|
|
|
|
|
নৈশজীবন ছেঁটে ফেলে
রোহিতের এই সাফল্য দীপ দাশগুপ্ত |
|
বছর দু’য়েক আগের কথা। মুম্বই ড্রেসিংরুম থেকে গল্পটা শুনি। ২০১০ সালে রঞ্জি ট্রফির একটা ম্যাচ চলছে। ম্যাচের ফাঁকেই নাকি সচিন তেন্ডুলকর হঠাৎ ড্রেসিংরুমে ডেকে পাঠায় রোহিত শর্মাকে। জুনিয়রকে পইপই করে নাকি বোঝায় ক্রিকেটে ফোকাসটা রাখার জন্য ঠিক কী করা উচিত।
তার অনেক আগে থেকেই দেশের ক্রিকেট মহলে কথাটা চালু হয়ে গিয়েছে। রোহিত শর্মা প্রচণ্ড প্রতিভাবান। ২০০৭-’০৮ এ অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজের পারফরম্যান্সে রোহিত সেটা প্রমাণও করে দিয়েছিল। তারপর বহু দিন রোহিত সুনামটা আর রাখতে পারেনি। প্রচুর সুযোগ পেয়েছে আর ব্যর্থ হয়েছে। তার একটা কারণ যদি হয় ফোকাসটা নড়ে যাওয়া, দ্বিতীয়টা অবশ্যই পরিশ্রমের অভাব। |
|
অতীতটা ভুলে যেতে চাই। এখন ক্রিকেটটা আরও উপভোগ করছি। বৃত্তের মধ্যে সারাক্ষণ পাঁচ ফিল্ডার রাখার নিয়মটা আমাকে দ্রুত রান তুলতে সাহায্য করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে আমাকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে রাখা হয়েছে। তাই মনে হয় মিডল অর্ডারে খেলব। তবে জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। |
রোহিত শর্মা |
|
অসম্ভব প্রতিভাবানরা অনেক কিছুই সহজে আয়ত্ত করে ফেলতে পারে। বেশি চেষ্টা না করেই। যেটা দখলে আনতে অন্যদের হয়তো দিন রাত পড়ে থাকতে হবে। রোহিতের ক্ষেত্রে যেটা ঘটছিল তা হল, অসম্ভব প্রতিভাবান হওয়ায় যে খাটনিটার দরকার, সেটা আর ও করছিল না। জাতীয় দলের পাশাপাশি আবার আইপিএলে খেলার সুযোগ এসে যাওয়ায় অনিয়মটা আরও বাড়তে থাকে। সঙ্গে রাত জেগে পার্টিও ছিল। কম বয়েসে এ সব পরপর ঘটতে থাকলে ক্রিকেট থেকে ফোকাস অনেক সময়ই সরে যায়। মাঝে তো বেশ কিছুটা ওজনও বাড়িয়ে ফেলছিল। ফিটনেসের দিকে নজর না থাকলে যা হয় আর কী। তবু নির্বাচকরদের ধন্যবাদ দিতে হবে। |
|
বেঙ্গালুরুতে রোহিত, ধোনিদের ছবি পিটিআইয়ের। |
প্রচুর চাপ থাকা সত্ত্বেও রোহিতের উপর বিশ্বাসটা রাখার জন্য। ওর প্রতিভার দিকটা দেখেই সুযোগ দিয়ে গিয়েছে নির্বাচকরা। টিম ম্যানেজমেন্ট পাশে দাঁড়িয়েছে। এক বার নয়। বার বার। সচিনদের পরামর্শই হোক বা অন্য কিছু, নিজেকে গুছিয়ে আবার ক্রিকেটে ফোকাস ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটা রোহিত শুরু করে দু’তিন বছর আগে থেকে। ট্রেনিং, ফিটনেস নিয়ে খাটতে শুরু করে। আজ যে রোহিত শর্মাকে আমরা দেখছি সেই জায়গায় আসতে ওকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে লাইফস্টাইল বদলে ফেলাটা। কিছু দিন আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন ও বলছিল পার্টি, লেট নাইট সব ছেড়ে দিয়েছে। |
রোহিতের রংমশাল |
• এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয় (১৬)। ভাঙলেন শেন ওয়াটসনের (১৫) রেকর্ড। |
• দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান (৪৯১)। |
