ভাল শিল্পী পাচ্ছিলেন না। তাই বেশ কয়েক বছর চুপ করে বসে ছিলেন। এ বার এক জন ভাল শিল্পীর সন্ধান পাওয়ায় আর সুযোগ হাতছাড়া করেননি। প্রথম বারেই ৪০ ফুটের মূর্তি গড়ে কিস্তিমাত করতে ঝাঁপিয়েছেন তাঁরা।

রামসায়র ময়দানের বিশালাকার প্রতিমা।
তিরিশ বছরের প্রথা ভেঙেছে আসানসোল শহরের অদূরে মিঠানি গ্রাম সর্বজনীনও। সুন্দর মণ্ডপ, মানানসই প্রতিমা ও আলোকসজ্জার জন্য এলাকায় এই পুজো বরাবর জনপ্রিয়। কিন্তু এ বার একটু অন্য রকম ভেবেছেন কর্মকর্তারা। সংগঠকদের পক্ষে চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় জানান, এ বার তাঁদের মণ্ডপে থাকছে তিরিশ ফুটের দেবীমূতির্র্। সে জন্য বাজেটও বেড়েছে। চিন্তাহরণবাবু বলেন, “অন্যেরা যখন মূর্তির উচ্চতা নিয়ে গর্ব করতেন, চুপ করে শুনতে হত। এ বার আমরাও বলতে পারব।”
পুজো কমিটিগুলি জানায়, শিল্পী নিজে মণ্ডপে থেকে এই সব বড় প্রতিমা গড়েন। পুজো শেষে বিশাল এই প্রতিমা বিসর্জন হয় কী ভাবে? ক্লাবের কর্তারা জানান, কাছাকাছি জলাশয়ে পাম্প বসিয়ে পাইপ দিয়ে জল এনে পুজোর বেদিতেই মূর্তি গলানো হবে। অর্থাৎ, আবাহন থেকে বিসর্জন, সব ব্যবস্থাই মোটামুটি পাকা করে ‘হাইটের ফাইটে’ নেমেছে শহর। আসর মাত করল কে, শহরে তরজা এখন সে নিয়েই।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.