পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা ট্রাক উদ্ধার করতে থানায় গিয়েছিলেন এক ট্রাকমালিক। আদালতের নির্দেশের কাগজপত্র ছিল তাঁর কাছে। গিয়ে দেখেন, থানা থেকে বহু দূরে মুম্বই রোডের ধারে দাঁড় করানো আছে তাঁর ট্রাক। কিন্তু দু’টি চাকা উধাও। হইচই শুরু করেন ওই ব্যক্তি। বিব্রত থানার আধিকারিকেরা। কিন্তু শেষমেশ দুই চাকাহীন ‘বিকলাঙ্গ’ সেই ট্রাকই ফেরত নিতে বাধ্য হন মালিক।
হাওড়া জেলায় মুম্বই রোডের উপরে প্রায় প্রতি দিন ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। মুম্বই রোড চার লেন হওয়ার পরে সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি, মোটরবাইক আটক করে পুলিশ। কোনও ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকার জন্যও আটক করা হয় গাড়ি। কখনও-সখনও মূল্যবান জিনিসপত্র থাকে সে সব পণ্যবাহী গাড়িতে। ডোমজুড়, সাঁকরাইল, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া এবং বাগনান থানার পুলিশের ক্ষেত্রে এ সব প্রায় রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাজেয়াপ্ত করার পরে সেই গাড়ি কোথায় রাখা হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই হাওড়া জেলা পুলিশের হাতে। নিট ফল, আইনত পুলিশের হেফাজতে থাকলেও মুম্বই রোডের ধারেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয় গাড়িগুলি। কখনও আবার ধারেকাছের পেট্রোল পাম্প বা ধাবার পাশে রাখা হয় আটক ট্রাক, লরি, মোটরবাইক কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবহারের ছোট গাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, হোটেলকর্মী বা পাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদেরই পুলিশ বলে যায় গাড়ির উপরে নজর রাখতে। |
কিন্তু কাজের ফাঁকে সেই দায়িত্ব কতটা পালন করেন সেই কর্মীরা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তা ছাড়া, আইনত তাঁদের কোনও দায়ও নেই নজর রাখার। ফলে প্রায়শই গাড়ি ফেরত নিতে এসে মালিক জানতে পারেন, যন্ত্রাংশ চুরি গিয়েছে। কোথাও আবার ‘নজরদার’রা টাকা চান মালিকদের কাছে বলেও অভিযোগ।
এ সব সমস্যা অজানা নয় জেলা পুলিশের কর্তাদের। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মুম্বই রোডে যে হারে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি রাখার সমস্যাও দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। নিরুপায় হয়েই সংশ্লিষ্ট থানাগুলি নিজের মতো করে বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। জেলা পুলিশ (গ্রামীণ)-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি রাখার জন্য রাস্তার ধারে স্থায়ী জায়গা খোঁজ করা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, অনেক সময়ে ট্রাকের মূল্যবান মালপত্র নিরাপদে রাখতে ট্রাকমালিকেরা নিজেরাই টাকা দিয়ে স্থানীয় কাউকে দিয়ে গাড়ি দেখভালের ব্যবস্থা করেন। টাকা দিলেও দেন স্বেচ্ছায়।
পুলিশ জানায়, আদালতে যে ‘সিজার-লিস্ট’ জমা দিতে হয়, তার মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা গাড়ির উল্লেখ রাখতে হয়। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে গাড়ি পুলিশের হেফাজতেই রাখতে হয়। থানাগুলি আবার মুম্বই রোড থেকে বেশ কিছুটা দূরে। গাড়িগুলিকে থানা পর্যন্ত টেনে আনা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় নয় না বলে জানাচ্ছে জেলা পুলিশের একটি সূত্র। আনলেও রাখা হবে কোথায়, সেই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে রোদে-জলে-ঝড়ে মুম্বই রোডের ধারেই অসুরক্ষিত ভাবে পড়ে থাকে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়িগুলি।
বিভিন্ন থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, একেই পুলিশ কর্মীর সংখ্যা কম। দৈনন্দিন আইন-শৃঙ্খলা দেখতেই মাথার ঘাম পায়ে পড়ে। তার উপরে বাজেয়াপ্ত করা গাড়ির উপরে নজরদারি সত্যিই সম্ভব নয়। যদিও গাড়ির ক্ষতি হলে তার দায় বর্তায় পুলিশের উপরেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়ি-মালিক জানান, সামান্য কারণে তাঁর গাড়ি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। আদালতের নির্দেশে তিনি গাড়ি আনতে গিয়ে দেখেন, অযত্নে-অবহেলায় গাড়িটির হাল খারাপ। ওই ব্যক্তির কথায়, “যে অবস্থায় গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, সেই অবস্থাতেই গাড়িটি আমাকে ফের দেওয়ার কথা ছিল পুলিশের।” |