|
• সবচেয়ে কম বয়সে (২৬) ওয়ান ডে ডাবল সেঞ্চুরি। সচিন করেন ৩৬ বছর বয়সে, সহবাগ ৩৩ বছরে। |
• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। |
|
|
বীরেন্দ্র সহবাগ |
|
বিপক্ষ দল |
রান |
বাউন্ডারি |
ওভার বাউন্ডারি |
স্ট্রাইক রেট |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১১ |
২১৯ (১৪৯ বল) |
২৫ |
৭ |
১৪৬.৯৭ |
|
সচিন তেন্ডুলকর |
|
বিপক্ষ দল |
রান |
বাউন্ডারি |
ওভার বাউন্ডারি |
স্ট্রাইক রেট |
দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১০ |
২০০ ন.আ. (১৪৭ বল) |
২৫ |
৩ |
১৩৬.০৫ |
|
চার্লস কভেন্ট্রি |
|
বিপক্ষ দল |
রান |
বাউন্ডারি |
ওভার বাউন্ডারি |
স্ট্রাইক রেট |
বাংলাদেশ, ২০০৯ |
১৯৪ ন.আ. (১৫৬ বল) |
১৬ |
৭ |
১২৪.৩৫ |
|
সইদ আনোয়ার |
|
বিপক্ষ দল |
রান |
বাউন্ডারি |
ওভার বাউন্ডারি |
স্ট্রাইক রেট |
বনাম ভারত, ১৯৯৭ |
১৯৪ (১৪৬ বল) |
২২ |
৫ |
১৩২.৮৭ |
|
রোহিতের ফেরার ওটাই শুরু। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওপেন করার সুযোগটা আসার পর থেকে রোহিতের কেরিয়ার গ্রাফটাই বদলে গেল। ওপেনিংয়ে নামা ছাড়া রোহিতের সামনে আর কোনও উপায়ও ছিল না। কারণ কোহলি, রায়না, ধোনি, জাডেজা পুরো সেট হয়ে গিয়েছিল টিমের মিডল অর্ডারে।
রবিবারের চিন্নাস্বামী বুঝিয়ে দিল রোহিত শর্মা সুযোগটা নষ্ট করেনি। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে ইনিংসে ওর প্ল্যানিংটা। প্রথম একশো রানে তাড়াহুড়ো ছিল না। উল্টোদিকে উইকেট পড়তে থাকলেও ও কিন্তু ধৈর্য হারায়নি। পরের একশো রানটা যে ভাবে করল এক কথায় অবিশ্বাস্য। মনে হয় সমালোচকরা এখন আর বেশ কিছু দিন ওকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। রোহিত শর্মা কী করতে পারে না পারে, বেঙ্গালুরুর ডাবল সেঞ্চুরিটায় পরিষ্কার হয়ে গেল। |
বেঙ্গালুরুর স্কোর |
ভারত |
রোহিত ক হেনরিকেস বো ম্যাককে ২০৯
ধবন এলবিডব্লু ডোহার্টি ৬০
কোহলি রান আউট ০
রায়না এলবিডব্লু ডোহার্টি ২৮
যুবরাজ ক হ্যাডিন বো ফকনার ১২
ধোনি রান আউট ৬২
জাডেজা ন. আ. ০
অতিরিক্ত ১২
মোট (৫০ ওভারে) ৩৮৩-৬।
পতন: ১১২, ১১৩, ১৮৫, ২০৭, ৩৭৪, ৩৮৩।
বোলিং: ম্যাককে ১০-০-৮৯-১, নাইল ১০-০-৮০-০,
ফকনার ১০-০-৭৫-১,
ওয়াটসন ৫-০-২৬-০,
ডোহার্টি ১০-০-৭৪-২, ম্যাক্সওয়েল ৪-০-৩২-০, ফিঞ্চ ১-০-২-০।
|
অস্ট্রেলিয়া |
ফিঞ্চ এলবিডব্লু সামি ৫
হিউজ ক যুবরাজ বো অশ্বিন ২৩
হাডিন বো অশ্বিন ৪০
বেইলি রান আউট ৪
ভোজেস বো সামি ৪
ম্যাক্সওয়েল ক জাডেজা বো বিনয় ৬০
ফকনার ক ধবন বো সামি ১১৬
ওয়াটসন ক সামি বো জাডেজা ৪৯
নাইল ক কোহলি বো জাডেজা ৩
ম্যাককে বো জাডেজা ১৮
ডোহার্তি ন. আ. ০
অতিরিক্ত ৪
মোট (৪৫.১ ওভারে) ৩২৬।
পতন: ৭, ৬৪, ৭০, ৭৪, ১৩২, ১৩৮, ২০৫, ২১১, ৩২৬, ৩২৬।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৮-১-৪৭-০, সামি ৮.১-০-৫২-৩, বিনয় ৯-০-১০২-১,
অশ্বিন ১০-০-৫১-২, জাডেজা ১০-০-৭৩-৩। |
|
|
|
|
|
|
|