এর পরে বোলার
হতে চাইবে না কেউ
কালীপুজোর রাতে প্রচুর দেশবাসী যে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা দেখতে টিভি অন করেছিলেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি জানি না, ঠিক ক’জন চলতি সিরিজের আসল ব্যাপারটা ধরতে পারলেন।
ওয়ান ডে ক্রিকেট আর ওয়ান ডে ক্রিকেট নেই। এটা এখন বেসবল হয়ে যাচ্ছে! যত দিন যাবে, তত আরও আতঙ্কিত দেখাবে বোলারদের। শ’য়ে-শ’য়ে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি দেখবেন। যা রোজ দেখতে দেখতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে দর্শক। লোকে আস্তে আস্তে ভুলে যাবে যে, ওয়ান ডে ক্রিকেটেও একটা সময় সৌন্দর্য বলে বস্তু ছিল!
যার পিছনে আমি আইসিসি-র মাথামুণ্ডুহীন ফিল্ডিংয়ের নিয়মকানুন ছাড়া অন্য কিছুকে খলনায়ক বাছতে পারছি না।
ভাবতে পারেন, একটা টিম ৩৮৩ তুলেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না! ডাবল সেঞ্চুরি করলেও সেটা জলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে! শনিবার হাতে উইকেট থাকলে অস্ট্রেলিয়া জিতে যায়। ভারতের ৩৮৩ টপকে। রোহিতের ২০৯-এর উৎসবের সর্বনাশ করে। জয়পুরে অস্ট্রেলিয়ার ৩৫৯ তুলে জিতেছে ভারত। হাতে আট ওভার রেখে। সত্যি বলতে, আইসিসি-র ওয়ান ডে-র নতুন নিয়ম এই ফর্ম্যাটটার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল।

দু’শোর পথে অপ্রতিরোধ্য রোহিত। শনিবার
বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।
আমি তো বুঝে উঠতে পারছি না, ওয়ান ডে-তে এখন পুরো পঞ্চাশ ওভারই তিরিশ গজের সার্কেলের বাইরে সর্বাধিক চার ফিল্ডার রাখার নিয়ম আমদানির যুক্তিটা কী? এমনিতেই বাউন্সার এখন ওভারে একটার বেশি দেওয়া যায় না। নো বল হলে ব্যাটসম্যান পায় ফ্রি হিট। তার উপর এই অদ্ভুত নিয়ম। গোটা পঞ্চাশ ওভার ধরে তিরিশ গজের সার্কেলের বাইরে থাকবে সর্বাধিক চার জন ফিল্ডার। টি টোয়েন্টিতেও থাকে একটা বেশি। আরে, এ তো তুমি ম্যাচে নামার আগেই বোলারদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছ। বুঝিয়ে দিচ্ছ যে, তুমি নামছ বেধড়ক ঠ্যাঙানি খাওয়ার জন্য। ব্যাটসম্যান এক বার তুলে মারলেই সেটা হয়ে যাবে বাউন্ডারি। নিশ্চিন্তে ওভার বাউন্ডারিও মারবে। নিয়মের মারপ্যাঁচে বাউন্ডারি লাইনে তো ফিল্ডারই থাকছে না মোটামুটি, ক্যাচ ধরবে কে?
