র্যান্টি মার্টিন্সের জন্যই কলকাতায় থেকে গেলেন এলকো সাতোরি!
কালীপুজোর বিকেলে কল্যাণীতে র্যান্টি জ্বলে না উঠলে হয়তো আজই ইউনাইটেডের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে যেতেন ডাচ কোচ।
সালগাওকর ম্যাচে হারের পর র্যান্টির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন এলকো সতোরি। বলে দিয়েছিলেন, “ক্লাবের থেকে যে টাকা র্যান্টি নিচ্ছে, সেই দায়বদ্ধতা মাঠের পারফরম্যান্সে থাকা উচিত।” তোপ দাগার ছয় দিন পর সব সমালোচনার জবাব দিলেন টানা তিন বার আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
এলকোর স্বেচ্ছ্বায় ‘চাকরি’ ছেড়ে যাওয়া রুখে তো দিলেনই, পাশাপাশি সুভাষ ভৌমিক প্রথম জয়ের স্বাদও পেলেন না র্যান্টির জন্যই! গোয়ার পারিবারিক ক্লাবে টিডি হিসাবে ফের যোগ দেওয়ার পর এটা ছিল সুভাষের দ্বিতীয় ম্যাচ। এগিয়ে গিয়েও সেই ম্যাচটা জিততে না পারার আফশোস যে হচ্ছে সেটা সরাসরি না বললেও গতবারের চ্যাম্পিয়ন কোচ সুভাষ কিন্তু বলে দিয়েছেন, “শুধু বুদ্ধি দিয়ে ৬০-৬৫ মিনিটের বেশি খেলা যায় না।”
ইউনাইটেড স্পোর্টস যদি এ দিন হেরে যেত তা হলে পদত্যাগ করে দেশে ফিরে যাবেন মনস্থির করে ফেলছিলেন এলকো। ম্যাচের পর নিজেই সে কথা বলেও দিলেন। “দু’গোল খাওয়ার পর ঠিক করে ফেলেছিলাম পদত্যাগ পত্র দিয়ে চলে যাব। এখন অবশ্য পরের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।”
সুভাষ বুদ্ধিমান কোচ। তিনি জানতেন র্যান্টিকে আটকাতে পারলেই ম্যাচটা জেতা সম্ভব। সব চেষ্টাই করেছিলেন তিনি। র্যান্টির জন্য ম্যান মাকির্ং না থাকলেও জোনাল মাকির্ং রেখেছিলেন তিনি। ইউনাইটেড স্ট্রাইকার বল ধরা মাত্রই দু’-তিন জন মিলে তাঁকে ঘিরে ধরছিলেন। তবু গোলমেশিনকে আটকাতে পারেননি সুভাষ। শেষপর্যন্ত কেল্লা ফতে করে দেন র্যান্টিই। |
গোলের নায়ক র্যান্টিকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। শনিবার। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য। |
দেওয়ালির আলোয় যখন ভাসছে গোটা দেশ। ঠিক সেই সময়ই ইউনাইটেডকে আলো এনে দিলেন র্যান্টিই। আই লিগে ইউনাইটেডের প্রথম দু’টি ম্যাচে— রাংদাজিদ ও স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে গোল পেয়েছিলেন। মাঝে পাঁচ ম্যাচের দীর্ঘ ব্যবধান। এ দিন আবার গোলে ফিরে র্যান্টি বলে দিলেন, “গোল না পেয়ে খুব হতাশ লাগছিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আজ জোড়া গোল করার পর খুব ভাল লাগছে। আত্মবিশ্বাসও ফিরে এসেছে।”
সুভাষের দলের বিরুদ্ধে শুরুটা ভালই করেছিল এলকোর দল। বিনীত দু’টি সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করলে প্রথম কুড়ি মিনিটে দু’ গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইউনাইটেড। কিন্তু এরপর ম্যাচের দখল নেন ডেঞ্জিল-লেনিরা। চার্চিলের বছর আঠারোর মিডিও আলেসের দুরন্ত গতির সামনে তখন দাঁড়াতেই পারছিলেন না দীপকরা। মাঝ মাঠ থেকে তিন জনকে কাটিয়ে আলেসের নিখুঁত সেন্টার থেকে বলবন্তের জোরালো শটে এগিয়ে যায় চার্চিল। বিরতির ঠিক পরেই ব্যবধান বাড়ান পঞ্জাবের বলবন্তই।
দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পরই এলকো দু’টি ভাল পরিবর্তন ঘটান দলে। যার জেরে সুভাষের টিম কেঁপে যায়।
এক) আসিফকে তুলে চতুর্থ বিদেশি হিসেবে সদ্য দলে যোগ দেওয়া হাসান হামিদকে নামিয়ে দেন।
দুই) ধনচন্দ্রকে তুলে বেলোকে লেফট ব্যাকে নিয়ে আসেন ডাচ কোচ। স্টপারে অনুপম সরকারের সঙ্গে হাসানকে জুড়ে দেন। এরপরই বাঁ দিক থেকে বেলোর ক্রমাগত আক্রমণে চাপে পড়ে যায় সুভাষের দল।
ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পর দেখা যায় কোচ-সহকারী কোচ সহ সব ফুটবলারকে গ্যালারির দিকে ছুটে যেতে। গ্যালারি তখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে। কারণ এ দিনই জাপানের একটি কোম্পানির লোকেরা এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে। স্পনসর হিসাবে জাপানের ওই কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা অনেকদূরই এগিয়েছে নবাব-আলোদের। সবকিছু ঠিকঠাক চললে হয়তো খুব তাড়াতাড়িই আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে ইউনাইটেড স্পোর্টস।
ইউনাইটেড: ঈশান, দীপক, অনুপম, বেলো, ধনচন্দ্র (বিশ্বজিত), আসিফ (হাসান), শৌভিক, বলদীপ (জয়ন্ত), বিনীত, এরিক, র্যান্টি। |