রোববার রাত্তিরে শহরে ঢুকে সচিন তেন্ডুলকর আবিষ্কার করবেন ভারতীয় ক্রিকেটের তরুণ ব্রিগেড যতই রাঙিয়ে দিক দীপাবলির সন্ধে, দেশটা এখনও তাঁর। অন্তত কলকাতা নামক শহরটা তো বটেই।
সাধারণত টেস্ট ম্যাচ শুরুর দু’দিন আগে সকালের বিমান ধরে শহরে পৌঁছন সচিন। দলের অনুশীলন থাকে দুপুরে। ফলে সকালের বিমানে এলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু ইডেনে এ বার তাঁর শেষ টেস্ট খেলতে নামার তিন দিন আগে শহরে পৌঁছবেন তিনি। মুম্বইয়ের বাড়িতে দীপাবলি পালনের শৌখিনতাও এখন দেখাচ্ছেন না সচিন।
এই শহরে পা দিয়েই অবশ্য তিনি আবিষ্কার করবেন, স্টেডিয়াম একই, সেই পরিচিত ইডেন। কিন্তু শহরটা আরও উষ্ণ হয়ে পড়েছে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে শনিবার রাত্তিরে তাঁর শুভেচ্ছা কামনায় দেওয়া পুজোর প্রসাদ আর বিশেষ প্রসাদী শাড়ির উপহারেই বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ দে। বিমানবন্দরে নেমেই কালীবাড়ির প্রসাদ আর দেবীর পরিধেয় শাড়ি উপহার পাওয়ার অভিজ্ঞতা সচিনের বাইশ বছরের ইডেন-জীবনে আর কখনও হয়নি।
এর পর সোমবার প্র্যাকটিসে ঢুকে তিনি দেখবেন, ড্রেসিংরুমের দরজায় লেগে রয়েছে তাঁর এক সময়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর অভিব্যক্তি। এমনিতে শহরের নানা হোর্ডিংয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা সচিন সম্পর্কে ক্রিকেটারদের মন্তব্য লাগিয়েছে। ক্লাবহাউসের বাইরে খোলা ময়দানের ধারে একটা হোর্ডিংয়ে থাকবে সচিন নিয়ে অর্জুন রণতুঙ্গার মন্তব্য, ‘সচিন ক্রিকেটের গয়না।’ কিন্তু ভারতীয় ড্রেসিংরুমের বাইরে যে মন্তব্যটা লাগছে, সেটা মোক্ষম।
‘আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। ভারতের হয়ে উনি চার নম্বরে ব্যাট করতে আসেন।’ বক্তার নাম ম্যাথু হেডেন। টিভি ভাষ্য দেওয়ার ফাঁকে হেডেনও দেখে যেতে পারবেন তাঁর বছর তিনেক আগের সেই মন্তব্য কেমন সযত্নে সচিনের বিদায়ী ম্যাচে ব্যবহার হচ্ছে।
সচিন-উৎসবের অঙ্গ হিসেবে তাঁর ছবি নিয়ে ট্যাবলো বার হবে শহরে। তাঁর এক্সক্লুসিভ সব ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হচ্ছে। তাঁর ছবি দেওয়া বিশেষ মুদ্রা নিয়ে টস করার ভাবনাও চলছে। যদিও শনিবারও জগমোহন ডালমিয়া পরিষ্কার বলতে পারলেন না, বিশেষ মুদ্রা দিয়ে টসের অনুমতিটা আইসিসি থেকে এসেছে কি না। সিএবি কর্তারা যে ভাবে উঠেপড়ে সচিনপক্ষকে সফল করতে নেমেছেন, তা জাঁকজমকে বিশাল কোনও সর্বজনীন পুজোকেও তাক লাগিয়ে দেবে। কারও কারও মনে হচ্ছে, এই জাঁকজমকে একটা বস্তু ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। ইডেনের উইকেট। যে কয়েকশো কোটি লোক ১৯৯তম টেস্টে সচিনের ব্যাটিং শৌর্য দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন, তাঁদের নিশ্চয়ই জানা নেই, ইডেনের উইকেটে এ বার একটা বলও খেলা হয়নি! পুজোয় নতুন জুতো কিনে যেমন কমবয়সীরা তখনই তা পরে ফেলে আর তার পর ফোসকা পড়ার আশঙ্কাটা থেকেই যায়, তেমনই কিছু সচিনের ভাগ্যে অপেক্ষা করে নেই তো? কোনও গড়িয়ে যাওয়া ডেলিভারি, বা অতর্কিতে লাফানো বল?
এখন অবশ্য কারও এ সবে মাথাব্যথা নেই। ম্যাচটা যত না ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তার চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে সিএবি বনাম এমসিএ (মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন)। পওয়ার না ডালমিয়া? কারা বেশি চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিতে পারেন?
কলকাতা থেকে পাওয়া উপহারেও অভিনবত্বের খোঁজ পাবেন সচিন। দই-রসগোল্লা বা দার্জিলিং চায়ের দিন গিয়েছে। অন্তত এ বারের জন্য। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শোনা যাচ্ছে নিজের আঁকা ছবি উপহার দেবেন সচিনকে। সিএবি দেবে ১৯৯টা গাছের পাতা সমন্বিত এক অভিনব উপহার। ক্রিকেট মাঠের মালিরা, যাঁদের সঙ্গে তাঁর এত দিনের পরিচয়, তাঁরা সমবেত ভাবে দেবেন ইডেনের ছোট রেপ্লিকা। অর্থাৎ, যাবতীয় সংবর্ধনা, বড় বড় উপহারের সঙ্গে যেন এক টুকরো ইডেনও পশ্চিম বান্দ্রার বাড়িতে নিয়ে যান সচিন।
এত কিছুর পরেও কলকাতা যদি কৃষ্ণপক্ষ-শুক্লপক্ষ, ভাইফোঁটা কখন পড়বে এ সব নিয়ে আলোচনা করে, সেটাই আশ্চর্যের। শহরে আজ, রোববার থেকে একটাই পক্ষসচিনপক্ষ!
|
ইডেনে টেস্টে সচিন |
• ১২ টেস্ট • ৮৬২ রান • সর্বোচ্চ ১৭৬ • গড় ৪৭.৮৮
• সেঞ্চুরি ২ • হাফ সেঞ্চুরি ৬ • উইকেট ৪ • সেরা বোলিং ৩-৩১ |
|