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও সে দিন দেখলাম বলছে যে, এখন একটা ওয়ান ডে ম্যাচ জেতার জন্য ঠিক কত রান তোলা দরকার, ও বুঝতে পারছে না। ও যুক্তি দিয়ে কথাটা বলেছে। যেটা আমি সমর্থন করি। একটা সময় ওয়ান ডে ক্রিকেটে আমরা ডিন জোন্সকে দেখেছি। মাইকেল বিভানকে দেখেছি। যাদের দুর্ধর্ষ ওয়ান ডে প্লেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হত। কারণ ওরা জানত যে, বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি সব সময় পাওয়া যাবে না। দরকার পড়বে শার্প সিঙ্গলস। বিভানকে দেখতাম কী অদ্ভুত কায়দায় ফিল্ডিংয়ে গ্যাপ বার করে সিঙ্গলস নিচ্ছে, কিংবা সিঙ্গলসকে দু’রানে বদলে দিচ্ছে। যে শিল্পটা চোখকে আরাম দিত। কিন্তু আইসিসি-র নতুন নিয়ম আমদানির পর সে সব শিল্প আর নেই। ব্যাটসম্যানেরও দায় নেই, দরকারই তো পড়ছে না। তোমাকে শুধু ভারী ব্যাট নিয়ে নামতে হবে। নেমে বোলারকে তুলে তুলে ফেলতে হবে। সিঙ্গলস বা টু’জ-এর দরকার নেই। সোজা কথায়, আইসিসি যা নিয়ম বানিয়েছে তাতে আপনার টিমে এখন একটা বিভান না থাকলেও অনায়াসে চলে যাবে। শিখর ধবন, শেন ওয়াটসনদের মতো কয়েক জন হার্ড হিটার থাকলেই আপনি ওয়ান ডে ক্রিকেটে রাজত্ব করতে পারবেন।
কত অদ্ভুত সব শটও মারতে দেখছি এখন। কালীপুজোর রাতেই দেখুন, রোহিত ষোলোটা ছয় মারল! মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হেলিকপ্টার শটে এমন একটা ছয় মারল যে, সেটা চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে উড়ে গেল। এক সময় কপিল দেবকে নানা রকম শট মারতে দেখেছি। দেখেছি, ম্যানুয়ালের বাইরে গিয়ে শট মেরে কপিল কী ভাবে রান পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ধোনি, রোহিত, বিরাট, ধবনরা যা সব খেলছে, তাতে কপিলকেও ওদের পাশে শিশু মনে হবে!
ডাবল সেঞ্চুরির তালিকায় সচিন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র সহবাগের পরেই এ দিন থেকে বসে গেল রোহিতের নাম।
বিধ্বংসী

রোহিত শর্মা বনাম অস্ট্রেলিয়া: ২০১৩ | রান- ২০৯ (১৫৮ বল)
বাউন্ডারি- ১২ | ওভার বাউন্ডারি- ১৬ | স্ট্রাইক রেট-১৩২.২৭
আজ পর্যন্ত ওয়ান ডে ক্রিকেটে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে। তিনটে রেকর্ডই ভারতীয়দের। সচিন তেন্ডুলকর। বীরেন্দ্র সহবাগ। এবং রোহিত শর্মা। একটা সময় ক্রিকেট থেকে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল রোহিত। ফর্মে ছিল না, জীবনযাপন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছিল। ওর প্রতিভা বরাবরই ছিল, কিন্তু ওর ভাগ্য ভাল যে, ধোনির মতো এক জন অধিনায়ক ও পেয়েছে। অন্তত একশোটা ম্যাচ ওকে টেনেছে ধোনি। সুযোগ দিয়েছে। আজও দেখলাম, ৯২ থেকে সেঞ্চুরি করতে সতেরো বল নিয়ে নিল রোহিত। কিন্তু ধোনিকে এক বারের জন্যও বিচলিত হতে দেখলাম না। তবু রোহিতের ডাবল সেঞ্চুরিকে আমি সহবাগ-সচিনের পরেই রাখব। একটা জিনিস বুঝতে হবে। সচিন বা সহবাগের ডাবল সেঞ্চুরির সময় সার্কেলের বাইরে চার জন নয়, পাঁচ জন থাকত। এখনকার মতো স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুলে ফেলে দেওয়া যেত না। যা আজ বিরাট করে দিচ্ছে। ফকনার করে দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আগে ম্যাচ থাকলে ভারতীয়রা ভাবতে বসত, লিলি-থমসন কত জোরে বল করবে। এখন আর সে সব কেউ ভাবছে না। উল্টে ফাস্ট বোলারকেই দেখছি চোখেমুখে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ঘুরছে।
আইসিসি-কে তাই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। এমন একটা নিয়ম চালু করার মানে নেই যা কি না বোলার বলে একটা প্রজাতিকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। কেউ তো আর এর পর বোলার হতেই চাইবে না। আইসিসি-র উচিত সার্কেলের বাইরে চার ফিল্ডারের নিয়ম এখনই তুলে দেওয়া। ওভার পিছু বাউন্সারের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।
নইলে?
নইলে, আইসিসিকে বিনীত অনুরোধ করব, ওয়ান ডে-তে পাওয়ার প্লে বলে যে ব্যাপারটা আছে, সেটা এ বার তুলে দিন। ওই পোশাকি নামটার আর কোনও দরকার নেই।
গোটা পঞ্চাশ ওভারই তো এখন পাওয়ার প্লে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.