ক্রিকেটের নন্দনকাননে ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ এবং তাঁর দলবলের মুখোমুখি হতে হবে সেই বুধবার। তার আগে ফের শক্তি সঞ্চয় করে নিজের অস্তিত্ব জিইয়ে রাখল ‘গেইল স্টর্ম’।
উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিন দিনের অনুশীলন ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রান না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ক্রিস গেইল রান পেতেই চওড়া হাসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ওটিস গিবসনের মুখে।
সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে এ দিন গেইল ৫৮ রান করলেন ৪৯ বলে। দশটি চার সহযোগে হাফসেঞ্চুরি করতে নিলেন মোটে ৩৬ বল। রান পেলেন মার্লন স্যামুয়েলসও (৪৭ বলে ৫৮ রান)। আর এতেই ইডেনে প্রথম টেস্টের আগে চনমনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির।
অমীমাংসিত ম্যাচ শেষে চন্দ্রপল, গেইল, ব্র্যাভোদের মতো দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা প্রত্যেকেই রান পাওয়ায় খুশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির। গিবসন বলছেন, “এই ইনিংস গেইলকে প্রথম টেস্টের আগে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। ভারতীয়রাও হাড়ে হাড়ে জানে, এক বার ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে গেইল কতটা ভয়ঙ্কর।” |
শহর দেখল অচেনা গেইলকে। শনিবার ম্যাচ শেষে
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
সিরিজ ঘোষণার দিন থেকেই তো দীর্ঘ থেকে ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে সচিনের ছায়া! আর ঠিক সে জন্য নিজেদের ইতিবাচক জায়গায় দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ। বলছেন, “সচিনের শেষ দুই টেস্টের জন্য গোটা ভারত উত্তেজনায় ফুটছে। এটাই ধোনির দলকে চাপে রাখবে।” সঙ্গে বিরাট, রোহিতদের জন্য ক্যারিবিয়ান ম্যানেজার রিচি রিচার্ডসনের চিমটি, “মানছি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে চমৎকার ফর্মে আছে ধোনির দল। টেস্টে কিন্তু অন্য খেলা। সেখানে ক্যারিবিয়ান বোলারদের বিরুদ্ধে ধৈর্যের পরীক্ষা ধোনিদের। এটাই চ্যালেঞ্জ।”
চন্দ্রপলদের এই সংকল্প ভারতীয় বোর্ডের কানে কেউ তুলে দিয়েছেন কি? শোনা যাচ্ছে, সচিন উৎসবে ধোনির দল যাতে ভেসে গিয়ে রিল্যাক্সড না হয়, তার জন্য রবিবার দুপুরেই বেঙ্গালুরু থেকে শহরে ঢুকে পড়ছে ভারতীয় দল।
ক্যারিবিয়ান থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক যতই শেষ ছয় টেস্ট ম্যাচ জয়ের কথা শুনিয়ে নিজেদের গরমাগরম রাখুক না কেন, সঙ্গে এটাও মাথায় রাখছে যে শেষ ছ’মাস তারা কোনও টেস্ট ম্যাচই খেলেনি। সঙ্গে কটারেল (৩-৬৫), বেস্ট (২-৭৭), স্যামির (১-৫৬) রঞ্জি স্তরের বোলিং! যার বিরুদ্ধে ১১২ রান করে গেলেন উত্তরপ্রদেশের পরবিন্দর সিংহও।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এর সঙ্গে জুড়ছে কেমার রোচ আর অফস্পিনার শিলিংফোর্ডের ম্যাচ ফিট না থাকা। গিবসন যদিও বলছেন, “প্রথম টেস্টের আগেই দু’জন সুস্থ হয়ে যাবে।” কিন্তু এই বোলিং তেন্ডুলকরদের কতটা চাপে ফেলবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
এত সব সত্ত্বেও ক্যারিবিয়ানদের হুঙ্কারে কমতি নেই। এ দিনই যেমন গিবসন বলে গেলেন, “আমরা আন্ডারডগ হতে পারি। কিন্তু একটা মরণ কামড় দেবই।”
নিজের শেষ দুই টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের সেই ‘মরণ কামড়’ সামলাতে পারবেন ক্রিকেটের ঈশ্বর? উত্তরটা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ কোচ বেঙ্কটেশ প্রসাদ। বলছেন, “এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং অ্যাটাক খুব আহামরি নয়। সচিন শেষ দুই টেস্টে একটা না একটা শতরান করবেই।”
গেইল-ঝড়, কমান্ডো স্যালুট, চন্দ্রপলের মাটি কামড়ে বড় ইনিংস গড়ার স্বপ্ন ছাপিয়ে এই দুটো লাইনই এখন সিরিজের ‘রিং-টোন’!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ৪৬৬ ও ১৯৯-৫ (গেইল ৫৮, স্যামুয়েলস ৫৮)
উত্তরপ্রদেশ: ৩৭২-৯ (পরবিন্দর ১১২, কটারেল ৩-৬৫) |